Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম মঞ্জুর আর নেই

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৬ মে, ২০২০, ১২:৫০ পিএম

দক্ষিণাঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সাবেক মন্ত্রী ও গন পরিষদ সদস্য নুরুল ইসলাম মঞ্জুর আর নেই। লাইফ সাপোর্টে থাকাবস্থায় গতরাত ২টায় ঢাকার এ্যপলো হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না এলাইহে রাজেউন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল প্রায় ৮৫ বছর। তিনি বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। তিনি স্ত্রী, ৪ ছেলে ও তিন মেয়ে সহ অসংখ্য আত্মীয়Ñস্বজন ও গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। আজ বাদ আসর গুলশান সোসাইটি জামে মসজিদে নামাজে জানাজা শেষে বনানী গোরস্থানে মরহুমের দফন সম্পন্ন হবে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।
বরিশাল বারের প্রবীন সদস্য নুরুল ইসলাম মঞ্জুর ১৯৭০ সালে বরিশাল সদর আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে গনপরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকবাহিনী ঢাকায় বর্বরোচিত হামলা চালানোর পরে তিনি প্রথম বরিশালে স্বাধিন বাংলা সরকার গঠন করে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করা সহ প্রশিক্ষন শুরু করেন। তারই নেতেৃত্বে মেজর জলিল মুক্তিযুদ্ধে যোগদেন ও পরে ৯ নম্বর সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার হন। নুরুল ইসলাম মঞ্জুরের নেতৃত্বে বরিশাল পুলিশ লাইন্স-এর অস্ত্রাগার থেকে অস্ত্র বের করে মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে বিতরন ও প্রশিক্ষন শুরু করা হয়।
এমনকি পাকিবাহিনীর প্রতিরোধে বরিশাল বন্দরের অদুরে দুটি নৌযান নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাগন অবস্থান নেন। ’৭১-এর ১০ এপ্রিল পাক নৌ বাহিনী ও বিমান বাহিনী যথন বরিশাল দখলে অগ্রসর হয়, তখন বরিশালের অদুরে তালতলী এলাকায় ঐ নৌযান দুটি থেকে মু্িক্তযোদ্ধাগন প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।
কিন্তু পাক নৌবাহিনীর বাহিনীর গানবোট ও বিমান থেকে অবিরাম গোলাবর্ষনে মুক্তিযোদ্ধাগন টিকতে পারেনি। অনেক মুক্তিযোদ্ধা সেখানে শহিদ হন। এসময় নুরুল ইসলাম মঞ্জুর ও মেজর জলিল মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে দুটি নৌযান নিয়ে সুন্দরবন হয়ে পশ্চিমবঙ্গের হাসনাবাদে ঘাটি গাড়েন। সেখান থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করা সহ প্রশিক্ষন দিয়ে যুদ্ধ শুরু করেন। তারই নেতত্বে ’৭১-এর ডিসেম্বরের প্রথমভাগ থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৯নম্বর সেক্টরের বিভিন্ন জেলা হানাদার মূক্ত হতে শুরু করে। বরিশাল পাক বাহিনী মূক্ত হয় ’৭১-এর ৮ ডিসেম্বর।
দেশ স্বাধিনের পরে বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রী সভায় নুরুল ইসলাম মঞ্জুর যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। এসময় তিনি বরিশালÑফরিদপুর রেল লানি নির্মানকাজ শুরু সহ বরিশালে বিআরটিসি’র ডিপো স্থাপন, বরিশালে সড়ক সার্কেল স্থাপন এবং বরিশালÑফরিদপুর মহাসড়কে ফেরি সার্ভিস প্রবর্তনের মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের সাথে রাজধানীর সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড শুরু করেন। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনেও তিনি বরিশাল সদর আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন।
’৭৫-এর ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার কিছুদিন আগে তিনি মন্ত্রী সভা থেকে ইস্তফা দেন। খন্দকার মোস্তাক মন্ত্রী সভায় নুরুল ইসলাম মঞ্জুর পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে যোগাযোগ মন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। মোস্তাক সরকারের পতনের পরে তিনি দীর্ঘদিন রাজনীতি থেকে দুরে ছিলেন। পরবর্তিতে তাকে জেল হত্যা মামলায় অন্যতম আসামী করে গ্রেফÍার ও চার্জশীট প্রদান করা হয়। কিন্তু সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে তিনি নির্দোশ প্রমানিত হন। নুরুল ইসলাম মঞ্জুর পরবর্তিতে বিএনপিতে যোগদেন এবং ২০০৮-এর নির্বাচনে নিজ আদি বাসভুমি পিরোজপুর-২ আসন থেকে বিএনপি প্রার্থী হিসেবে ভোটের লড়াইয়ে নামলেও পরাজিত হন।
জীবনের শেষপ্রান্তে এসে রাজনীতি ও পারিবারিক ব্যবসা থেকে নিজেকে গুটিয়ে পুরোপুরি ধর্মীয় অনুশাষনের মধ্যে জীবন যাপন করছিলেন তিনি। নুরুল ইসলাম মঞ্জুরের মৃত্যুতে বরিশালে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ