বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মহানবী (সা:) বলেছেন, ‘দুনিয়া মোমেনদের জন্য কারাগার এবং কাফেরদের জন্য জান্নাতস্বরূপ।’ এবারকার পবিত্র রমজানে করোনা মহামারী মুসলিমসহ সমগ্র বিশ্ববাসীকে যেন কারাবন্দি করে রেখেছে।
যারা মৃত্যুর মিছিলসহকারে পরপারে চলে যাচ্ছেন, তারা চিরতরে দুনিয়া নামক কারাগার হতে মুক্তি লাভ করছেন। আর যাদের জন্য রমজান কারারূপ ধারণ করেছে, তাতে তাদের জন্য মুক্তির সুসংবাদও রয়েছে। মিথ্যাচার, জালিয়াতি, ভেজাল, মজুদদারি, পরনিন্দা, পিতা-মাতার নাফারমানি এবং মানবতার চরম সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে অসহায় দরিদ্র জনগোষ্ঠির জীবন রক্ষার জন্য সরকারের প্রদত্ত শত শত বস্তা চাল, ডাল, তেল ইত্যাদি চুরি, আত্মসাৎ এবং অন্যান্য নিত্যদ্রব্যসামগ্রী নিয়ে যারা কালোবাজারিতে লিপ্ত, তাদের অপরাধের পরিণতিতে, করোনা অভিশাপ হতে ভালো সৎমানুষদেরও মুক্ত হবার লক্ষণ ক্ষীণ।
হাজারো বৈশি^ক সঙ্কট, সমস্যার উপস্থিতিতে এবারের রমজান বহু উজ্জ্বল সম্ভাবনা নিয়ে হাজির। এ সৌভাগ্যময় মাস সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী। মুসলমানগণ এবার ঘরে থেকেই তাদের ফরজ রোজা পালন করছেন। রমজানের প্রথম দিকে অন্যান্য বছরের ন্যায় মসজিদে গমন করে জামাতে নামাজসহ তারাবীহ পড়তে পারেননি। অন্যান্য এবাদত-বন্দেগিও নিজ গৃহেই আদায় করতে হয়েছে। সরকারি নিষেধাজ্ঞাগুলো মেনে চলেই প্রত্যেক রোজাদার নিজ নিজ গৃহে এবাদত-বন্দেগি করার দুর্লভ সুযোগ পেয়েছিলেন। সকলের কর্মস্থল অফিস, প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি বন্ধ।
অপ্রত্যাশিতভাবে এবং করোনার অভিশাপ সংক্রমণ হতে রক্ষার স্বার্থে সকলের কর্মতৎপরতা নিজ নিজ গৃহে সীমাবদ্ধ ছিল। রমজানের জন্য সময় ব্যয় করার এক সুবর্ণ সুযোগ ছিল, যা এখনও শেষ হয়ে যায়নি। গত ৭ মে থেকে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে মসজিদে জামাত, তারাবীহ ও জুমাতে মুসল্লি সীমিত রাখার বিধি নিষেধ সরকার কর্তৃক তুলে নেয়ায় আবার মসজিদে নামাজ আদায় করার সুযোগ হয়েছে।
মনে রাখতে হবে, শরীয়তের দৃষ্টিতে যারা প্রকৃত রোজা রাখতে সক্ষম এবং রোজা পালনে আগ্রহী, করোনাভাইরাস তাদের রোজা পালনে প্রতিবন্ধক হতে পারবে না। তবে করোনা আক্রান্ত রোগী রোজা রাখতে পারবেন কিনা তা চিকিৎসকই বলে দেবেন। করোনা আক্রান্ত রোগীর অবস্থা অনুযায়ী চিকিৎসকের সিদ্ধান্তকেই চূড়ান্ত মনে করতে হবে।
মুসলিম দেশগুলোসহ দুনিয়ার যেখানে যেখানে মুসলমান ও তাদের মসজিদ রয়েছে, এবারের রমজান মাসের রোজা পালনে তাদের একই সমস্যার সম্মুখীন হওয়া অনেকটাই অবধারিত। ইসলামের ইতিহাসে এমন দুর্দিন সম্ভবত এটাই প্রথম। প্রত্যেক রোজাদারের জন্য নিজ নিজ গৃহ হবে সমগ্র কর্মকান্ডের কেন্দ্রস্থল। আল্লাহতাআলা সমগ্র বিশ্বমানবকে এই প্রাণঘাতী করোনা মহামারী হতে হেফাজত করুন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।