Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সরকারের সমালোচনা করায় গ্রেফতারকৃতদের মুক্তির দাবিতে ৩১১ নাগরিকের বিবৃতি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ মে, ২০২০, ১২:০৬ এএম

সরকারের সমালোচনা করায় গত কয়েক দিনে গ্রেপ্তার ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে বাড়ি থেকে যাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সবার সন্ধান ও মুক্তির দাবি জানিয়ে ৩১১ নাগরিক বিবৃতি দিয়েছেন।
বিবৃতিতে তারা বলেছেন, আমরা অত্যন্ত উদ্বেগ ও আতঙ্কের সঙ্গে লক্ষ করছি করোনাকালীন এই পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং মৌলিক অধিকার হরণের ঘটনা প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে এবং গুজব দমনের নামে এই সময়ে তা আরও জোরালো হয়েছে।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, এমিরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি; আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; শহিদুল আলম, আলকচিত্রী ও লেখক; বদিউল আলম মজুমদার, সম্পাদক, সুশাসনের জন্য নাগরিক। স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, লেখক, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মী, শিক্ষার্থী, এক্টিভিস্ট, গবেষক, রাজনৈতিক কর্মী, স্বেচ্ছাসেবী, উন্নয়নকর্মী, চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন পেশার ব্যক্তিবর্গ রয়েছেন।
বিবৃতিতে তারা বলেন, মুশতাক আহমেদ রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ফেসবুকে সমালোচনামূলক লেখালেখি করতেন। দিদারুল ভুঁইয়া অনলাইনে লেখালেখির পাশাপাশি করোনা সংকটের সময়ে শ্রমজীবী মানুষকে সহায়তা দিচ্ছিলেন। আর আহমেদ কবির কিশোর ফেসবুকে কার্টুন আঁকতেন। গত ৪ ও ৫ মে তাদেরকে র‍্যাবের পরিচয়ে বাড়ি থেকে তুলে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ সময়ে তাদের কম্পিউটারের সিপিইউ, ল্যাপটপ, বাসার সিসিটিভি সরঞ্জাম কোন তালিকা প্রদান ছাড়াই জব্দ করা হয়।
৬ মে গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, করোনাভাইরাস নিয়ে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে কিশোর, মুশতাক ও মিনহাজকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। রমনা থানায় র‍্যাব বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছে এদের বিরুদ্ধে। এই মামলায় আরও ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়েছে এবং গ্রেপ্তারের চেষ্টা হচ্ছে।
তারা আরও বলেন, প্রায় দুই মাস নিঁখোজ থাকার পর ফটো সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের সন্ধান পাওয়ার পর দিন থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়া সাদা পোশাকধারীদের দ্বারা তুলে নিয়ে যাবার অনেকগুলো ঘটনা আমাদেরকে উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ করেছে। আমরা অত্যন্ত উদ্বেগ ও আতঙ্কের সঙ্গে লক্ষ করছি যে, করোনাকালীন এই পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং মৌলিক অধিকার হরণের ঘটনা প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে এবং তা এই সময়ে আরও জোরালো হয়েছে গুজব দমনের নামে।
সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি গ্রেপ্তারের ঘটনা তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, গত ৫ মে দুপুরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন বাজার থেকে মোমেন প্রধানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, টাঙ্গাইল-২ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান মনিরের একটি ভিডিও ফেসবুকে শেয়ার করার ‘অপরাধে’। একইভাবে গত ১৫ মার্চ গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার চুপাইর গ্রামে সাদা পোশাকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় দিয়ে সরকারি কলেজের শিক্ষক মোতাহার হোসেনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত তার কোন সন্ধান মেলেনি। চলতি মাসেই এ পর্যন্ত কমপক্ষে পাঁচ জন সংবাদকর্মীকে ডিজিটাল আইনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভিন্ন মতের নেতা-কর্মী, আইনজীবী, শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার ও তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করার গতি যেন কিছুতেই কমছে না।
‘ইতোমধ্যে করোনাভাইরাস সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখার কারণে তিন জন সরকারি কলেজের শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে করোনা সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশের কারণেও তদন্ত চলছে। অনেক চিকিৎসক ও নার্সদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আবার গত ১০ মার্চ রাজধানীর হাতিরপুল এলাকা থেকে ফটোসাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল নিখোঁজ হওয়ার ৫৩ দিন পরে তাকে যশোরের বেনাপোল সীমান্তে পাওয়া যাওয়ার পরে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে এ ধরনের গুম, অপহরণ, হেফাজতে নির্যাতন এবং অনেক ক্ষেত্রে বিচার বহির্ভূত হত্যার অভিযোগ ক্রমাগত স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ার প্রবণতায় আমাদের রাষ্ট্রে আইনের নাজুক শাসন ও নিয়মিত অপব্যবহার এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় আমরা ভীষণ আশংকাগ্রস্ত এবং বিক্ষুব্ধ।’
এই পরিস্থিতিতে সরকারের কাছে ছয়টি দাবি জানিয়েছেন তারা: অবিলম্বে দিদারুল ভুঁইয়াকে খুঁজে বের করে সুস্থ অবস্থায় ফেরত চাই। মোতাহার হোসেন, মাইকেল চাকমাসহ এ যাবত গুম হওয়া সকল ব্যক্তির সন্ধান চাই। শফিকুল ইসলাম কাজল, মুশতাক আহমেদ, আহমেদ কবির কিশোর, মোমেন প্রধানের নামে হয়রানিমূলক মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার ও তাদের নিঃশর্ত মুক্তি চাই। অনলাইনে ও মিডিয়ায় মত প্রকাশের দায়ে গ্রেপ্তারকৃত সকলের মুক্তি চাই। গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের অবসান চাই, সকল নাগরিকের নিরাপদ জীবনের নিশ্চয়তা চাই। নিবর্তনমূলক জনবিরোধী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর বাতিল চাই।



 

Show all comments
  • Mujib Khan ৭ মে, ২০২০, ১:১৮ এএম says : 0
    ধিক্কার জানাই?
    Total Reply(0) Reply
  • Md Faruk Md Faruk ৭ মে, ২০২০, ১:১৮ এএম says : 0
    জারা সমালোচনা করেছিল তা থেকে শিখার কিছুছিলো।বোঝেনা শিক্ষিত সমাজ।
    Total Reply(0) Reply
  • Imrul Hossin Milon ৭ মে, ২০২০, ১:১৮ এএম says : 0
    যারা সমালোচনা করে তাদের ও গ্রেপ্তার করা দরকার
    Total Reply(0) Reply
  • Abdul Kader ৭ মে, ২০২০, ১:১৯ এএম says : 0
    এত ভয়ঙ্কর মহামারীর মধ্যেও কিভাবে যে লোকজনকে গুম করে খুন করে নির্যাতন করে? মানে হয় করোনাভাইরাস টা হলো ওনাদের পাপের ফসল আল্লাহ তুমি আমাদেরকে হেফাজত করো সবাই ঘরে থাকুন সুস্থ থাকুন?
    Total Reply(0) Reply
  • Mohamed Rabiul Hassan ৭ মে, ২০২০, ১:১৯ এএম says : 0
    Apnara o safe e thaiken kobe jeno abr apnder ke arrest kore bibriti bewar jonno
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Shah Alam Khan ৭ মে, ২০২০, ৭:১৫ এএম says : 0
    উপরের খবরে প্রকাশ ৩১১ জন নাগরিক বিভ্রান্তমূলক সংবাদ প্রাচারের দায়ে কয়েকজন সংবাদকর্মীদের আটকের প্রতিবাদে বিবৃতী প্রদান করেছেন। ওনাদের বক্তব্য হচ্ছে এসব সংবাদকর্মীরা সরকারের সমালোচনা করার জন্যেই তাদেরকে আটক বা গুম করেছে। এখন কথা হচ্ছে এনারা কি সত্যই সরকারের বিরুদ্ধে বৈধভাবে মানে আইন সঙ্গত উপায়ে সমালোচনা করেছিল নাকি মিথ্যা বিষয়ের উপর সরকারকে দোষারুপ (ওনাদের দাবী সমালোচনা) করে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছিল। এখানে যেসব নাগরিক স্বাক্ষর করেছেন ওনারা কারা ওনাদের রাজনৈতিক পরিচয় কি??? নিন্দুকেরা বলছেন এনারা হচ্ছেন অপশক্তির পক্ষের কিছু বুদ্ধিজিবী ও রাজনৈতিক (অপশক্তির সমর্থিত দলের) সমর্থকরাই নাকি স্বাক্ষর করেছেন। যারাই অভিযোগ করেছেন তাদের বক্তব্য অবশ্যই সরকারের বিরুদ্ধে ধারালো বক্তব্য, তবে নিন্দুকেরা বলছেন সরকারের দিক থেকে বিবেচনা করলে এসব বক্তব্যের কোনই মূল্য নেই কারন র্যা ব বলেছেন তাদের প্রচারের লিঙ্ক এজাহারের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে। এখন এটা নিয়ে আমরা অলোচনা সমালোচনা করতে পারবো কিন্তু এর কোন সুরাহা হবে না আদলত ছাড়া। আল্লাহ্‌ আমাকে সহ সবাইকে মানুষের চাতুরতা বুঝার ও জানার ক্ষমতা দান করুন। আমিন
    Total Reply(0) Reply
  • মতামত ৭ মে, ২০২০, ৮:৫৯ এএম says : 0
    সোশ্যাল মিডিয়ায় বাংলাদেশের কোনো লোকাল বিষয় পোস্ট দিলে গ্রেপ্তার করা ঠিক আছে.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সরকার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ