Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইতিকাফ কি ও কেন

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ১৪ মে, ২০২০, ১২:০২ এএম

ইতিকাফ একটি ফজিলতপূর্ণ আমল। যার উল্লেখ আল কোরআনে রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, তোমরা মসজিদসমূহে অবস্থায় স্ত্রীদের গভীর সান্নিধ্যে গমন করো না। (সূরা বাকারাহ: আয়াত ১৮৭)।

আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত আরও ইরশাদ করেছেন, তোমরা দু’জনে (ইবরাহীম আ. ও ইসমাঈল আ.) আমার ঘরকে তাওয়াফকারী ও ইতিকাফকারীদের জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র করে রাখবে। (সূরা বাকারাহ: আয়াত ১২৫)। হাদীস শরীফেও ইতিকাফ আমলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। হযরত আয়েশা র. হতে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন এবং তা চলতে ছিল যতক্ষণ না আল্লাহ তার জান কবজ করলেন। (জামে তিরমিজি)।

ইতিকাফ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো কোনো জিনিষকে বাধ্যতামূলকভাবে ধরে রাখা, কোনো জিনিষের ওপর নিজেকে শক্তভাবে আটকে রাখা। আর শরীয়তের পরিভাষায় ইতিকাফ বলা হয়: মসজিদে কোনো বিশেষ ব্যক্তির বিশেষ ধরণের অবস্থান ও অবস্থিতি গ্রহণকে। আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রহ. ইতিকাফ শব্দের বিশ্লেষণে বলেছেন, ইতিকাফ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো, শুধু অবস্থান করা। যে ব্যক্তি মসজিদে অবস্থান করেছে, তাকে আকিফ বা মু’তাফিক বলে। আর শরীয়তের পরিভাষায় এর অর্থ হলো, আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে মসজিদে থাকা ও অবস্থান করা। আর ইতিকাফ শব্দের মূল ভাবব্যঞ্জনা হলো, কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য বিন্দুতে মন-মগজকে দৃঢ়ভাবে নিবদ্ধ রেখে মসজিদে অবস্থান করা, যাতে করে সেদিক হতে দৃষ্টি অন্য কোনো দিকে নিবদ্ধ না হয়।

উপরোক্ত হাদীস হতে জানা যায় যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) নিয়মিতভাবে রমজান মাসের শেষ দশদিন মসজিদে ইতিকাফ করতেন। এ আমল তার ইন্তিকাল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। অর্থাৎ জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি এই আমল চালিয়ে গেছেন। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে এতদপ্রসঙ্গে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইতিকাফ করতেন, যতক্ষণ না আল্লাহপাক তার ওফাত করেছেন। তার অন্তর্ধানের পর তার স্ত্রীগণ ইতিকাফ করেছেন। ইতিকাফের হুকুম সম্পর্কে অভিমত ব্যক্ত করতে গিয়ে ইমাম ইবনুল হুম্মাম রহ. বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর এই কাজ নিরবচ্ছিন্ন ও ক্রমাগতভাবে করা এবং বিনা কারণে পরিত্যাগ না করা, সাহাবীদের মধ্যে যারা ইতিকাফ করেনি তাদেরকে এর জন্য অভিযুক্ত না করা হতে বুঝা যায় যে, ইহা সুন্নাত। যদি এর অন্যথা হত, তাহলে ইতিকাফ ওয়াজিব বলে প্রমাণিত হত। মোট কথা, ইতিকাফ সুন্নাত। একে অধিকাংশ ফোকাহাগণ সুন্নাতে কেফায়া বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। অর্থাৎ ব্যক্তিগতভাবে যেমন সুন্নাত তেমনি মহল্লার মসজিদে কেউ যদি ইতিকাফ করেন, তাহলে সকলের পক্ষ হতে সুন্নাতে কেফায়া রূপে তা আদায় হয়ে যাবে।

রাসূলুল্লাহ (সা.) কখনো কখনো বিশেষ কোনো কারণে ইতিকাফ করেছেন। হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) সেই রমজান মাসের ইতিকাফ পরিহার করেছেন এবং শাওয়াল মাসের ১০ দিন ইতিকাফ করেছেন। (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম)।

রাসূলুল্লাহ (সা.) নিয়মিত ইতিকাফ করলেও কোনো কোনো সাহাবী ইতিকাফ করেননি। এ প্রসঙ্গে ইমাম মালিক রহ. বলেছেন, হযরত আবু বকর রা. হযরত ওমর রা. হযরত ওসমান রা. ও ইবনুল মুসাইয়্যেব রা. নিয়মিতভাবে ইতিকাফ করেছেন বলে আমার নিকট খবর পৌঁছেনি। ইতিকাফের তীব্রতা ও কঠোরতার জন্য তারা কখনো কখনো ইতিকাফ করেননি। ইতিকাফে রাত্র এবং দিন অভিন্ন। ১০ দিন ইতিকাফকারীর উচিত মাহে রমজানের ২০ তারিখ মাগরিবের সময়ই মসজিদে অবস্থান গ্রহণ করা। অন্যথায় চন্দ্র মাসের হিসাবে ১০ দিন পূর্ণ হবে না। আর ইতিকাফ সংক্রান্ত হাদীসসমূহ হতে জানা যায় যে, পুরুষদের ইতিকাফ মসজিদেই হতে হবে। আর মহিলারা নিজ নিজ আসাবস্থলে নির্দিষ্ট প্রকোষ্ঠে ইতিকাফ করবে। বিশেষ জরুরত ছাড়া ইতিকাফস্থল পরিত্যাগ করতে পারবে না। খাওয়া-দাওয়া মসজিদেই সম্পন্ন করতে হবে। পায়খানা-পেশাব কিংবা অজু গোসল ব্যতীত অন্য কাজের জন্য মসজিদের বাইরে গেলে ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে। মুয়াত্তা ইমাম মুহাম্মদে উল্লেখ আছে যে, হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন মসজিদে ইতিকাফ করতেন, তখন তিনি মসজিদে থেকেই স্বীয় মাথা মোবারক আমার নিকটবর্তী করে দিতেন। তখন আমি তার মাথা মোবারক আঁচড়ে দিতাম এবং তিনি এসময় নিতান্ত মানবীয় প্রয়োজন ছাড়া কখনোও গৃহে আসতেন না। ইতিকাফের দ্বারা গোনাহ মাফ হয়, আল্লাহপাকের রেজামন্দি অর্জনের পথ সহজতর হয় এবং ইতিকাফকারীর মধ্যে দুনিয়ার আসক্তি কমে যায়। সুতরাং সময় ও সুযোগের সদ্ব্যবহার কল্পে ইতিকাফ করা সকল মুমিন মুসলমানের জন্যই শ্রেয়।



 

Show all comments
  • Abdur Rajjak ১৪ মে, ২০২০, ১:৪২ এএম says : 0
    ইতিকাফের মাহাত্ম্য ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শাহ ওয়ালি উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভি (রহ.) বলেন, ‘মসজিদে ইতিকাফ হচ্ছে হৃদয়ের প্রশান্তি, আত্মার পবিত্রতা ও চিত্তের নিষ্কলুষতা; চিন্তার পরিচ্ছন্নতা ও বিশুদ্ধতা। ফেরেশতাকুলের গুণাবলি অর্জন এবং লাইলাতুল কদরের সৌভাগ্য ও কল্যাণ লাভসহ সব ধরনের ইবাদতের সুযোগ লাভের সর্বোত্তম উপায়। এ জন্য রাসুল (সা.) নিজে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ইতিকাফ পালন করেছেন এবং তাঁর বিবিরাসহ সাহাবায়ে কেরামের অনেকেই এই সুন্নতের ওপর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমল করেছেন।’ (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা : ২/৪২)
    Total Reply(0) Reply
  • Mahmud Hussain ১৪ মে, ২০২০, ১:৪২ এএম says : 0
    নির্দিষ্টভাবে ২৭ রমজানের রাতকে শবেকদর বলা উচিত নয়। কেননা হাদিস শরিফে শেষ দশকের বিজোড় রাতে শবেকদর অন্বেষণ করতে বলা হয়েছে। কোনো কোনো হাদিসে রমজানের শেষ সাত দিনের কথাও এসেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Kamal Pasha Jafree ১৪ মে, ২০২০, ১:৪৩ এএম says : 0
    মূল কথা হলো, শেষ দশকের সব রাতেই যথাসম্ভব বেশি বেশি ইবাদত করা চাই। বিশেষত শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে রমজানের অন্যান্য রাতের তুলনায় বেশি বেশি ইবাদত, নফল নামাজ, তাসবিহ-তাহলিল ও কোরআন তেলাওয়াত করা চাই।
    Total Reply(0) Reply
  • Iftikhar Bappy ১৪ মে, ২০২০, ১:৪৩ এএম says : 0
    শবেকদরের একটি বিশেষ আমল হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, “আমি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করেছি, ‘হে আল্লাহর রাসুল! যদি আমি শবেকদর পেয়ে যাই, তবে আল্লাহর কাছে কী দোয়া করব?’ রাসুল (সা.) বলেন, ‘এই দোয়া পড়বে—আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি।” অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাকারী এবং আপনি ক্ষমা করা পছন্দ করেন। সুতরাং আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Amin ১৪ মে, ২০২০, ১:৪৩ এএম says : 0
    রমজানের প্রথম দুই দশকেরও বিশেষ গুরুত্ব ও ফজিলত আছে। তবে শেষ দশকের গুরুত্ব ও ফজিলত আরো অনেক গুণ বেশি। কেননা এ দশকেই রয়েছে পবিত্র শবেকদর। শবেকদর হাজার মাস অপেক্ষাও উত্তম।
    Total Reply(0) Reply
  • Kausar Ahmed Chowdhury ১৪ মে, ২০২০, ১:৪৪ এএম says : 0
    শেষ দশকের ইতিকাফের গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইতিকাফ করেছেন, সাহাবায়ে কেরামও করেছেন, তাই আমাদের জন্যও ইতিকাফ করা সুন্নাত। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘ইন্তেকাল পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করেছেন, এরপর তাঁর স্ত্রীরাও ইতিকাফ করেছেন।’ (বুখারি, হাদিস : ১৮৬৮; মুসলিম, হাদিস : ২০০৬)
    Total Reply(0) Reply
  • জহিরুল ইসলাম ২৩ এপ্রিল, ২০২২, ৮:৪৯ এএম says : 0
    ইতিকাফ সম্পর্কিত উপরোক্ত আলোচনাদি আমার খুবই ভালো লেগেছে। আশাকরি, সকলের উপকারে আসবে।
    Total Reply(0) Reply
  • জহিরুল ইসলাম ২৩ এপ্রিল, ২০২২, ৮:৪৯ এএম says : 0
    ইতিকাফ সম্পর্কিত উপরোক্ত আলোচনাদি আমার খুবই ভালো লেগেছে। আশাকরি, সকলের উপকারে আসবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন