বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
আমরা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের আগে পরে যে সুন্নতে মুআক্কাদা আদায় করি এগুলোর ফজিলতও অনেক। হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি দৈনিক ১২ রাকাত সুন্নতে মুআক্কাদা নিয়মিত আদায় করবে তার জন্য আল্লাহ তাআলা জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন। ১২ রাকাত সুন্নতে মুআক্কাদা হলো জোহরের আগে চার রাকাত, পরে দু-রাকাত, মাগরিবের পরে দু-রাকাত, এশার পরে দু-রাকাত এবং ফজরের আগে দু-রাকাত। (জামে তিরমিযী : ৪১৪)।
এ ১২ রাকাত সুন্নতে মুআক্কাদা তো আমরা অবশ্যই আদায় করব, পাশাপাশি কিছু নফলেরও অভ্যাস করি। অন্য কোনো নফল পড়তে না পারলেও অন্তত ইশরাকের দু-রাকাত, জোহরের দু-রাকাত সুন্নতে মুআক্কাদার পর দু-রাকাত, মাগরিবের পর আওয়াবিন ও তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করার চেষ্টা করি। আমরা কত সময় অনর্থক কথাবার্তা ও গল্পগুজবে নষ্ট করে ফেলি। এর জন্য একদিন আমাদের আফসোস করতে হবে।
ইশরাক নামাজ : ইশরাক নামাজ সম্পর্কে হাদিস শরীফে এসেছে, যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করল। এরপর সূর্য উদয় হওয়া পর্যন্ত বসে বসে আল্লাহর যিকিরে মগ্ন থাকল। সূর্য উদয়ের পর দুই রাকাত নামাজ পড়ল। সে এক হজ ও ওমরার সওয়াব লাভ করল। (জামে তিরমিযী : ৫৯৩)।
আমরা জোহরের ফরজের আগে চার রাকাত ও পরে দুই রাকাত সুন্নতে মুআক্কাদা আদায় করি। হাদিস শরীফে দুই রাকাত সুন্নতে মুআক্কাদার পর আরও দুই রাকাত নামাজের কথা এসেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি নিয়মিত জোহরের নামাজের পূর্বে চার রাকাত ও পরে চার রাকাত আদায় করবে আল্লাহ তাআলা তার ওপর জাহান্নামের আগুন হারাম করে দেবেন। (জামে তিরমিযী : ৪২৯)।
জোহরের পূর্বের চার রাকাত বলতে চার রাকাত সুন্নতে মুআক্কাদা যা এক সালামে পড়া হয়। আর পরের চার রাকাত দুই সালামে পড়তে হয়। প্রথম দুই রাকাত সুন্নতে মুআক্কাদা, আর পরের দুই রাকাত সুন্নতে যায়েদা। এ দুই রাকাত সুন্নতে যায়েদা হলেও এর ফজিলত অনেক বেশি।
আওয়াবিন নামাজ : মাগরিবের পর আওয়াবিন নামাজ সম্পর্কে দুটি ভিন্ন ভিন্ন বর্ণনা রয়েছে। একটি হলো, মাগরিবের ফরজের পর সুন্নতসহ ছয় রাকাত নামাজ পড়লেই তা আওয়াবিন বলে গণ্য হবে। অপর বর্ণনায় সুন্নতের পর ছয় রাকাতের কথা বলা হয়েছে। আমরা দ্বিতীয় বর্ণনা অনুযায়ী আমল করতে না পারলেও প্রথম বর্ণনা অনুযায়ী তো সহজেই আমল করতে পারি। আওয়াবিন নামাজ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি মাগরিবের নামাজের পর ছয় রাকাত পড়বে তাকে ১২ বছর নফল ইবাদতের সওয়াব দান করা হবে। (জামে তিরমিযী : ৪৩৭)।
তাহাজ্জুদ নামাজ : তাহাজ্জুদ নামাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোনো বুযুর্গ বুযুর্গ হননি, কোনো আল্লাহওয়ালা আল্লাহওয়ালা হননি তাহাজ্জুদ ছাড়া। শেষরাতে উঠে তাহাজ্জুদ আদায় করা খুবই বরকতময় আমল। এ সময়টি খুবই বরকতময়। হাদিস শরীফে এসেছে, আল্লাহ তাআলা এ সময়ে প্রথম আসমানে অবতরণ করেন। তিনি বান্দাদের ডেকে বলতে থাকেন, ‘কে আছো ক্ষমাপ্রার্থী, আমি গোনাহ ক্ষমা করে দেবো। কে আছো, রিযিকের প্রত্যাশী, আমি রিযিক দান করব। কে আছো, বিপদগ্রস্ত, আমি বিপদ থেকে মুক্তি দেবো।’
এমন বরকতময় সময়ে ঘুমিয়ে না থেকে উঠে কিছু নফল নামাজ পড়ে দুআ করি। এটা যদি সম্ভব না হয় অন্তত ঘুমের আগে তাহাজ্জুদ পড়ে নিই। ফতোয়া শামীতে আছে, কেউ যদি এশার সুন্নতের পর বিতরের আগে তাহাজ্জুদের নিয়তে চার রাকাত নামাজ পড়ে আল্লাহ পাক তাকেও তাহাজ্জুদের সওয়াব দান করবেন।
ইশরাক দুই রাকাত, জোহরের সুন্নতের পর দুই রাকাত, মাগরিবের সুন্নতের পর চার রাকাত ও তাহাজ্জুদের চার রাকাত মোট ১২ রাকাত নফল নামাজ। অন্তত এ ১২ রাকাত নফল নিয়মিত আদায় করার চেষ্টা করি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।