বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
পৃথিবীতে আল্লাহতায়ালা অসংখ্য অগণিত সৃষ্টির মধ্য থেকে মানবজাতিকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। মানবজাতিকে সঠিক পথের দিশা দিতে যুগে যুগে নবী রাসূল প্রেরণ করেছেন।
সর্বশেষ নবী ও রাসূল হিসেবে আগমন করেছেন হযরত মোহাম্মাদ (সা.)। তিনি মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন মানুষের করণীয় বর্জনীয়। রাসূলের আদর্শ মেনে মানুষ হয়েছে শ্রেষ্ঠ থেকেও শ্রেষ্ঠতর। মানবীয় মেধা, মননশীলতা, শিক্ষা-দীক্ষা, তাহজিব-তমাদ্দুন এবং আল্লাহভীতির মাধ্যমে মানুষ নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছে। এটা একমাত্র সৃষ্টিকর্তার অশেষ দান। এ ব্যাপারে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি বনি আদমকে অধিক মর্যাদা দান করেছি। স্থলে ও সমুদ্রে (নৌপথে) তাদের চলাচলের বাহন প্রদান করেছি। তাদের উন্নত রিজিক দান করেছি। আর আমি এ মানবজাতিকে অন্যান্য সৃষ্টির উপরে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি।’ (সূরা বনি ইসরাঈল : আয়াত ৭১)। রাসূলে আকরাম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সে-ই শ্রেষ্ঠ যার চরিত্র অধিক উত্তম।’ (তিরমিযি, আবু দাউদ)। উত্তম চরিত্র ও উৎকর্ষ মানবিকতার পরিচয় ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা বরাবরই দিয়ে আসছেন। কারণ, ইসলাম মানবতার ধর্ম। মানবিকতায় ইসলাম অনন্য।
বহু বছর আগে আর্মেনিয়া থেকে এক ডাক্তার দম্পতি তুরস্কে বেড়াতে আসেন। তারা ছিলেন খ্রিষ্টান। একদিন পার্বত্য গ্রাম দেখতে গিয়ে তারা জঙ্গলে পথ হারিয়ে ফেলেন। উত্তরের শৈত্য প্রবাহের মধ্যে বিজন বনে সূর্য ডোবার পর তাদের হতাশা বেড়ে যায়। কিছুক্ষণ পর ডাক্তার সাহেবের স্ত্রী কান্না জুড়ে দেন। একসময় দু’জনেই জোরে চিৎকার শুরু করে দেন। আশা ছিল, কেউ তাদের আওয়াজ শুনে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসতে পারে। সত্যি সত্যিই একসময় এক কাঠুরিয়া তাদের আওয়াজ লক্ষ্য করে এদিকে এলো। ইশারায় কথাবার্তা হলে তারা তাদের অবস্থা বুঝাতে সক্ষম হলেন। কাঠুরিয়া তাদের পথ দেখিয়ে জঙ্গলের বাইরে গ্রামের রাস্তায় ফিরিয়ে আনলেও তারা শহরে ফিরে যাওয়ার কোনো উপায় বের করতে পারলেন না।
কাঠুরিয়া লোকটি তখন তাদেরকে নিজের বাড়ি নিয়ে গেল। তাদের আগুনের তাপে উষ্ণ হতে দিলো। রাতের খাবারের ব্যবস্থা করল এবং নিজেদের ঘরে তাদের থাকার ব্যবস্থা করল। পরদিন সকালে ডাক্তার দম্পতি বিদায়ের আগে বাড়ির চারপাশটা ঘুরে দেখতে লাগলেন। তারা লক্ষ্য করলেন এ কাঠুরিয়ার বাড়িতে এই একটি মাত্র ঘর। বাড়ির পেছনে কয়েকটি কাঠের গুঁড়ি আড়াআড়ি ভাবে রাখা, এতে কয়েকটি শিশু ঘুমিয়ে আছে। পাশে একটি তক্তপোশে দুই বুড়ো বুড়ী বসে চা খাচ্ছেন। কাঠুরিয়া ও তার স্ত্রী আর্মেনিয়ান খ্রিষ্টান মেহমানদের জন্য নাশতার ব্যবস্থা করতে ব্যস্ত। ডাক্তার সাহেব তখন কাঠুরিয়ার কাছে জানতে চাইলেন, আপনারা আপনাদের একটি মাত্র ঘরে আমাদের থাকতে দিয়ে বুড়ো বাবা মা ও শিশু সন্তানদের নিয়ে গতরাতে এই কঠিন শীতের সময়টি খোলা আকাশের নিচে কীভাবে কাটালেন। আর কেনইবা আমাদের মতো অজানা অচেনা মানুষকে এতো সম্মান ও যত্মে আশ্রয় দিলেন।
কাঠুরিয়া তখন জবাবে বললেন, এটি আমাদের নবীর শিক্ষা। আমাদের নবী করীম (সা.) বলেছেন, তোমরা যারাই আল্লাহ এবং পরকালে বিশ্বাস কর, সে তার মেহমানকে সম্মান, খাতির-যত্ম ও খেদমত করবে। (বোখারী ও মুসলিম)। এ পরিবারটির অকৃত্রিম ভালোবাসা ও গভীর আন্তরিকতা দেখে কিছুদিন পরই এ দম্পতি ইসলাম গ্রহণ করে এবং তুরস্কে স্থায়ী হয়ে যায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।