Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পিছু হটল বিএবি

ব্যাংকারদের বেতন কমানোর সিদ্ধান্ত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ জুন, ২০২০, ১২:০০ এএম

দেশের বেসরকারি ব্যাংকে বেতন কমানোসহ খরচ কমাতে ১৩ দফা নির্দেশনা থেকে পিছু হটেছে বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়েছে ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)।

এর আগে গত রোববার (১৪ জুন) প্রত্যেক ব্যাংকের চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে ব্যাংক কর্মীদের দেড় বছরের জন্য ১৫ শতাংশ বেতন-ভাতা কমানোর পাশাপাশি খরচ কমানোর জন্য ১৩ দফা নির্দেশনা দিয়েছিল বিএবি।

এর মধ্যে বিজ্ঞাপন খরচ কমানোর কথাও রয়েছে। বিএবি’র এ সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়েছেন ব্যাংকাররা। তাদের মতে, এ সিদ্ধান্ত হলে ব্যাংকাররা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়বে। তাদের মনোবল ভেঙে পড়বে। তবে বিএবি বলছে, বেতন কমানোর কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আর এ ধরণের নির্দেশনা দেয়ার অধিকারও বিএবি’র নেই।

করোনাভাইরাসের কারণে আর্থিক মন্দার হাত থেকে রক্ষার নামে সম্প্রতি কর্মীদের বেতন-ভাতা ১০ শতাংশ কমিয়েছে দ্য সিটি ব্যাংক। পাশাপাশি কর্মীদের পদোন্নতি বন্ধ, ইনক্রিমেন্ট ও অন্যান্য ভাতাও কমানো হয়েছে। এবি ব্যাংক লিমিটেডও তাদের কর্মীদের বেতন ৫ থেকে ৬ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর ঘোষণা দিয়েছে বলে জানা গেছে।

এই দুই ব্যাংকের পথ ধরে ইতিমধ্যে হাঁটতে শুরু করেছে দেশের বেসরকারি খাতের আরো অনেক ব্যাংক। অন্য ব্যাংকগুলোও বেতনভাতা কাটছাঁটে উৎসাহী হয়ে উঠতে পারে, এমনিতেই এমন আশংকা করছিলেন ব্যাংক কর্মীরা। এমন পরিস্থিতিতে বিএবির চিঠিকে বেতন কমানোর ক্ষেত্রে উস্কানি হিসেবে দেখছেন তারা।

এ বিষয়ে বিএবি ও এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেছেন, আমরা বিভিন্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যানরা একসঙ্গে বসেছিলাম। একটি ইনফর্মাল আলোচনা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে কী করা যায় তার একটা সম্ভাব্য উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে কোনো ব্যাংকে এ চিঠি বা নির্দেশনা দেয়া হয়নি।
কারণ, ব্যাংক কিভাবে চলবে সেটা ব্যাংকের নিজস্ব ব্যবস্থাপনার ব্যাপার। তাদের বিনিয়োগ ও স্যালারির ধরণও ভিন্ন। এক্ষেত্রে বিএবি কোনো হস্তক্ষেপ করবে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেসরকারি সব ব্যাংকের উপর বিএবির নির্দেশনা চাপানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে এতে ব্যাংক কর্মকর্তাদের ক্ষুব্ধ হওয়ায় সে অবস্থা থেকে বিএবি পিছু হটেছে। মূলত, বিএবি এমন নির্দেশনা দিতে পারে কিনা সে বিষয়ে প্রশ্ন তোলার পর বিএবি এমন সিদ্ধান্ত থেকে বিরত রয়েছে। নির্দেশনা দেয়ার জন্য একটা চিঠিও তৈরি করেছিল বিএবি। তবে তাতে কোন মাস্টহেড বা সাক্ষর ছিল না। বিএবির ওই চিঠিতে বলা হয়, চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সব গ্রেডের যেসব কর্মকর্তা ও নির্বাহীর মাসিক গ্রস বেতন ৪০ হাজার টাকার বেশি তাদের সবার ১৫ শতাংশ কমাতে হবে। আগামী দেড় বছর পদোন্নতি, ইনক্রিমেন্ট ও ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যাবে না। ব্যাংকের চলমান নিয়োগসহ সব নিয়োগ বন্ধ রাখতে হবে। এখন থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রিন্ট ও অনলাইন পত্রিকা এবং টেলিভিশনে সব ধরনের বিজ্ঞাপন বন্ধ রাখতে হবে। নতুন শাখা, এজেন্ট ব্যাংকিং শাখা এবং সাব-ব্রাঞ্চ খোলা যাবে না।

সব ধরনের স্থায়ী সম্পদ কেনা থেকে বিরত থাকতে হবে। চিঠিতে আরও বলা হয়, সব বিদেশি ট্যুর বন্ধ রাখতে হবে। সব ধরনের সিএসআর, ডোনেশন, চ্যারিটি বন্ধ রাখতে হবে। সব গ্রাহক ‘গেট টুগেদার’ বন্ধ রাখতে হবে।
অফিসার ও এক্সিকিউটিভ ‘গেট টুগেদার’ ও ম্যানেজার কনফারেন্স বন্ধ থাকবে। প্রয়োজনে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে করতে হবে। বড় ধরনের ব্যয় যেমন আইটি রিলেটেড, সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার কেনা আপাতত সীমিত পর্যায়ে রাখা। অন্য সব ব্যয় সীমিত পর্যায়ে রাখতে হবে। কর্মী ছাঁটাই না করে ব্যাংক সচল রাখার জন্য এসব পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গত ডিসেম্বর ভিত্তিক তথ্য অনুযায়ী, দেশে কার্যরত ৫৯টি ব্যাংকে বর্তমানে জনবল রয়েছে এক লাখ ৭৮ হাজার ৪৩০ জন। এর মধ্যে বেসরকারি ব্যাংকে আছেন এক লাখ ৯ হাজার ১২৭ জন। বিদেশি ব্যাংকে তিন হাজার ৮৫৮ জন। আর সরকারি ব্যাংকে ৬৫ হাজার ৪৪৫ জন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ব্যাংকার

১৬ জুন, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ