বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
প্রকৃতির সহজাত নিয়মের তারে এর সবকিছুই বাঁধা। এই বাঁধন খুবই শক্ত এবং মজবুত। এরই ধারাবাহিকতায় দিন যায়, রাত আসে। দিনও রাতের আসা যাওয়ার খেলা কবে, কোন্ অতীতে শুরু হয়েছে, তার হদীস কেউ দিতে পারে না। তবে, আল্লাহপাক বিশেষ বিশেষ দিনকে যেমন মর্যাদাশালী করেছেন, তেমনি বিশিষ্ট ও নির্ধারিত রাতকেও করেছেন সৌভাগ্য, লাভের নেয়ামক। তাই, মাহে রমযানের শেষ দশকে রাত্রিজাগরণ করে ইবাদত বন্দেগী করার ফযিলত একটি বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছে। কেন আছে, কি জন্য আছে? এর শুঢ়মর্ম পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা:) উদ্ঘাটন করেছেন। হযরত সালমান আল ফারেসী (রা:) হতে বর্ণিত তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) ইরশাদ করেছেন : “মাহে রমযানের শেষ দশক জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও নিষ্কৃতির জন্য নির্ধারিত।” (বায়হাকী, শোয়াবুল ঈমান)।
এই হাদীসের আলোকে স্পষ্টত:ই বুঝা যায় যে, মাহে রমযানের শেষ দশকে দিনে রোযা রাখা এবং রাতে জাগ্রত থেকে অধিকহারে এবাদত বন্দেগীতে লিপ্ত থাকাই হলো জাহান্নাম হতে মুক্তি লাভের মোক্ষম উপায়। এই উপায়কে যারা যথাযথভাবে কাজে লাগাতে সক্ষম হয়, তারা অবশ্যই এই সৌভাগ্যের ফল লাভে ধন্য হবে, এতে কোনই সন্দেহ নেই। কারণ নূর নবী, মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা:) মাহে রমযানের শেষ দশকে এই আদর্শই স্থাপন করে গেছেন। এতদপ্রসঙ্গে বহু হাদীস বর্ণিত আছে। যথা: (ক) হযরত আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন রমযানের শেষ দশক উপস্থিত হত, রাসূলুল্লাহ (সা:) লুঙ্গি শক্ত করে বাঁধতেন, রাত্রি জাগরণ করতেন, এবং পরিবারের সদস্যদের জাগিয়ে তুলতেন। (সহীহ বুখারী : হাদিস ১৯২০; সহীহ মুসলিম : হাদীস ১১৭৪)। (খ) হযরত আলী কাররামাল্লাহ ওয়াজহাহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা:) মাহে রমযানের শেষ দশকে নিজ পরিবারকে জাগ্রত করতেন। (জামে তিরমিজী : হাদীস ৭৯৫)। এই হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রহ:) এভাবে বর্ণনা করেছেন : রমযানের শেষ দশক শুরু হলে রাসূলুল্লাহ (সা:) পরিবারের লোকদের জাগ্রত করতেন ও লুঙ্গি উঁচু নিতেন। মা আয়েশা (রা:) কে জিজ্ঞেস করা হলো, লুঙ্গি উঁচু করে পরিধান করার অর্থ কি? তিনি উত্তর করলেন স্ত্রীদের সঙ্গ ত্যাগ করা। (মুসনাদে আহমাদ : ১/১৩২)। (গ) হযরত আয়েশা (রা:) হতে আরও বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন : রাসূলুল্লাহ (সা:) রমযানের শেষ দশকে এমন মুজাহাদা করতেন, যা তিনি অন্য সময় করতেন না। (সহীহ মুসলিম : হাদীস ১১৭৫)।
বস্তুত : রমযানের শেষ দশকের রাতগুলোতে নামাজ ও যিকরে নিমগ্ন থাকা সুন্নাত। কারণ তা রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর আমল দ্বারা সমর্থিত। উল্লেখিত হাদীসসমূহ দ্বারা এই বিশেষত্বটিই প্রতিপন্ন হয়। তবে, সারা রাত জাগ্রত থাকার ব্যাপারে সে নিষেধাজ্ঞা হাদীসে এসেছে, তার অর্থ হলো সারা বছর রাত জাগ্রত থাকা। কিন্তু যে সকল রাতের বিশেষ ফযিলত রয়েছে- যেমন মাহে রমযানের শেষ দশকের রাত, শবে কদরের রাত, শবে বরাতের রাত ইত্যাদি ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা থেকে ব্যতিক্রম। (শরহুন্ নববী আলা সহীহ মুসলিম : ৮/৭১)। তাছাড়া রমযানের শেষ দশকের রাতগুলো জাগ্রত থাকার উদ্দেশ্য হল লাইলাতুল কদর তালাস করা। আল্লাহপাকের অশেষ অনুগ্রহ যে তিনি লাইলাতুল কদর মাহে রমযানের শেষ দশকে সীমাবদ্ধ রেখেছেন। যদি সারা বছরই লাইলাতুল কদরের সম্ভাবনা থাকত, তাহলে তার অনুসন্ধানে বেশিরভাগ মানুষেরই কষ্ট হত, মোট কথা, অধিকাংশ সংখ্যক মানুষই লাইলাতুল কদর হতে বঞ্চিত থাকত। তাদের জন্য এই সৌভাগ্য লাভের কোন সম্ভাবনাই অবশিষ্ট পাওয়া যেত না। তাই, মহান আল্লাহপাক একে শেষ দশকের বেজোর রাতগুলোতে তালাস করার উপদেশ প্রদান করেছেন। (শারহু ইবনে বাত্তাল : ৪/১৫৯)। আর এজন্য মাহে রমযানের শেষ দশকের রাতগুলোতে পরিবারের সদস্যদের নিদ্রা হতে ইবাদতের জন্য জাগিয়ে তোলা সুন্নাতে নবুবী। এতে করে মাহে রমযানে তাদের রাত্রি জেগে ইবাদত করার অভ্যাস হয় এবং অবশ্যই তারা বেহুদা গল্প-গুজব ও অবাঞ্ছিত চিন্তা-ভাবনা পরিহার করে সালাত ও যিকির আযকারে নিমগ্ন হবে এবং আল্লাহপাকের মকবুল বান্দাহ হিসেবে পরিগণিত হবে। এটা বড়ই খোশ নসিবীর ব্যাপার। তাই, প্রত্যেক মুমিন-মুসলমানেরই উচিৎ মাহে রমযানের শেষ দশকের রাতগুলোতে অধিক হারে নফল ইবাদত করা। মহান আল্লাহপাক আমাদেরকে সে তাওফিক দান করুন, আমীন!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।