Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পার্বতীপুরে রেলের লীজকৃত পুকুর ভরাট করছে অবৈধ দখলদাররা

পার্বতীপুর (দিনাজপুর) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১ জুন, ২০২০, ১:০১ পিএম

বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের বৃহত্তম রেলজংশন পর্বতীপুরে রেলের একটি পুকুর অবৈধ বসবাসকারীদের কারণে এখন পুরোপুরি ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। 

পুকুরের পশ্চিশ দিকে বসবাসকারীরা আশির দশকে দিনাজপুরমুখি রেললাইনের পাশের এক বস্তিতে থাকতো। এই বস্তিটি উঠিয়ে সেখানে একটি হাই স্কুল ও একটি কেজি স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়। অন্যদিকে উচ্ছেদ করা বস্তি বাসীদের ধুপিপাড়া রেলের পুকুরের পশ্চিম পাশের স্বাধীনতার আগের সুইপার বস্তিতে স্থানান্তর করা হয়। পরবর্তীতে সুইপার বস্তিটির নামকরণ করা হয় ফকিরটোলা।
অভিযোগ রয়েছে, নতুন বস্তি গড়ে তোলা হলেও কোনরকম নাগরিক সুবিধা পায়নি এখানকার মানুষেরা। ময়লা আবর্জনা ফেলার জন্য অন্তঃত ৪/৫টি ডাষ্টবিনের প্রয়োজন হলেও একটি ডাষ্টবিনও তৈরী করা হয়নি। যেকারণে বস্তির প্রায় সব পরিবার প্রতিদিন ঘরদোর ঝাড়– দিয়ে সমস্ত ময়লা পাশের পুকুরে ফেলে। আবার প্রত্যেক পরিবারের খোলা লেট্রিন থেকে পায়খানা, ময়লা পানি সরাসরি পকুরে ফেলায় পানি বিষাক্ত হয়ে মছের মড়ক দেখা দেয় প্রায় প্রতি মাসে।
বস্তির কিছু অসৎ পরিবার, ব্যক্তি পুকুরের লীজ গ্রহীতার স্বার্থের ব্যাপারে বরাবর উদাসীন থাকে। তারা বস্তায় বস্তায় আবর্জনা, ময়লা এনে পুকুরের ধারে ফেলে। পরে শুকনো মৌসুমে বালি, মাটি এনে ভরাট করে নিজেদের ঘরদোরের সীমানা বাড়িয়ে আসছে।
ধুপি পাড়ায় অবস্থিত রেলের এই পুকুরটির তফসীল হলো- জেলা দিনাজপুর, থানা পার্বতীপুর, মৌজা পার্বতীপুর, জেএল নং ৪০, দাগ নং ৫২৪৪, ৫২৪৫ ও ৫৬৩৭ (অংশ), আয়তন ০.৯০ একর (৯০ শতক), পুকুরটির চৌহদ্দি হচ্ছে, উত্তরে নিউ কলোনী রোড, দক্ষিনে ধুপিপড়া রোড, পূর্বে পুকুরের লীজ গ্রহীতার বসতবাড়ি ও রাস্তা এবং পশ্চিমে মসজিদ ও রাস্তা।
ইতিপূর্বে ওই পুকুরটির লীজ গ্রহীতা আবদুল কাদির রেলের পাকশি বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তাকে গত ২০১৭ সালের ৭ আগষ্ট এবং ২০১৯ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী ৮ নং কাচারী, পার্বতীপুরের কানুনগোকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এদিকে, পুকুর ভরাট করে পাকা ঘর ও ল্যাট্রিন নির্মাণে বাধা দেওয়ায় লীজ গ্রহীতার পুত্র রাইসুল ইসলামকে(২৭) ২০১৭ সালের ২২ জুলাই রাত আনুমানিক সাড়ে ১২ টার দিকে নতুন বাজারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে মটরসাইকেল যোগে বাড়ির গেটে এসে পৌঁছুলে চাকু ও ছুরি দিয়ে উপুর্যপরি শরীরের ৯টি স্থানে আঘাত করে। মৃত্যু নিশ্চিত জেনে সন্ত্রাসী দুই ভাই চলে যাওয়ার সময় রাইসুলের মা বাবাসহ বহু লোক তাদের দেখতে পায়। তবে তাদের হাতে ধারালো অস্ত্র থাকায় কেউ ওদের আটক করতে সক্ষম হয়নি। এ ঘটনায় রাইসুলকে আশংকাজনক অবস্থায় প্রথমে পার্বতীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে রাত আড়াইটায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। ২০১৭ সালের ১ আগষ্ট এ ঘটনায় পার্বতীপুর রেল থানায় একটি মামলা দায়র করা হয়। মামলাটি এখনও চলমান আছে।
এব্যাপারে জানতে চাইলে রেলের পার্বতীপুর কাচারির কানুনগো মোঃ জিয়াউল হক জিয়া বলেন, আমি সবকিছু জানি। যারা রেল ভূমিতে অবৈধভাবে বসবাস করছে তারাই লীজ দেওয়া পুকুর অবৈধভাবে ভরাট করে বাড়িঘর তৈরী করছে, বাড়ির সীমানা বৃদ্ধি করে নিচ্ছে।
এব্যাপারে রেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ এমদাদুল হক রেলের উর্ধতন কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দায়েরের পরামর্শ দেন।
পশ্চিম জোনের প্রধান ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা রেজাউল করিমের সাথে মুঠোফোনে এ প্রতিনিধির কথা হয়েছে গত শনিবার। তিনি মনোযোগ দিয়ে সব শুনে লীজ গ্রহীতাকে তার দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়েরের পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ