বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম একবার তিনটি বদদোয়া করেছিলেন। তিনটি বদদোয়ার প্রথম যে বদদোয়াটি করেছিলেন তা হলো, যে ব্যক্তি রমজান পেয়েও গোনাহ মাফ করাতে পারল না সে ধ্বংস হোক, আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হোক। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ বদদোয়ার পরও বলেছেন, আমীন।
চিন্তা করে দেখি, আমরা রমজানে কেমন আমল করি। আমরা এ বদদোয়ার শিকার হয়ে যাব না তো। রমজান এসেছে সকল প্রকার গোনাহ ও অন্যায়-অপরাধ ছেড়ে তাকওয়ার পথে চলার জন্য। রমজান দেয়া হয়েছে ইবাদত-বন্দেগি করে মুত্তাকী হওয়ার জন্য। যদি রমজানের কর্তব্য আদায় না করি, তাহলে আমরা এ বদদোয়ার শিকার হয়ে যাব। আল্লাহ মাফ করুন।
তাওবার নিয়ম : আমাদের উচিত রমজানে নিজেদের শুধরে নেয়া। রমজানের শুরুর দিকের তুলনায় শেষ দশকের বরকত ও ফজিলত অনেক বেশি। এ দিনগুলোতে তাওবা করে সঠিক পথে চলার হিম্মত করব ইনশাআল্লাহ। আল্লাহর দরবারে আন্তরিকভাবে তাওবা করতে হবে। শুধু একবার হাত তুলে মাফ চাওয়াকেই তওবা বলে না। তাওবা হলো গোনাহ ও অন্যায় থেকে সম্পূর্ণ ফিরে আসা।
তাওবার কিছু শর্ত রয়েছে : এক. যে গোনাহ থেকে তাওবা করবে তা ত্যাগ করবে। গোনাহও করলাম আবার তাওবাও করলাম, এমন তাওবা কবুল হয় না। প্রথম কাজ গোনাহ ছেড়ে দিতে হবে। দুই. নিজের গোনাহ ও অন্যায়ের দরুন আল্লাহর দরবারে লজ্জিত হতে হবে। অনুতপ্ত হৃদয়ে তাওবা করতে হবে।
চিন্তা করে দেখি, একটা কুকুর তার মনিবের কী পরিমাণ ভক্ত ও আজ্ঞাবহ হয়ে থাকে। মনিব তাকে মাত্র দু’বেলা খাবার দেয়। এতেই সে সন্তুষ্ট, সারা রাত নির্ঘুম কাটায়। মনিবের বাড়ি পাহারা দেয়। মনিবের পায়ের কাছে ঘুর ঘুর করতে থাকে। আমিও তো এক মনিবের গোলাম। আমার জীবনের সবটুকুই যার দয়া ও অনুগ্রহ, প্রতিটি মুহূর্তে আমি যার নেয়ামতে ডুবে আছি সে মনিবকে কিভাবে ভুলে থাকি? কিভাবে তার নাফরমানি করি? আমার কী এখনো অনুতপ্ত হওয়ার সময় হয়নি?
তিন. ভবিষ্যতে গোনাহ না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করতে হবে। চার. আল্লাহ তাআলার কোনো হক আদায় না করে থাকলে তা আদায় করতে হবে। যেমন- কেউ যদি নামাজ না পড়ে থাকে তাহলে তাওবা করার পদ্ধতি হলো, প্রথমে সে এ নামাজগুলোর কাজা আদায় করবে। কাজা আদায় না করে শুধু দোয়া করে মাফ চাইলে তাওবা হবে না। তদ্রুপ রমজানের রোজা ছেড়ে থাকলে তারও কাজা করতে হবে।
পাঁচ. অন্যের হক নষ্ট করে থাকলে তা আদায় করবে বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি থেকে ক্ষমা চেয়ে নেবে। অন্যথায় এ গোনাহ আল্লাহ মাফ করবেন না। এ শর্তগুলো মেনে কেউ তাওবা করলে আল্লাহ তাআলা অবশ্যই মাফ করে দেবেন। আমরা যত বড় গোনাহগারই হই না কেন তাঁর ক্ষমা ও অনুগ্রহের সাগর বিশাল। তাঁর ক্ষমা ও অনুগ্রহের সাগরে গোসল করতে পারলে আমাদের গোনাহ ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফীক দান করুন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।