বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
যেসব ভাগ্যবান বান্দারা সর্বদিক থেকে বিমুখ হয়ে, সারা পৃথিবীর যাবতীয় পথ ও পন্থা পরিহার করে আল্লাহ তায়ালার আনুগত্যকেই নিজেদের জীবনপদ্ধতি সাব্যস্ত করে নিয়েছে, সূরা মু’মিনে তাদের সম্পর্কেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, আল্লাহ তায়ালার সার্বক্ষণিক নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতাগণ আল্লাহ তায়ালার হামদ ও তাসবীহ’র সাথে সাথে তাদের পূর্বপুরুষ এবং পরিবার-পরিজনের জন্যও সর্বক্ষণ কল্যাণ প্রার্থনা করতে থাকে। কোরআন মাজীদে তাদের সেসব দোয়ার শব্দাবলীও উদ্ধৃত করা হয়েছে।
‘হে পরওয়ারদেগার, তোমার জ্ঞান এবং তোমার রহমত সর্ববিষয়ে পরিব্যাপ্ত। সুতরাং তোমার সেসব বান্দাকে ক্ষমা করে দাও যারা তোমার প্রতি নিবিষ্ট হয়েছে, তোমার হেদায়ত অনুসরণ করেছে এবং তোমার প্রদর্শিত পথে চলেছে এবং দোজখের আজাব থেকে তাদেরকে অব্যাহতি দান করো। হে পরওয়ারদেগার, তাদেরকে সে অবিনশ্বর জান্নাতসমূহে পৌঁছে দাও, যার ওয়াদা তুমি তাদের সাথে করেছ।
আর তাদের পিতামাতা, তাদের পরিবার-পরিজন ও তাদের সন্তানাদির মধ্যে যারা ভালো তাদেরকেও তাদের সাথে জান্নাতে রেখো। নিঃসন্দেহে তুমি মহা বিজ্ঞানময়। তাদেরকে কষ্ট ও অকল্যাণ থেকে রক্ষা করো। আর কেয়ামতের দিন তুমি যাদেরকে কষ্ট থেকে রক্ষা করবে তাদের প্রতিই তোমার রহমত হলো। আর এটিই হলো তাদের জন্য মহা সাফল্য।’ (সূরা মু’মিন : আয়াত ৭-৯)।
বলতে গেলে আল্লাহ তায়ালার এসব উচ্চ মর্যাদাশীল ফেরেশতাগণ যেন আল্লাহ তায়ালার বন্দেগী ও আনুগত্যপরায়ণ জীবন যাপনকারী বান্দাদের জন্য তার দরবারে কল্যাণ প্রার্থনায় নির্দেশিত। বলাই বাহুল্য, যে আল্লাহ তাদেরকে এ দোয়া প্রার্থনার নির্দেশ দিয়ে থাকবে এবং তাদের হামদ ও তাসবীহের সাথে নেককার বান্দাদের কল্যাণ প্রার্থনাকে তাদের নিয়মিত ওযীফা সাব্যস্ত করে দিয়ে থাকবেন, তিনি তাদের সে দোয়াকে কেন গ্রহণ করবেন না।
বরং কোরআন মাজীদে এ দোয়ার কথা এজন্যই উল্লেখ করা হয়েছে, যাতে মানুষ বুঝতে পারে, যেসব বান্দা আল্লাহ তায়ালার অনুগত জীবন যাপন করে এবং এ জগৎ-সংসারে তার হেদায়তের অনুবর্তী হয়ে চলে, আল্লাহ তায়ালার নিকট তাদের সম্মান ও মর্যাদা হলো এই যে, তিনি তার নিজের নিকটবর্তী ফেরেশতাদেরকে তাদের জন্য দোয়া প্রার্থী বানিয়ে দিয়েছেন। তাদের জন্য কল্যাণ প্রার্থনাকে নিজের হামদ ও সানা তথা প্রশংসা-কীর্তনেরই মতো নিয়মিত ওজীফা বা জপমালা সাব্যস্ত করা হয়েছে।
পক্ষান্তরে যেসব হতাভাগ্য আল্লাহ তায়ালার হেদায়ত এবং তার নাজিলকৃত শরীয়তের স্থলে নিজেদের রৈপিক কামনা-বাসনার আনুগত্য করে, তাদের বঞ্চনা ও ধ্বংসের কথা কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে এভাবে, ‘আর তাদের চাইতে ভ্রষ্ট-বিভ্রান্ত আর কে হতে পারে, যারা আল্লাহ তায়ালার হেদায়ত থেকে সরে গিয়ে নিজেদের রৈপিক কামনা-বাসনার আনুগত্য করে? আল্লাহ তায়ালা এ ধরনের জালেমকে হেদায়ত দান করেন না।’ (সূরা কাসাস : আয়াত ৫০)।
সূরা ফুরকানে ইরশাদ হয়েছে, ‘সেসব হতভাগ্যের প্রতি একটু লক্ষ্য করে দেখ, যারা (আল্লাহ তায়ালার বন্দেগি এবং তার হেদায়েতের আনুগত্য পরিহার করে) নিজেদের রৈপিক কামনা-বাসনার উপাসনায় লিপ্ত হয়ে গেছে। তোমরা কি তাদের সামলানোর দায়দায়িত্ব গ্রহণ করতে পার? (কক্ষণও ওরা সংশোধিত হবে না)। তোমাদের কি ধারণা, তাদের অনেকে অনেক কিছু শোনে ও বোঝে? না তা নয়, ওরা তো একান্তই বোধহীন পশুর মতো; বরং ওরা তাদের চাইতেও অধিক পথভ্রষ্ট। (সূরা ফুরকান : আয়াত ৪৩-৪৪)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।