Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতে ‘হিন্দুদের রক্তস্নান’ শিরোনামে ভাইরাল ভিডিওর মানুষটি একজন মুসলিম

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৭ মে, ২০২০, ৪:৪১ পিএম

কয়েকজন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত মুসলমান কোয়ারেন্টিনে না যেতে চাওয়াকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার তেলেনিপাড়ায় গত সপ্তাহে যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছে, সেই সময়ের একটি ভিডিওতে রক্তাক্ত এক মুসলিম ব্যক্তিকে ´হিন্দুদের রক্তস্নান´ বলে ভাইরাল করা হয়েছে।
ওই দাঙ্গায় যেমন হিন্দুদের ঘর-বাড়ি-দোকান জ্বালানো হয়েছে, তেমনই মুসলমানদের ঘর-বাড়িও পোড়ানো হয়েছে। আহত হয়েছেন দুই সম্প্রদায়ের মানুষই। দুই ধর্মাবলম্বী কয়েকশো মানুষ ঘর-বাড়ি হারিয়ে এখন আশ্রয়শিবিরে আছেন।
সেরকমই একটি আশ্রয়শিবিরে আছেন চটকল শ্রমিক মঞ্জুর আলম। হাসপাতাল থেকে সদ্য ছাড়া পেয়েছেন আলম। মাথায় ৫২টা সেলাই পড়েছে, হাতে কোপানো হয়েছিল, সেখানে ১১টা আর কান কেটে অর্ধেক ঝুলছিল, তা জোড়া লাগাতে সাতটি সেলাই করতে হয়েছে।
সেখান থেকেই টেলিফোনে বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, ১০ তারিখ রোজা ভাঙ্গার পরে আমি আর দু´একজন ঘরের বাইরে বেরিয়েছিলাম। চারদিকে হল্লা হচ্ছিল। হঠাৎই আমাদের দুজনকে আক্রমণ করে বাঁশ, লোহার রড, নেপালি চাকু দিয়ে। ওখান থেকে আমাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে আমার এক ভাই আর অন্য একজন। তখনই কেউ আমার একটা ভিডিও তুলেছিল।

""
সেই ভিডিওটি বহু মানুষ দেখেছেন আর শেয়ারও করেছেন নানা সামাজিক প্ল্যাটফর্মে। মূল ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে এক মধ্যবয়সী মানুষের মাথা থেকে অঝোরে রক্ত বেরুচ্ছে, তার গায়ের জামা ভিজে গেছে বৃষ্টির পানি আর রক্তে। সন্ধ্যাবেলার ঘটনা সেটি। আশপাশ থেকে কয়েক জন তার শুশ্রূষা করছেন। ওই ভিডিওটি বেশ কয়েকজন বিজেপি নেতাও শেয়ার করেছেন।
ভিডিওর ক্যাপশনটা এরকম : ´আর কত দিন হিন্দুদের রক্ত ঝরবে দিদি? আপনি আর আপনার রাজনীতি বাংলার হিন্দুদেরকে কোন জায়গায় পৌঁছেছে দিয়েছে, সবাই বুঝতে পারছে।... হুগলী জেলার তেলেনিপাড়া এলাকার ঘটনা´। ´দিদি´ বলতে এখানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীকে বোঝানো হয়েছে।
যে রক্তাক্ত ব্যক্তির ভিডিও দেখিয়ে ´হিন্দুদের রক্তস্নান´ বলে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, সেটা আসলে মঞ্জুর আলমের আহত হওয়ার পরে তোলা সেই ভিডিওটি। শ্যামনগর নর্থ জুটমিলে কর্মরত মঞ্জুর আলম বলছিলেন, যে ভিডিও তুলেছিল, সে আমার নাম দেয়নি, কিন্তু হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে শুনছি ওই ভিডিওটা মনোজ নামের কারও বলে ফেসবুকে সারা দেশে ছেয়ে গেছে! আমি মুসলমান, আর ভিডিওর ওপরে লেখা হল একজন হিন্দু রক্তে ভেসে যাচ্ছে! বলছিলেন আলম।
ভুয়া ভিডিও ভাইরাল হওয়া প্রশ্নে আরএসএসের বাংলা পত্রিকা স্বস্তিকার সম্পাদক ও বিজেপি নেতা রন্তিদেব সেনগুপ্ত অবশ্য বলছেন, আমি ওই ভিডিওগুলো দেখিনি, তাই বলতে পারব না কোনটা ভুয়া আর কোনটা সত্যি। ফেক ভিডিও ছড়ানো নিশ্চয় উচিত নয়। কিন্তু ভুয়া ভিডিও কেন ছড়ানো হচ্ছে, সেই প্রশ্ন তুলে কিন্তু তেলেনিপাড়ার ঘটনাটা লঘু করা যায় না।
সেখানকার বাসিন্দারা বলছেন, একটি সম্প্রদায়ের মানুষই প্রথম হাঙ্গামা শুরু করে। নিশ্চয় তার জন্য সেই সম্প্রদায়ের সবাইকে দায়ী করা যায় না। কিন্তু ঘটনা এটা যে ওই বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষ দাঙ্গাটা সৃষ্টি করে এবং আক্রান্ত হন হিন্দুরা। অনেক হিন্দু পরিবারকে তেলেনিপাড়া ছেড়ে চলে আসতে হয়েছে। ভুয়ো ভিডিও যেমন ছড়ানো উচিত নয়, তেমনই সত্যটাকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করাও ঠিক নয়, বলে মন্তব্য করেন সেনগুপ্ত।
তেলেনিপাড়ার দাঙ্গা সংক্রান্ত এটিই প্রথম ভুয়া ভিডিও বা পোস্ট নয়। ভারতের ভুয়ো খবর যাচাই করার ওয়েবসাইট অল্ট নিউজ বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মিলিন্দ পারান্ডের একটি ভিডিও টুইট খুঁজে পেয়েছে, যেখানে দুই ব্যক্তিকে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারছে একদল মানুষ।
পারান্ডে ওই ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন যে, ‘পশ্চিমবঙ্গের সরকার মুসলিমদের ´দুষ্টতা´র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার’। পরের বাক্যে তিনি লিখেছেন, হুগলীর চন্দননগরে হাজার হাজার মুসলমানরা হিন্দুদের ঘর জ্বালাচ্ছে, হিন্দু নারীরা রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছেন। পুলিশ প্রশাসন মুসলমানদের সহায়তা করছে। মিডিয়া এসব দেখাচ্ছে না।
অল্ট নিউজ খুঁজে দেখেছে ওই ভিডিওটির সঙ্গে তেলেনিপাড়ার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কোনও মিল নেই। মূল ভিডিওটি এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের একটি অটো চুরির ঘটনার। আগে পাকিস্তানের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করা হয়েছিল, যেখানে দেখা যাচ্ছে বেশ কিছু ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এক ব্যক্তির মাথা ফেটে রক্ত বেরুচ্ছে। ওই ভিডিওটিকেও তেলেনিপাড়ার দাঙ্গার ছবি বলে ভাইরাল করা হয়েছিল।

 



 

Show all comments
  • শওকত আকবর ১৭ মে, ২০২০, ৫:৩৬ পিএম says : 0
    এই নাটকের যবনিকা ঘটবে কবে?কবে হবে এ দাঙ্গার অবসান?কবে রাম-রহিমের মিলিত কন্ঠে শোনা যাবে জয়গান!মন্দিরে বাজবে ঘন্টা,মসজিদের মিনারে আল্লাহ আকবর ধ্বনিতে ধ্বনিত হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • ash ১৮ মে, ২০২০, ৫:৩২ এএম says : 0
    INDIA THEKE ARO KOYEKTA PAKISTAN TOIRI HOBE, TATE KONO SHONDEHO NAI, & THAT WILL BE SOON
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ