বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্প-বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের পরিবারের আরো দুই সদস্য করোনা আক্রান্ত হলেন। করোনা আক্রান্ত বড়ভাই এস আলম গ্রুপের পরিচালক মোরশেদুল আলম (৬৫) এর ইন্তেকালের কয়েক ঘণ্টা পরেই তার মা ও বড়পুত্রের নমুনায়ও শনাক্ত হয় সংক্রমণ। সাইফুল আলম মাসুদের ৮৫ বছর বয়সী মা চেমন আরা বেগম এবং ২৬ বছর বয়সী ছেলে আহসানুল আলম মারুফের করোনা পজেটিভ আসায় তাদের দ্রুত চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।
পারিবারিক সুত্র জানায় এই সময়ে সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত সাইফুল আলম মাসুদ ও তার স্ত্রী উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় রয়েছেন। জানা গেছে সিঙ্গাপুর থেকে তার তদারকিতেই শনিবার নগরীর সুগন্ধা আবাসিক এলাকার ১ নম্বর রোডের বাসা থেকে আইসিইউযুক্ত অ্যাম্বুলেন্সে করে মা ও পরিবারসহ ছেলেকে ঢাকার গুলশানের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।
সেখান থেকে তাদের ঢাকার ধানমন্ডি আনোয়ার খান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। করোনায় আক্রান্ত অন্য চার ভাইকেও রোববার ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আব্দুর রব ইনকিলাবকে বলেন, জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাসেদুল আলমকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তার অবস্থা স্থিতিশীল। বাকিরা বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। এখন ঢাকাতেই তাদের চিকিৎসা চলবে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) বিজয় বসাক বলেন, সুগন্ধার বাড়িটি লকডাউন আছে। দুইজনকে শনিবার ঢাকায় নেওয়া হয়েছে। বাড়ির অনেকে ঢাকায় চলে গেছেন।
শুক্রবার রাতে জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে মারা যান মোরেশেদুল আলম। রাতেই তড়িঘড়ি করে তার লাশ দাফন করা হয় ভিড় জটলা এড়াতে।
গত ১৭ মে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ল্যাবের পরীক্ষায় সাইফুল আলম মাসুদের পরিবারের ৬ সদস্য করোনা শনাক্ত হন।
তারা হলেন এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের পরিচালক মোরশেদুল আলম, এস আলম গ্রুপের পরিচালক রাশেদুল আলম, এস আলম গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ লাবু, ইউনিয়ন ব্যাংক ও এস আলম গ্রুপে পরিচালক মোহাম্মদ শহীদুল আলম এবং এস আলম গ্রুপের পরিচালক ওসমান গণি।
এছাড়া করোনায় আক্রান্ত হন তার এক ভাইয়ের স্ত্রীও। শুরুতে তারা সবাই সুগন্ধার বাসায় থেকে চিকিৎসা নেন। প্রথমে রাশেদুল আলমের অবস্থার অবনতি হলে তাকে জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়।
সেখানে তাকে আইস্ইিউতে রাখা হয়। পরে বড়ভাই মোরেশদুল আলমের অবস্থার অবনতি হয়। তাকে নেওয়া হয় ওই হাসপাতালে। তবে তখন কোন আইসিইউ খালি না থাকায় ছোটভাই রাশেদুল আলমকে সরিয়ে বড়ভাইকে আইসিইউ সার্পোট দেওয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আব্দুর রব বলেন, তাদের সম্মতিতেই আইসিইউ সুবিধা বদল করা হয়েছে। তাছাড়া তার অবস্থা স্থিতিশীল থাকায় তিনি নিজেই বড়ভাইকে সুযোগ দিয়েছেন।
এদিকে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প-বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপ পরিবারে করোনা সংক্রমণ এবং পরিবারের এক সদস্যের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে নানা রকম স্ট্যাস্টাস দিচ্ছেন।
একজন লিখেছেন এস আলম গ্রুপ। দেশের শীর্ষ ধনীদের অন্যতম। দখলে রয়েছে ৮টি ব্যাংক। তিনটি ব্যাংক বর্হিভুত আর্থিক প্রতিষ্ঠান। আছে দুটি বীমাসহ ৩৪টি কোম্পানী। শুধু বাংলাদেশে নয়, সিঙ্গাপুর ও কানাডার ধনীদের তালিকায়ও স্থান পেয়েছে গ্রুপটি।
গ্রুপের ৫ ভাইসহ ৬ জন করোনা আক্রান্ত। এরমধ্যে দুই ভাইয়ের অবস্থা সংকটাপন্ন হলে তাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়।
তাদের জন্য হাসপাতালে দেয়া হয়েছে একটি আইসিইউ বেড। শেষ সময়ে ছোট ভাইয়ের মুখ থেকে খুলে বড় ভাইকে দেয়া হলো ভেন্টিলেটর সার্পোট। কিস্ত ততক্ষণে তার ফুসফুস কার্যক্ষমতা পুরোপুরি হারিয়ে ফেলে।
মারা গেলেন বড়ভাই মোরশেদুল আলম। তড়িঘড়ি করে আবার যন্ত্রটি দেওয়া হলো ছোট ভাইয়ের মুখে। তিনি এখনও লড়ছেন মৃত্যুর সাথে।
অথচ তাদের মতো দুই একজন উদ্যোক্তা চাইলে দেশের পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থাকে পাল্টে দিতে পারতেন। কিন্তু তারা কি জানতেন এমন একদিন আসবে, যখন কাড়ি কাড়ি টাকা ঢাললেও সিঙ্গাপুর-থাইল্যান্ডের দরজা খুলবে না।
মহামারীর বিশ্বায়ন হবে, আর জাতিরাষ্ট্রগুলো নিজ নিজ বাউন্ডারির মধ্যে খিল এঁটে বসে থাকবে। কোনো কারেন্সি দিয়েই এই দরজা আর খোলা যাবে না!
করোনা-উত্তর বাংলাদেশে যেসব উদ্যোক্তা বেঁচে থাকবেন, তাদের মনে কি থাকবে এই ঘটনা? শুধু এস আলম গ্রুপই নয়, এমন অনেক শিল্প গ্রুপের মালিক আজ আগাম বুকিং মানি দিয়েও হাসপাতালের আইসিইউ ব্যবস্থা করতে পারেছন না!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।