Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নির্বাচনী চাপে ব্যাংকাররা

টানা ছুটিতে এটিএম ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ে শঙ্কা

হাসান সোহেল : | প্রকাশের সময় : ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

আর মাত্র এক সপ্তাহ পরেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক হিসাব ক্লোজিংয়ের জন্য আগামী বৃহস্পতিবার নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের তিন দিন আগে ব্যাংক ক্লোজিং এগিয়ে আসায় একদিকে ব্যাংকারদের কাজের চাপ যেমন বেড়েছে অন্যদিকে হাড়ভাঙা খাটুনির পর ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনের ডিউটি নিয়ে বাড়তি চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, নির্ধারিত সময়ের আগে ক্লোজিং হওয়ায় কাজের চাপ বেড়েছে কয়েকগুন। আবার ব্যাংক কর্মকর্তাদের নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করার জন্য দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেতে হবে। এ নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে এক ধরণের অস্থিরতা কাজ করছে।
এদিকে টানা চার দিন ব্যাংক বন্ধ থাকায় লম্বা এই ছুটিতে গ্রাহকদের লেনদেনের শেষ ভরসা এটিএম বুথ। কিন্তু অনেক সময় দীর্ঘ বন্ধে নেটওয়ার্ক বিড়ম্বনা, পর্যাপ্ত টাকা না থাকা এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্ট বন্ধ থাকায় নগদ অর্থের লেনদেন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে গ্রাহকদের মধ্যে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেছেন, গ্রাহক যাতে চাহিদা অনুযায়ী টাকা তুলতে পারেন, সে জন্য ব্যাংকের এটিএম বুথগুলোতে পর্যাপ্ত টাকা রাখার নির্দেশনা অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংক দিবে। কার্ড ভিত্তিক নিরবচ্ছিন্ন লেনদেনে আগামী রোববারই এ নির্দেশনা আসতে পারে। তারপরও ব্যাংকগুলো নিজেরাই তাদের আস্থা ধরে রাখতে এটিএম বুথগুলোতে পর্যাপ্ত টাকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন সিরাজুল ইসলাম।
নগদ বহনের ঝুঁকি ও শাখায় গিয়ে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে লেনদেনের ঝামেলা এড়াতে কার্ডভিত্তিক লেনদেন বাড়ছে। নিজ ব্যাংকের পাশাপাশি অন্য ব্যাংকের এটিএম বুথ ও পয়েন্ট অব সেলস বা পস ব্যবহার করে লেনদেন দ্রুত বাড়ছে। এটিএমে লেনদেন বেড়েছে ৮০ শতাংশ। আর পসে বেড়েছে চারগুণ। আন্তঃব্যাংক এটিএম, পয়েন্ট অব সেলস (পস), ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও মোবাইল ব্যাংকিং-এই চার ধরনের সেবা দিতে ২০১২ সালে ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ বাংলাদেশ বা এনপিএসবি চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
অন্যদিকে সহজে ও দ্রুততম সময়ে শহর কিংবা গ্রামে সর্বত্রই টাকা পাঠানোর সুবিধার কারণে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। ফলে এ সেবায় প্রতিদিনই বাড়ছে নতুন নতুন গ্রাহক। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লেনদেনের পরিমাণ। মোবাইল আর্থিক সেবা (এমএফএস) নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গ্রাহক সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৯ কোটি। এ সেবার মাধ্যমে গড়ে প্রতিদিন লেনদেন হচ্ছে হাজার কোটি টাকা। এই লেনদেন নিয়েও গ্রাহক বিপাকে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নির্বাচন ও ব্যাংক হলিডে মিলিয়ে বছরের শেষ চারদিন (২৮ থেকে ৩১ ডিসেম্বর) বন্ধ থাকবে সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের লেনদেন। এ কারণে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক হিসাব ক্লোজিংয়ের জন্য আগামী বৃহস্পতিবার (২৭ ডিসেম্বর) দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে, আগামী ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তাই যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে সব তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এ বছরের বার্ষিক হিসাব ক্লোজিং আগামী ২৭ ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হলো। পাশাপাশি ৩১ ডিসেম্বর যথারীতি ব্যাংক হলিডে অপরিবর্তিত থাকবে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৩০ ডিসেম্বর। এ জন্য টানা চারদিন ব্যাংক বন্ধ থাকবে। ছুটি শেষে বছরের প্রথম দিন আবারও লেনদেন শুরু হবে সব ব্যাংকের।
তবে টানা এ বন্ধেও স্বস্তি মিলছে না ব্যাংকারদের। ব্যাংক ক্লোজিং শেষে অনেকে পরিবার নিয়ে ছুটি কাটানোর এক বছরের পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে বসেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন, ব্যাংক ক্লোজিং শেষে পরিকল্পনা ছিল পরিবার নিয়ে থাইল্যান্ড বেড়াতে যাব। কিন্তু নির্বাচনের কারণে অনুমতি মিলছে না। সারাবছর কাজের চাপে পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এখন কি হবে বুঁঝতে পারছি না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ রকম অর্ধ শতাধিক ব্যাংক কর্মকর্তা নির্বাচনের ডিউটি থাকার কারণে বিমানের টিকেট বাতিল করতে বাধ্য হয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচনী চাপে ব্যাংকাররা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ