বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার : নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে ওয়ান ইলেভেন ও বিএনপি-জামায়াতের দোসর হিসেবে আখ্যা দিয়ে তার বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তারা বলেছেন, আইভী আওয়ামী লীগের কেউ নয়। ১০ বছর ধরে মেয়র আইভী আমাদের অবজ্ঞা করেছেন, কুকুর বলেছেন, তাতে দুঃখ নেই। কিন্তু উনি আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী ও বর্তমান সরকারের বহুবার সমালোচনা করেছেন, যা আমরা আর সহ্য করব না। এ সময় মহানগর আওয়ামী লীগের ২৭টি ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা আগামী সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে দলীয় মেয়র প্রার্থী হিসেবে তাদের সমর্থন ঘোষণা করেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীরর বাংলা ভবন কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এই সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। এসময় মেয়র আইভী ইস্যুতে নেতা-কর্মীরা তীব্র সমালোচনা করে বক্তব্য দেন এবং সভায় উত্তেজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে সভাপতি আনোয়ার হোসেনের হস্তক্ষেপে সবাই শান্ত হলেও উপস্থিত সাংসদ শামীম ওসমান ছিলেন নীরব দর্শকের ভূমিকায়।
এ সময় আনোয়ার হোসেন আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, আমার ৪৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন আজ। যে সম্মান আর ভালোবাসা আজ নেতা কর্মীরা আমাকে দিয়েছেন, তাতে আমি ওয়াদা করছি যতদিন বাঁচবো বঙ্গবন্ধুর আদর্শকেই ধরে রাখবো। আমৃত্যু জননেত্রী শেখ হাসিনার কর্মী থাকবো, আর আপনাদের নিয়েই বাচঁবো। এসময় তিনি বলেন, ২০০১সালের পর বৈরী পরিস্থিতিতে শামীম ওসমান দেশ ত্যাগ করলেও তার বিশাল কর্মী বাহিনীসহ আমরা ২০০৩ সালে পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে আইভীকে জয়ী করিয়ে ছিলাম। কিন্তু এর পর থেকে কখনও আইভীকে আমি ও আমরা দলীয় কাজে আনতে পারিনি। আমরা ১৪ দলের পক্ষ থেকে বিএনপি-জামায়াতবিরোধী সমাবেশে আইভীকে প্রধান অতিথি করেছিলাম। কিন্তু শুধুমাত্র জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিয়ে মাইকিং করার কারণে সে ওই সভায় আসতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। সে ১/১১ ও মাইনাস ওয়ান ফর্মূলার দোসর কামাল-মান্নাদের সঙ্গে বহুবার সভা করেছেন। নারায়ণগঞ্জ ৫ আসনের উপনির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ড.কামাল-মান্নাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছে। সে কখনওই আওয়ামী লীগ করেনি, করতে পারে না। তাকে নিয়ে সিটি নির্বাচনের সময় জনগণের কাছে গিয়েছিলাম, কিন্তু এখন যখন ১০ মিনিটের বৃষ্টিতে বন্যা হয়ে যায়, ভাঙা রাস্তায় মানুষ অসহনীয় দুর্ভোগ পোহায়, দুর্নীতির তদন্ত হয়, লুটপাট আর অনিয়মের কাহিনী পত্রিকায় আসে তখন লজ্জায় মুখ দেখাতে পারি না। এসময় তিনি উপস্থিত নেতাকর্মীদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেন, আমি একসময় তার (আইভী) পক্ষাবলম্বন করেছিলাম। কিন্তু তিনি মাইনাস ওয়ান ফর্মুলার দোসর ছিলেন এটা বুঝতে পারিনি।
বর্ধিত সভার প্রধান অতিথি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক একেএম শামীম ওসমান এমপি বলেন, আইভীকে নিয়ে কথা বলার মত মানসিকতা আমার নেই। কে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হবেন তা নিয়েও মাথা ব্যথা নেই। কিন্তু কোন খন্দকার মোশতাকের ‘প্রেতাত্মা ’ দলের নাম ব্যবহার করে মেয়র হয়ে আবারো দলের ও নেতাকর্মীদের ক্ষতি করবে, অবজ্ঞা অবহেলা করবে,বঞ্চিত করবে, দুর্নীতি করে নারায়ণগঞ্জবাসীকে অপমানিত করবে সেটা হতে দেব না। তিনি বলেন, গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আইভী বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থী ছিলেন। বিএনপি ঘরনার এক সম্পাদকের ঢাকার বাসায় বসে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আইভীর ৫ মিলিয়ন ডলারের লেনদেন হয়েছে। নির্বাচনের পর আইভী শুধু শামীম ওসমানের বিরুদ্ধেই কথা বলেছেন। কোনদিন বিএনপি বা জামায়াতের বিরুদ্ধে একটি কথাও বলেননি। আইভী এতেই ক্ষ্যান্ত থাকেননি, সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়েও কথা বলেছেন।
এসময় শামীম ওসমান ২টি জাতীয় পত্রিকার কাটিং দেখিয়ে বলেন, একটি পত্রিকার আয়োজিত গোল টেবিল বৈঠকে আইভী আমাদের মাতৃতূল্য নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেছে, ‘একটি-দুটি পবিারের পাশে থাকলে হবে না, জনগণের পাশে থাকতে হবে। আওয়ামী লীগ-বিএনপি মনে করে ৬৪ জেলায় ৬৪ জন গডফাদার থাকলেই তাদের কাজ হবে। এই ভাবনা ঠিক না। সাধারণ মানুষ জেগেছে, যে কোনো সময় বিস্ফোরণ ঘটবে।’ শামীম ওসমান আরেকটি পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের কপি দেখিয়ে বলেন, মেয়র আইভী ২০১৩ সালের ৬ ডিসেম্বর বলেছেন, ‘এরশাদকে নিয়ে দুই নেত্রী যে টানা হেচড়া খেলায় মেতে উঠেছেন তা বন্ধ হওয়া উচিত। দুই নেত্রী দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিচ্ছেন।’ ওই বছরই আইভী অপর একটি সভায় বলেছেন, ‘বর্তমান সরকার খুনিদের পৃষ্ঠপোষক।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।