বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
নামাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ হলো সিজদা করা। বান্দা যখন সিজদা করে তখন সে আল্লাহপাকের সবচেয়ে নিকটবর্তী হয়ে যায়। মনে রাখতে হবে আমাদের এ নামাজ ও সিজদা আল্লাহ পাকের মেহেরবানি। যদি আল্লাহ পাকের দয়া ও অনুগ্রহ না হতো, তা হলে আমরা তার দরবারে সিজদা করতে পারতাম না। আল্লাহ পাকের তাওফীক ব্যতীত কোনো কিছুই করা সম্ভব নয়।
হাদীস শরীফে একটি ঘটনা বর্ণিত আছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার মসজিদে হারামে সূরা নাজম তেলাওয়াত করছিলেন। সূরা নাজমের শেষ আয়াত হলো সিজদার আয়াত। এ আয়াত তেলাওয়াত করলে সিজদা করতে হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র জবানে যখন এ আয়াত উচ্চারিত হলো তখন এতটাই প্রভাব বিস্তার করে যে, উপস্থিত সবাই সিজদায় লুটিয়ে পড়ে। রাসূল সিজদা করলেন, সাহাবায়ে কেরাম সিজদা করলেন এমনকি উপস্থিত মুশরিকরাও সিজদাবনত হতে বাধ্য হলো।
উমাইয়া ইবনে খালফ, ইসলাম ও মুসলমানের অন্যতম শত্রু, সেও উপস্থিত ছিল, উমাইয়া সিজদা করল না। সে সবাইকে সিজদাবনত হতে দেখে ভাবল, সকলেই যখন সিজদা করেছে আমি সিজদা না করলে তারা জিজ্ঞেস করলে কী বলব। এ ভাবনা থেকে সে সিজদার নিয়ত করল। কিন্তু সে সিজদা করতে পারল না। তার মাথা থেকে পা পর্যন্ত পুরো শরীর শক্ত হয়ে গেল। আল্লাহ পাক তাকে সিজদার তাওফীক দিলেন না। উমাইয়া জীবনে একবার সিজদাবনত হতে চেয়েছিল কিন্তু আল্লাহ তাওফীক দেয়নি। (সহীহ বুখারী : ৪৮৬২; ৪৮৬৩)।
তো আল্লাহ পাকের মেহেরবানি যে তিনি আমাদের দৈনিক তার দরবারে সিজদা করার তাওফীক দিচ্ছেন। মনে রাখতে হবে, আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না হলে আমাদের দ্বারা কোনো ভালো কাজই করা সম্ভব নয়। তাই সর্বদা আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহের প্রত্যাশী থাকা জরুরি। নিজের আমলের ওপর কোনোভাবেই ভরসা করা যাবে না।
রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, শুধু আমল তোমাদের মুক্তি দিতে পারবে না। সাহাবায়ে কেরাম আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসূল, আপনিও না!? রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না, আমিও না। হ্যাঁ, যদি আল্লাহ স্বীয় রহমতে আমাকে আচ্ছাদিত করে নেন। (সহীহ বুখারী : ৬৪৬৩)।
সিজদা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয়। তাই নামাজের প্রতি রাকাতেই আমরা আল্লাহর দরবারে দুই দুইটি করে সিজদা করে থাকি। আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি, প্রতিদিন কতবার আমরা সিজদা করি? শুধু ফরজ নামাজের হিসাব করলে দেখা যাবে আমরা দৈনিক ১৭ রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করি। ফজরে দুই রাকাত, জোহরে চার রাকাত, আসরে চার রাকাত, মাগরিবে তিন রাকাত ও এশায় চার রাকাত মোট ১৭ রাকাত। এর সঙ্গে তিন রাকাত বিতর যোগ করলে হবে বিশ রাকাত। তো ফরজ ও বিতর মিলিয়ে আমরা দৈনিক ২০ রাকাত নামাজ আদায় করি। সুন্নত ও নফল এর বাইরে। আরবি হিসাবে বছর পূর্ণ হয় ৩৫৪ দিনে। এ হিসাবে এক বছরে হয় ৭,০৮০ রাকাত। প্রতি রাকাতে আমরা দুটি সিজদা করি। এ হিসেবে দৈনিক আমরা ২০ রাকাত নামাজে ৪০টি সিজদা করে থাকি। এক বছরে হয় ১৪,১৬০টি সিজদা। তো শুধু ফরজ ও বিতর নামাজে এক বছরে আমরা ১৪,১৬০ বার সিজদায় অবনত হই আল্লাহর দরবারে।
এক একটি সিজদার মূল্য কত? ইমাম সাহেব সিজদারত অবস্থায় জামাতে কেউ উপস্থিত হলো, এ অবস্থায় করণীয় হলো, তাকবীরে তাহরীমা বলে সিজদায় চলে যাওয়া। এ সিজদা তার রাকাতে গণ্য হয় না। এ রাকাত তাকে আবার আদায় করতে হয়। নিয়ম এটাই, ইমামকে যে অবস্থায় পাবে সে অবস্থায়ই জামাতে শরীক হয়ে যাবে। সিজদায় হলে সিজদায়।
আব্দুল্লাহ ইবনুল মোবারক রহ. এ সিজদা সম্পর্কে বলেন, এ ব্যক্তি সিজদা থেকে মাথা ওঠানোর আগেই তার সকল গোনাহ মাফ করে দেয়া হয়। (জামে তিরমিযী : ৫৯১)।
এখন চিন্তা করে দেখি -যে ব্যক্তি এক বছর বেশি হায়াত পেল আর পুরো বছরজুড়ে আল্লাহর দরবারে হাজার হাজার সিজদা করল। এক সিজদার কারণে যদি পেছনের সব গোনাহ আল্লাহ তাআলা মাফ করে দেন, তা হলে এত হাজার সিজদাকারীর মর্যাদা কত ঊর্ধ্বে হবে!
এই হলো নামাজ। নামাজের একটি মাত্র রোকনের ফযীলত ও মর্যাদা এত বেশি! অতএব নামাজের প্রতি আমাদের যত্মবান হওয়া চাই। অত্যন্ত গুরুত্বসহ নামাজ আদায় করা উচিত। নামাজ এমন ইবাদত যা যত্ম ও গুরুত্বসহ আদায় করতে পারলে অন্যান্য নেক আমল করা সহজ হয় এবং সহজে গোনাহ থেকে বিরত থাকা যায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।