Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মৎস্য প্রকল্পের নামে কোটি টাকা আত্মসাৎ পরিকল্পনার অভিযোগ

প্রকাশের সময় : ২৪ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার
গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) উপজেলা সংবাদদাতা

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের মহিমাগঞ্জস্থ রংপুর চিনি কলের আওতাধীন সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের চাপিয়ে দেয়া ‘ফিস ফার্মিং উইথ স্পেশাল অ্যানফিসেস এন্ড গুড অ্যাকোয়া কালচার প্রাকটিসেস’ প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের মহা পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ৫ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পে ১২ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে বলে রংপুর চিনিকল সূত্র জানায়। এদিকে বেশ কয়টি পুকুর নতুন করে খনন করায় আবাদি জমির শ্রেণি পরিবর্তন করার অভিযোগ উঠেছে কতৃপক্ষের বিরুদ্ধে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৩০ কোটি টাকা লোকশানের বোঝা মাথায় নিয়ে জৌলুস হারিয়ে জরাজীর্ণ রংপুর চিনি কলকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে চিনি কলের নিজস্ব সম্পত্তি কাজে লাগিয়ে আয় বৃদ্ধিকল্পে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের বর্তমান চেয়ারম্যান এ কে এম দেলোয়ার হোসেন। তিনি রংপুর চিনি কলের আওতাধীন সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারে এসে মজাপুকুর সংস্কার ও খননের কাজ উদ্বোধন কালে দেয়া বতৃক্তায় উপস্থিত চিনি কলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভেবেছিলেন দেরিতে হলেও একজন সৎ, ন্যায়, নিষ্ঠাবান, কর্মক্ষম, প্রতিভাবান চেয়ারম্যান পেয়েছেন তারা। যার নেতৃত্বে কর্পোরেশনের সকল গ্লানি ধুয়েমুছে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে কর্পোরেশনের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু সে আশায় গুঁড়ে বালি। শুরুতেই ৮টি পুকুর সংস্কার ও পুনঃখননের জন্য প্রায় ১ কোটি টাকা দরে গোপন কোটেশন ও টেন্ডারের মাধ্যমে ২টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যথাক্রমে পাবনা জেলার ইশ্বরদী উপজেলার মেসার্স দাশুরিয়া ইকুপমেন্ট কেয়ার ও মেসার্স তাহা এন্টারপ্রাইজ, দাশুরিয়া, ইশ্বরদীকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। আর এ কার্যাদেশ প্রদানে মুখ্য ভূমিকা রাখেন বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান ও তার দপ্তরের চিফ টেকনিক্যাল সার্ভিসেস (চিফ টি এস) কামরুজ্জামান। চিফ টি এস কামরুজ্জামান এ প্রকল্পের অলিখিত পিডি হিসেবে কাজ করছেন। তিনি মাঝেমধ্যেই ঢাকা থেকে রংপুর চিনিকলের গেস্ট হাউসে এসে রাত্রী যাপন করেন। তার কথা মতোই প্রকল্পের কাজকর্ম চলছে। গোপন কোটেশন ও টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২টি চিফ টি এস কামরুজ্জামানের ঘনিষ্ঠজন বলে জানা গেছে। ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের কোন পরিচালক (পিডি) না রেখে রংপুর চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে প্রকল্প ইনচার্জ করা হলেও ফিস ফার্মিং উইথ স্পেশাল অ্যানফিসেস এন্ড গুড অ্যাকোয়া কালচার প্রাকটিসেস প্রকল্পের ব্যাপারে তার পরিপূর্ণ ধারণা নেই। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের প্লানিং সেকসন থেকে এ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের নিয়ে করা হয়নি কোন অবহিতকরণ সভা। ফলে প্রকল্প প্রণয়ন, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, বাজেট ও বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে রয়ে গেছে ঘোর অন্ধকার। এ ব্যাপারে মহিমাগঞ্জস্থ রংপুর চিনি কলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল আওয়াল জানান, ‘ফিস ফার্মিং উইথ স্পেশাল অ্যানফিসেস এন্ড গুড অ্যাকোয়া কালচার প্রাকটিসেস’ নামে ৫ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পে ১২ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ২৬টি পুকুর খনন ও সংস্কার, ফলজ বৃক্ষ রোপণ, রাস্তা ও কটেজ নির্মাণ এবং বিদ্যুতায়ন করা হবে। ইতোমধ্যে ২টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তমির বিল পুকুর এবং পোস্ট অফিস পুকুর সংস্কার ও খনন বাবদ ১৫ লক্ষ ৮৪ হাজার টাকা বিল প্রদান করা হলেও চিনি কলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক একটি বিল পরিশোধের কথা স্বীকার করলেও অপরটি অস্বীকার করে বলেন, প্রক্রিয়াধীন আছে। এদিকে পুকুর খননের সাথে সংশ্লিষ্ট এবং অভিজ্ঞরা জানান, ওই দুই পুকুর খননে ৮ লক্ষ টাকা মতো খরচ হতে পারে। অপরদিকে মাটির বদলে কলোনী পুকুর খনন করে সেই মাটি দিয়ে গোবিন্দগঞ্জ পৌর শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আমিনুল মোমিন বুলু বোয়ালিয়া মৌজায় তার নিজস্ব প্রায় ৪ বিঘা জমি ভরাট করে নিলেও ওই পুকুর খনন বাবদ বিল উত্তোলনের প্রচেষ্টা বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চিনি কলের একটি সূত্রে জানিয়েছে। এ ব্যাপারে চিফ টেকনিক্যাল সার্ভিসেস (চিফ টি এস) কামরুজ্জামানের সাথে সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার এলাকায় কর্মরত অবস্থায় যোগাযোগ করা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে অভিযোগসমূহ অস্বীকার করে বলেন, রংপুর চিনি কলের এমডি’র সাথে সাক্ষাৎ করুন উনি সব তথ্য দিতে পারবেন। এ সময় সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার ব্যবস্থাপক উপস্থিত থাকলেও তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মৎস্য প্রকল্পের নামে কোটি টাকা আত্মসাৎ পরিকল্পনার অভিযোগ
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ