Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাজার জাটকায় ছয়লাব

চলতি মাসে অভিযানে নামছে মৎস্য অধিদফতর

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ৯ মে, ২০২০, ১২:০৩ এএম

বর্তমান করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে জেলা ও উপজেলা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যস্ত। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে এক শ্রেণির জেলে নির্দেশ অমান্য করে শত শত টন জাটকা ধরছেন। যা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে অবাধে বিক্রি হচ্ছে জাটকা। করোনার কারণে জাটকা সংরক্ষণে অভিযান পরিচলনা যখন বন্ধ ঠিক তখনেই এ কাজ করছে তারা। এ দিকে জাটকা নিধন ও বিক্রি বন্ধে চলতি মাসে অভিযানে মাঠে নামছে মৎস্য অধিদপ্তর।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম জানিয়েছেন, করোনার কারণে অভিযান বন্ধ রয়েছে। তারপরও আমরা মৎস্যজীবীদের জন্য কাজ করছি। আগামীতে আরও বড় ধরনের পরিকল্পনা নেবো। ইতোপূর্বে যেসব জেলে মানবিক এই সহায়তা পাননি, এ বরাদ্দ বিতরণের ক্ষেত্রে তাদের অগ্রাধিকার দেয়ার নির্দেশ দিয়েছি। তিনি বলেন, জাটকা নিংরক্ষণ অভিযান ১৬ মে নতুন করে শুরু হবে। বাজার প্রচুর পরিমান মাছ, গোশত ও ডিম রয়েছে। কোটাই সঙ্কট নাই।
মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী শামস আফরোজ ইনকিলাবকে বলেন, করোনার কারণে কিছুটা হলেও অভিযান রয়েছে। তবে সেটা কোস্টগার্ড, সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন, জেলা মৎস্য কর্মকর্তারা করছেন। তরে ১৬ মের পরে বড় আকারে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ১০ ইঞ্চির ছোটো সাইজের ইলিশ যাকে জাটকা নামেই চেনে সাধারণ মানুষ তা ১ নভেম্বও থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ে ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এসময়ে জাটকা ধরা, বিক্রি, মজুত ও পরিবহন করলে সর্বোচ্চ দুই বছরের সশ্রম কারাদন্ড অথবা ৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে।
প্রশাসনের কঠোর অভিযান না থাকায় প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক জাটকা নিধন ও বিক্রি হচ্ছে। জাটকা ধরা নিষেধাজ্ঞা জারির শুরুর প্রথম দুদিনে অভিযান চললেও পরে তা অনেকটাই স্থিমিত হয়ে পড়ে। এই সুযোগে জেলেরা দলবলে নদীতে নামে জাল নিয়ে। তাদের দাবি, মাঠ পর্যায়ে মনিটরিংয়ের অভাব রয়েছে। নদীগুলোয় প্রশাসনের নজরদারিও নাই। এই সুযোগেই জাটকা ধরার প্রবণতা বেড়েছে। এভাবে জাটকা নিধন হলে ভরা মৌসুমে কাঙ্খিত ইলিশ পাওয়া কঠিন হবে।
একদিকে সরকারি সহায়তাও দেয়া হচ্ছে, অপরদিকে জাটকাও রক্ষা করা যাচ্ছে না। সরকারের লোকসান উভয় দিক থেকে। এমনটাই জানালেন জেলা পর্যায়ের একজন মৎস্য কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যস্ত জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। একইসঙ্গে ব্যস্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও। তাই নদীতে এই সময় জাটকা সংরক্ষণে অভিযান পরিচলনা করা সম্ভব হচ্ছে না। সবাই ব্যস্ত করোনা সংক্রামন ঠেকানোর কাজে। আর কোস্টগার্ডের একার পক্ষে এতবড় এলাকা দেখে রাখা সম্ভব নয়।
দেশে করোনাভাইসের সংক্রমণের কারণে সব মানুষকে ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতসহ অসহায় দুর্গতদের খাদ্য সহায়তা দেয়ার কাজে ব্যস্ত। তখন কোস্টগার্ড, সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে এক শ্রেণির জেলে নির্দেশ অমান্য করে শত শত টন জাটকা জালে ধরছে। যা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে অবাধে বিক্রি হচ্ছে জাটকা।
করোনার প্রাদুর্ভাব চলাকালেই ৬৭৬ কোটি ২১ লাখ ৫ হাজার টাকা মূল্যের কারেন্ট জাল জব্দ করেছে বাংলাদেশ নৌ পুলিশ। একইসঙ্গে শত শত টন জাটকাও জব্দ করা হচ্ছে। তারপরও শত শত টন জাটকা প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হচ্ছে।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে যাতে ধরা না পড়েন সেজন্য মাছ বিক্রেতারা ক্রেতাদের কাছে এগুলোকে জাটকা হিসেবে স্বীকার না করে বলেন ‘চাপিলা’। প্রতি কেজি জাটকা বিক্রি হয় দুশ’ থেকে আড়াইশ’ টাকায়। আর একেক কেজিতে জাটকা ওঠে ৪৫ থেকে ৫৫টি! অথচ দেশে এখন জাটকা সংরক্ষণের সময় চলছে। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা ধরা বা আহরণ ও বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে সরকার।
জেলেদের জাটকা আহরণে বিরত রাখতে সরকারি তালিকাভুক্ত ৩ লাখ ১ হাজার ২৮৮টি জেলে পরিবারকে প্রতিমাসে ৪০ কেজি হারে চাল সহায়তা দিয়ে আসছে। এছাড়া জাটকা ধরা থেকে বিরত রাখতে দেশের ২০ জেলার ৯৬টি উপজেলায় ২৪ হাজার ১০৩ টন ভিজিএফ চাল বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। আগামী দুই মাস এ সহায়তা পাবেন তারা। এ তালিকার বাইরে থাকা জেলেরাও পাচ্ছেন এই সহায়তা। তার পরও বাজারে এত জাটকা আসছে কোত্থেকে? এই জাটকা কারা ধরছে?
রাজধানীর মোহাম্মদপুর কাটাসুর নামারবাজারের মাছ বিক্রেতা রহমত আলী ইনকিলাবকে বলেন, রাজধানীর বুড়ীগঙ্গার পারে এবং কোরানীগঞ্জ ঘাটের পার মাছের পাইকারি আড়ত থেকে প্রতিদিন সকালে জাটকা কিনে আনি। সেখানে খোলামেলাভাবেই পুলিশের সামনেই তো এগুলো বিক্রি হচ্ছে। কেউ কিছু বলেছে না। মাছগুলো বাজারে না এলে তো আমরা কিনতাম না। নদীতে ধরা বন্ধ করতে পারলে বাজারে জাটকা বিক্রি এমনিতেই বন্ধ হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাটকা

৫ মার্চ, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ