Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ত্রিশঙ্কুতে মোদি সরকার

ব্যর্থ পররাষ্ট্রনীতি, ভঙ্গুর অর্থনীতি ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়

ইশতিয়াক মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ২৮ মে, ২০২০, ৯:২১ পিএম

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তলানিতে, তার মধ্যেই ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে লন্ডভন্ড পশ্চিমবঙ্গ, এর সাথে যুক্ত হয়েছে ভয়ঙ্কর পঙ্গপালের আক্রমণ। প্রাকৃতিক এসব সমস্যার পাশাপাশি ভারতের মোদি সরকারকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে তিন প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে সীমান্ত সঙ্ঘাত। কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের সাথে চলমান বৈরিতার মধ্যেই ব্যর্থ পররাষ্ট্রনীতির কারণে লাদাখ সীমান্তে চীন ও কালাপানি নিয়ে নেপালের সাথে নতুন করে সঙ্ঘাত সৃষ্টি হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে দেশের ভিতরে ও বাইরে সমস্যা যেন একের পর এক জেঁকে বসেছে ভারতের ওপর।
একদিকে করোনা, অন্যদিকে আম্পানের তান্ডব কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই পঙ্গপালের হানা। চরম হুমকিতে ভারতের অর্থনীতি। এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৫১ হাজারেরও বেশি মানুষ। মারা গেছেন প্রায় ৪ হাজার ৩৩৪ জন। লকডাউনে থাকলেও দিনদিন আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে ভারতে। মহামারির কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ থাকায় দেশের অর্থনীতি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তারমধ্যে কয়েকদিন আগে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে পূর্ব ভারতের বেশকিছু অঞ্চল। পাশাপাশি নতুন সমস্যা হিসাবে দেখা দিয়েছে ফসল বিনষ্টকারী পোকা পঙ্গপাল। ইতোমধ্যে ভারতে ঝাঁকে ঝাঁকে ঢুকে পড়েছে এই পোকা। রাজস্থানসহ দেশটির বিভিন্ন স্থানে হানা দিয়েছে ফসল বিনষ্টকারী এ পোকা। শতাধিক শ্রমিক যুদ্ধ করছে পঙ্গপালের সঙ্গে। এই পোকা ধ্বংসে ড্রোনের সাহায্য নিচ্ছে ভারত।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে ভারতজুড়ে লকডাউন চলার মধ্যেই দেশটির মধ্য ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যপ্রদেশ, উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান, পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় পঙ্গপালের আক্রমণ শুরু হয়েছে। ঝাঁকে ঝাঁকে পঙ্গপাল এই রাজ্যগুলোর বহু গ্রাম ও শহরে ঢুকে পড়েছে, হানা দিয়েছে ফসলের ক্ষেতে। এতে দেশজুড়ে ভাইরাস আতঙ্কের মধ্যে পঙ্গপাল নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতির সঙ্গে দাবদাহ যুক্ত হওয়ায় পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে, লাদাখে চীন-ভারত নিয়ন্ত্রণরেখার (এলএসি) দুই পারেই সৈন্য ও অস্ত্র সমাবেশ বেড়েছে। এমন পরিস্থিতি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তার দেশের সেনাবাহিনীকে যুদ্ধ প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে সেসময় লাদাখ সীমান্ত পরিস্থিতির কোন উল্লেখ করেননি শি জিনপিং। এদিকে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং দেশটির সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে লাদাখ সীমান্ত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছেন। ভারত ও চীনের সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রকাশিত খবর থেকে এসব এসব তথ্য জানা গেছে। ভারতের সংবাদমাধ্যগুলোর খবরে জানা গেছে, চীনের তৎপরতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সীমান্তে সেনা বাড়িয়েছে ভারতও। চীন যতদিন সৈন্য ও যুদ্ধাস্ত্র বাড়াবে ততদিন ভারতও শক্তিবৃদ্ধি করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে ক্ষুদ্র রাষ্ট্র নেপালও সীমান্ত নিয়ে ভারতকে ছেড়ে কথা বলছে না। কালাপানি ও লিপুলেখ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই দুদেশের মধ্যে চাপা উত্তেজনা ছিল। এর মধ্যেই প্রয়োজনে যুদ্ধ হবে বলে ভারতকে হুঁশিয়ার করল নেপাল। সম্প্রতি ‘দ্য রাইজিং নেপাল’ পত্রিকাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে নেপালের উপ-মুখ্যমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ঈশ্বর পোখরেল বলেন, ‘তৃতীয় কোনও শক্তির প্ররোচনায় আমরা কালাপানি সীমান্তে বিবাদ করছি বলে যে অভিযোগ করেছেন ভারতের সেনাপ্রধান তা নিন্দনীয়। প্রয়োজনে নেপালি ফৌজ যুদ্ধ করবে।’
আবার গত রোববার পাকিস্তান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া কাশ্মীর নিয়ে ভারতকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন যে, ‘অধিকৃত কাশ্মীরে ভারত কোন আগ্রাসন চালানোর চেষ্টা করলে তার জবাব পুরো সামরিক শক্তি দিয়ে দেয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘কাশ্মীর একটি বিতর্কিত অঞ্চল এবং আগ্রাসনের সাথে সম্পর্কিত যে কোনও রাজনৈতিক ও সামরিক চিন্তাধারাসহ বিতর্কিত মর্যাদাকে চ্যালেঞ্জ করার যে কোনও প্রয়াস সম্পূর্ণরূপে জাতীয় সংকল্প ও সামরিক শক্তির সাথে সাড়া দেয়া হবে।’
বর্তমানে ভারতকে তিন প্রতিবেশী দেশের সীমান্তেই শক্তি বৃদ্ধি করতে হচ্ছে। এর মধ্যে লাদাখ সীমান্তে রাস্তা ও নতুন বিমান ঘাঁটি নির্মাণ করছে ভারত। এর ফলে সামরিক খাতে তাদের ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। অথচ ক্রিসিলের সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, ২০২১ অর্থবর্ষে ভারতের অর্থনীতি ৫ শতাংশে হারে সঙ্কুচিত হবে। সেখানে প্রথমে জিডিপি বৃদ্ধি ৩.৫ শতাংশ হারে দেখানো হলেও পরে তা কমিয়ে ১.৮ শতাংশ হারে হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন সাপ্লাই চেন পুরোপুরি উন্মুক্ত না করলে এবং অর্থনৈতিক ‘অ্যাক্টিভিটি’ না বাড়ালে লকডাউন ভারতীয় অর্থনীতিকে আরও নেতিবাচক পথে নিয়ে যাবে এবং যার অত্যন্ত খারাপ প্রভাব পড়বে জিডিপিতে। সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে দীর্ঘদিন লেগে যেতে পারে। সূত্র : বিবিসি, আনাদলু এজেন্সি, রয়টার্স।



 

Show all comments
  • কািসকতারততহ ২৯ মে, ২০২০, ৫:৫৩ এএম says : 0
    জালিমের পতন হবেই।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনা

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ