বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
পবিত্র কোরআন রক্ত ও বংশ সম্পর্কের মতো ঈমান ও ইসলামকেও একটি গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক সম্পর্ক সাব্যস্ত করেছে এবং এ সম্পর্কের দিক দিয়ে প্রত্যেক মুসলমানকে অন্য মুসলমানের ভাই বলে উল্লেখ করেছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘সমস্ত মুসলমান পরস্পর ভাই ভাই।’ (সূরা হুজরাত : আয়াত ১০)
অতঃপর এই আধ্যাত্মিক ও ঈমানী সম্পর্কের দরুন প্রত্যেক মুসলমানের ওপর অপর মুসলমান ভাইয়ের কিছু বিশেষ হক আরোপিত হয়। যেমন, তাদের পারস্পরিক সহমর্মিতা ও দয়া, তাদের পারস্পরিক আচারাচরণে বিনম্রতা ও বিনয়, পারস্পরিক কল্যাণকামিতা, সেবা মানসিকতা ও দয়ার্দ্রতা। যেমন এক জায়গায় ঈমানদারদের মহিমা বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘তারা পারস্পরিক সদয় মমতার আচরণ করে থাকে। (সূরা ফাতহ : আয়াত ২৯)।
অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘তারা ঈমানী ভাইদের সামনে বিনয়ী ও বিনম্র হয়ে থাকে।’ (সূরা মায়েদাহ : আয়াত ৫৪)। তাছাড়া যেসব বিষয় সম্পর্কের অবনতি ঘটায় এবং অন্তরে পঙ্কিলতা সৃষ্টি করতে পারে কোরআন সেগুলোকে মুসলমানদের জন্য কঠোরভাবে বারণ করেছে। যেমন, কারও সাথে হাসি-মস্করা করা, করও প্রতি উপহাস করা, তামাশা করা এবং কারও প্রতি দোষারোপ করা। কাউকে কোনো মন্দ নামে স্মরণ করা। কারও পেছনে নিন্দা করা। কারও দোষ খোঁজা কিংবা শুধু অনুমান বা ধারণার ভিত্তিতে তেমনিভাবে বিনা যাচাইয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দাঁড় করানো প্রভৃতি এমনি বিষয়, যে ব্যাপারে মানুষ তেমন সতর্কতা অবলম্বন করে না।
যেহেতু এসব বিষয়ে মানুষের অন্তরে কষ্ট ও দুঃখ সৃষ্টি হয় এবং সম্পর্কের অবনতি ঘটে, তাই কোরআন মাজীদে সুস্পষ্ট ভাষায় তাকিদের সাথে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যাতে কোনো মুসলমান তার অন্য কোনো মুসলমান ভাইয়ের সাথে কস্মিনকালেও এ ধরনের আচরণ না করে এবং এ ব্যাপারে যেন পুরোপুরি সতর্কতা অবলম্বন করে।
বলা হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ, না পুরুষদের জন্য জায়েজ যে, সে অপর পুরুষদের উপহাস করবে। এমনটি আশ্চর্য নয় যে, (যেসব লোকের প্রতি উপহাস করা হয়, আল্লাহর নিকট) তারা উপহাসকারীদের চাইতে উত্তম হয়ে থাকবে। আর এমনিভাবে কোনো মহিলা অপর মহিলাদের প্রতি উপহাস করবে না। এমনটি আশ্চর্য নয় যে, সেসব উপহাসকারিণী মহিলাদের চাইতে তারাই উত্তম হয়ে থাকবে। আর তোমরা পারস্পরিক একে অপরকে খোঁটা দেবে না। আর মন্দ নামেও ডাকবে না।
ঈমান আনার পর গোনাহর নাম লাগাই দোষণীয়। আর যারা (এই সতর্কতার পরও এসব আচরণ থেকে) বিরত হবে না, তারা অতি বড় ধরনের জালেম। হে ঈমানদারগণ, নানাবিধ ধারণা থেকে বেঁচে থাক। কারণ, কোনো কোনো ধারণা পুরোপুরি পাপ। আর কেউ কারও ছিদ্রান্বেষণ করবে না (তার দুর্বলতা ও ত্রæটি খুঁজে বেড়াবে না) এবং কেউ কারও গীবত (অগোচরে দোষচর্চা) করবে না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ এ কথা পছন্দ করবে যে, নিজের মৃত ভাইয়ের গোশত খাবে? অবশ্যই তোমরা একে ঘৃণা করো। অতএব, আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ অনেক ক্ষমাশীল, অত্যন্ত করুণাময়। (সূরা হুজরাত : আয়াত ১১-১২)।
মুসলমানদের পারস্পরিক অধিকার সম্পর্কে কোরআন মাজীদ একটি পথ-নির্দেশনা এ-ও দিয়েছে যে, প্রত্যেক মুসলমান তার ভালো দোয়ায় সমস্ত মুসলমান ভাইদেরও শরীক করবে। কোরআনের শেখানো অধিকাংশ দোয়ায় বহুবচন ব্যবহারের এটাও একটা তাৎপর্য। কোরআন মাজীদে এমন বহু দোয়া রয়েছে। যেমন ইরশাদ হচ্ছে, ‘হে আমার পরওয়াদেগার, আমাদেরকে দান কর দুনিয়াতে কল্যাণ ও এবং আখেরাতের কল্যাণ। আর আমাদেরকে রক্ষা কর আগুনের আযাব থেকে।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ২০১)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।