মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ব্রিটিশরা ভারতকে শাসন করছিল ২০০ বছর ধরে। আর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অফিসার হিসাবে সেই ব্রিটিশ উপনিবেশের গোড়া পত্তন করেছিলেন স্বৈরশাসক রবার্ট ক্লাইভ। এবার তাঁর অস্তিত্বে টান পড়েছে। খোদ ইংল্যান্ডের মাটিতেই বাংলা তথা ভারতের প্রথম ব্রিটিশ গভর্নরের মূর্তি উপড়ে ফেলার দাবি উঠেছে।
আমেরিকায় জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর শুরু হয়েছে 'ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার' আন্দোলন। তা ছড়িয়ে পড়েছে গোটা বিশ্বেই। শুধু কালো মানুষদেরই নয়, বিশ্বের সব বঞ্চিত সংখ্যালঘু মানুষই এই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্ম বোধ করছেন। সম্প্রতি আটলান্টিক পেরিয়ে সেই আন্দোলনের আঁচ এসে পৌঁছেছে ব্রিটেনেও। ব্রিস্টলে এতদিন সগর্বে দাঁড়িয়েছিল সপ্তদশ শতাব্দীর ক্রীতদাস ব্যবসায়ী এডওয়ার্ড কলস্টন-এর মূর্তি। সম্প্রতি সেই মূর্তি উপড়ে ফেলা হয়েছে।
এবার নজর পড়েছে, ভারতে ব্রিটিশ উপনিবেশের স্থপতি রবার্ট ক্লাইভের মূর্তির দিকে। লন্ডনের শহর থেকে ১৭০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে শ্রেউসবারি-র প্রধান চকে কুখ্যাত ক্লাইভের একটি মূর্তি রয়েছে। এই শহরেরই মেয়র এবং সাংসদ ছিলেন তিনি। ১৮৬০ সাল থেকে এই মূর্তিটি শহরের অংশ হিসেবেই ছিল। কিন্তু, এইবার আওয়াজ উঠেছে, আর নয়। জোসেফ স্টালিন, চেঙ্গিস খান-এর মতো ব্যক্তিত্বের মূর্তি স্থাপন নিয়ে আপত্তি থাকলে ক্লাইভের মূর্তি নিয়েও আপত্তি থাকা উচিত।
রবার্ট ক্লাইভের রাজনৈতিক আধিপত্যেই বাংলা তথা ভারতে চূড়ান্ত পর্যায়ে লুঠতরাজ চালিয়েছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। জোর করে নীল চাষ করিয়ে ১৭৭০ সালে বাংলায় ডেকে এনেছিল দুর্ভিক্ষ। যার জেরে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। এমন এক ইতিহাস যার সঙ্গে জড়িত, তাঁর মূর্তি থাকা উচিত নয়, এমনটাই বলছেন ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোনের সমর্থকরা।
স্যুজবেরি শহর থেকে জ্যাক থম্পসন নামে একজন ইংরেজ দাবি তুলেছেন ঔপনিবেশিক শাসন ও অত্যাচারকে আদৌ গর্বের বিষয় বলে মনে করেন না অধিকাংশ ইংরেজ। একজন গণহত্যাকারীর পূর্ণাবয়ব মূর্তি প্রদর্শন ব্রিটিশ জাতির কাছে গর্বের তো নয়ই, বরং লজ্জার বিষয়। সেইসঙ্গে কুখ্যাত ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের জন্যও ক্লাইভের শাসনকেই দায়ী করা হয়েছে।
ব্রিটিশ সরকারের প্রশাসনিক কেন্দ্র যে হোয়াইট হল, সেখানে ডাউনিং স্ট্রিটের পেছনে আর ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দফতরের সামনে সগৌরবে দাঁড়িয়ে রবার্ট ক্লাইভের আরেকটি মূর্তি। দাবি উঠেছে সেটিও ওখান থেকে সরানোর।
ব্রিটিশ সরকারের একেবারে প্রাণকেন্দ্রে কীভাবে ক্লাইভের মতো লোকের মূর্তি এখনো আছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, “ক্লাইভ এমন কোন ব্যক্তি নন, যাকে আমাদের এই যুগে সম্মান জানানো উচিৎ। যখন এডওয়ার্ড কোলস্টোনের (ব্রিস্টলের দাস ব্যবসায়ী) মূর্তি পর্যন্ত উপড়ে ফেলে দেয়া হয়েছে, তখন সময় এসেছে এই মূর্তিটিও যাদুঘরে পাঠিয়ে দেয়ার। ব্রিটেনের যে অন্ধকার অতীত ইতিহাস, ভবিষ্যত প্রজন্মকে তা জানাতে কাজে লাগবে এটি।”
‘বর্ণবাদী ক্লাইভের মূর্তি সরিয়ে ফেল’ দাবি জানিয়ে একটি আবেদন করেন আরেক ইংরেজ ডেভিড প্যাট্রন। তিনি বলছেন, শহর চত্বরের কেন্দ্রে স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে ক্লাইভের মূর্তি, কিন্তু ভারতীয় উপমহাদেশে ২০০ বছর ধরে অপশাসনের কেন্দ্রে ছিল এই ব্যক্তি, যার কারণে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটেছে, উপমহাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে নির্মম অত্যাচার চলেছে।”
রবার্ট ক্লাইভকে নিয়ে কেন এত বিতর্ক
বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানে স্কুল পর্যায়ের ইতিহাসের শিক্ষার্থীরা ভালো করেই জানেন, রবার্ট ক্লাইভ কে ছিলেন এবং ভারতীয় উপমহাদেশে ইংরেজ ঔপনিবেশিক শাসন চালু করার পেছনে তার কী ভূমিকা ছিল।
১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার বাহিনীকে পরাজিত করার মাধ্যমে বাংলা তথা ভারতীয় উপমহাদেশে ইংরেজ ঔপনিবেশিক শাসনের সূচনা হয়েছিল। এরপর কার্যত রবার্ট ক্লাইভ হয়ে উঠেছিলেন ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি। ১৭৫৮ সালে তাকে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সীর প্রথম গভর্নর নিযুক্ত করা হয়েছিল।
১৭৬০ সালে ৩৪ বছর বয়সে ক্লাইভ ফিরে আসেন ইংল্যান্ডে। ততদিনে তিনি সেই যুগের ইংল্যান্ডে অন্যতম বিত্তশালী ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন। তিনি শ্রুসবারি থেকে এমপি নির্বাচিত হন। পরে শহরের মেয়রও হন। দুই বছর পর তাকে ‘ব্যারন ক্লাইভ অব পলাশী’ উপাধি দেয়া হয়।
ভারতে ক্লাইভের অপশাসন, দুর্নীতি, লুন্ঠন নিয়ে পার্লামেন্টে সেসময় হৈচৈ হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে তদন্তও হয়েছিল। তদন্তে তার সমালোচনা করা হয়েছিল ভারতীয় নেতাদের কাছ থেকে বিরাট অংকের ঘুষ নেয়ার জন্য, যাদের তিনি ক্ষমতায় থাকতে সাহায্য করেছিলেন।
১৭৭৪ সালের ২২ নভেম্বর তাকে নিজের বাড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। ধারণা করা হয়, তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন। যদিও তার পরিবার একথা অস্বীকার করে। মাত্র ৪৯ বছর বয়সে তার মৃত্যু ঘটে। তাকে একটি চিহ্নবিহীন কবরে কবরস্থ করা হয়েছিল নিজের গ্রামে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।