পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
করোনাভাইরাসের কারণে যেসব গার্মেন্ট শ্রমিক কাজে যোগ দিতে পারেননি বা কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন তারা বেতনের ৬৫ শতাংশ পাবেন। আর যারা কাজে যোগ দিয়েছেন তারা শতভাগ বেতনই পাবেন।
সোমবার (০৪ মে) রাজধানীর বিজয়নগরে শ্রম ভবনে পোশাক কারখানা মালিক, শ্রমিক এবং শ্রম মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান, বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক, বিকেএমইএর সভাপতি সেলিম ওসমান, শ্রমিক নেতা শাহজাহান খান, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী, সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ, আন্তর্জাতিক শ্রমিক জোট ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিলের (আইবিসি) চেয়ারম্যান হেদায়েতুল ইসলাম, মহাসচিব চায়না রহমান, শ্রমিকনেতা বাবুল আক্তার, নাজমা আক্তার, সালাউদ্দিন স্বপন।
করোনা ভাইরাসের কারণে সরকারি সাধারণ ছুটি ও লকডাউনে অনেক কারখানায় কাজ করছেন পোশাক শ্রমিকরা। আবার অনেক শ্রমিক গ্রামে আছেন তারা গণপরিবহন বন্ধ থাকায় কাজে যোগ দিতে পারেননি। এমন পরিস্থিতিতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, অনুপস্থিত শ্রমিকরা বেতনের ৬৫ শতাংশ পাবেন, আর উপস্থিতরা পাবেন শতভাগ। এপ্রিল মাসের বেতন পাবেন ৬০ শতাংশ। বাকি ৫ শতাংশ মে মাসের বেতনের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে।
তবে শ্রমিক প্রতিনিধিরা বলেন, সরকারের সাধারণ ছুটিতে সরকারি এবং অন্য খাতের কর্মচারীরা শতভাগ বেতনই পাচ্ছেন, তাই পোশাক শ্রমিকদেরও শতভাগ বেতন দিতে হবে।
যদিও বৈঠক শেষে শ্রমিকদের ৬৫ শতাংশ বেতন দেয়ার এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে মালিক এবং শ্রমিক উভয়পক্ষের প্রতি আহ্বান জানান শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান। চলতি মে মাসের বেতন এবং ঈদ বোনাস নিয়ে আগামী ১০ই এপ্রিল আরেকটি বৈঠক হবে বলেও জানান শ্রম প্রতিমন্ত্রী।
বৈঠক শেষে শ্রমিকনেতা আমিরুল হক আমিন বলেন, আইবিসির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত এপ্রিলে কারখানা বন্ধকালীন শ্রমিকদের ৬০ শতাংশ মজুরি দেয়ার পূর্বের সিদ্ধান্তটি থেকে মালিকেরা সরে এসেছেন। তারা এখন ৬০ শতাংশের পরিবর্তে ৬৫ শতাংশ মজুরি দেবেন। এ ছাড়া আমরা কারখানা লে-অফ প্রত্যাহার করা, শ্রমিক ছাঁটাই না করা ও ছাঁটাইকৃত শ্রমিকদের পুনর্বহালের দাবি করেছি। মালিকেরা সেটিও মেনে নিয়েছেন।
বিকেএমইএর প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ৬০ শতাংশের পরিবর্তে ৬৫ শতাংশ মজুরি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে সেটি মে মাসের মজুরির সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। কারণ ইতিমধ্যে কারখানা বন্ধকালীন ৬০ শতাংশ মজুরি দিতে সব সদস্যকে নির্দেশ দিয়ে দিয়েছি। নতুন করে আবার সিদ্ধান্ত দিলে জটিলতা তৈরি হবে।
এর আগে গত ২৮ এপ্রিল সরকার-মালিক-শ্রমিক ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়, এপ্রিল মাসে কারখানা বন্ধের সময়ে শ্রমিক-কর্মচারীরা মোট মজুরির ৬০ শতাংশ অর্থ পাবেন। আর যে কদিন কর্মদিবস ছিল সে কদিনের পূর্ণ মজুরি পাবেন তারা। পরদিন কয়েকটি শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করে সেটি চূড়ান্ত করে শ্রম মন্ত্রণালয়। তবে সেই বৈঠক বর্জন করে শতভাগ মজুরি দেয়ার দাবি করেন আইবিসির নেতারা। পরে বিষয়টি নিয়ে বিজিএমইএর নেতারা তাদের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করেন। সেই ধারাবাহিকতায় আজকের সভাটি হয়েছে। মূলত আইবিসির সঙ্গে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ থাকায় তাদের দাবি গুরুত্বসহকারে নিয়ে থাকে মালিকপক্ষ।
এদিকে বিকেএমইএ ২মে ও বিজিএমইএ ৩মে তাদের সদস্য কারখানাগুলোকে শ্রমিকদের ৬০ শতাংশ মজুরি দিতে নির্দেশনা দিয়েছে। শ্রমিকের মজুরির বিষয়ে একক কোনো সিদ্ধান্ত না নিতে সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছে উভয় সংগঠন। এর ফলে কোনো কারখানা ৬০ শতাংশের বেশি দিতে চাইলেও পারবে না।
বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, সবাইকে এক জায়গায় রাখার জন্যই সিদ্ধান্তটি নেয়া হয়েছে। হঠাৎ করে কোনো কারখানায় ভিন্ন উদাহরণ তৈরি হলে আশপাশের কারখানায় শ্রম অসন্তোষ তৈরি হবে। অতীতে বহুবার এমন ঘটনা দেখা গেছে। তাই সরকার-মালিক-শ্রমিকপক্ষের সমঝোতায় সব কারখানার শ্রমিকদের ৬০ শতাংশ মজুরি দিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এদিকে মে মাস চলে এলেও গত মার্চের মজুরি পরিশোধ করেনি ৫১৪টি শিল্পকারখানা। শিল্প পুলিশ জানায়, সাভার-আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ময়মনসিংহ ও খুলনায় ৭ হাজার ৬০২টি শিল্পকারখানা রয়েছে। তার মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ৫১৪টি বেতন-ভাতা পরিশোধ করেনি। এগুলোর মধ্যে বিজিএমইএর সদস্য ৮৩, বিকেএমইএর ৬৯ ও বিটিএমএর ২২ সদস্য কারখানা রয়েছে। করোনার কারণে বন্ধ থাকা শিল্পকারখানা প্রতিদিনই খুলছে।
শিল্প পুলিশের তথ্যানুযায়ী, সাভার-আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ময়মনসিংহ ও খুলনায় ৭ হাজার ৬০২টি শিল্পকারখানার মধ্যে আজ সোমবার চালু ছিল ৩ হাজার ৪৩টি। তার মধ্যে বিজিএমইএর ১ হাজার ১৭৪, বিকেএমইএর ৩৩৫ ও বিটিএমএর ১৭১টি কারখানা রয়েছে। এসব এলাকায় বেপজার অধীনে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় (ইপিজেড) ৩৬৪ কারখানার মধ্যে ২৯৬টি আজ উৎপাদন চালিয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু পোশাক কারখানা রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।