বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
যেসব নৈতিক ও চারিত্রিক সৎকর্মের ওপর কোরআনে বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে তন্মধ্যে বদান্যতা ও দানশীলতাও একটি। এর অর্থ, আল্লাহ তায়ালা কোনো বান্দাকে যে ধন-সম্পদ, বিত্ত-বৈভব, শক্তি-সামর্থ্য ও নেয়ামত-আশীর্বাদ দান করেছেন তদ্দারা শুধু সে একাই উপকৃত হবে না; বরং আল্লাহর অন্যান্য বান্দাদের জন্যও তা ব্যয় করবে এবং তাদেরও উপকার করবে। সুতরাং এর পরিধি যে অতি ব্যাপক এবং আল্লাহর বান্দাদের সেবা ও সাহায্য-সহায়তার সমস্ত দিকই যে এর আওতায় এসে যায়, সেকথা বলাই বাহুল্য। অন্য অভাবগ্রস্তের জন্য নিজের সম্পদ ব্যয় করা, নিজের বিদ্যা-বুদ্ধি এবং জ্ঞান ও যোগ্যতার দ্বারা তাদের সেবা করা, নিজে কষ্ট সহ্য করে তাদের কাজ করে দেয়া এবং যে সাহায্যের সে মুখাপেক্ষী, নিজের উপায়-উপকরণের মাধ্যমে তা করে দেয়া এ সবকিছুই দান ও বদান্যতার শাখা-প্রশাখা বিশেষ।
কোরআন মাজীদ একে মৌলিক সৎকর্ম সাব্যস্তক্রমে বিভিন্ন শিরোনামে এর প্রতি তাকীদ দিয়েছে। সূরা বাকারার প্রথম রুক‚তে (যে অংশকে কোরআনের মুখবন্ধ বলাই যথার্থ) কোরআনী হেদায়াতে কল্যাণপ্রাপ্ত দলের মৌলিক যেসব গুণাবলী উল্লেখ করেছে, তার একটি হলো দান ও বদান্যতা। বলা হয়েছে, ‘আর আমি তাদের যা কিছু দান করেছি, তা থেকে তারা (আমার রাহে অন্যান্য বান্দাদের জন্যও) ব্যয় করে।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ৩)।
তাফসীরবিদগণ লিখেছেন, অর্থ-সম্পদ ও বিত্ত-বৈভব ছাড়াও আল্লাহ প্রদত্ত যে শক্তি-সামর্থ্য, শ্রম ও যোগ্যতা প্রভৃতি আল্লাহ তায়ালার বান্দাদের উপকারার্থে ব্যয় করা হবে, তা সবই এর অন্তর্ভুক্ত। অতঃপর এর সূরারই শেষ ভাগে এক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ, আমি যা কিছু তোমাদের দান করেছি, তা থেকে (আমার রাহে, অন্যদের জন্যও) ব্যয় কর (কেয়ামতের সেদিন আসার পূর্বে, যাতে না থাকবে কোনো বেচা-কেনা, না কোনো বন্ধুর বন্ধুত্ব, নাই বা সেদিন কারও কোনো সুপারিশ কাজে লাগবে।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ২৫৪)।
এরই তিন রুকু পর এ সূরা বাকারাতেই আল্লাহর রাহে নিজের ধন-দৌলত, শক্তি-সামর্র্থ্য ব্যয় করার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। এর উপকারিতা ও সওয়াব সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘আর যেসব উত্তম বস্তু-সামগ্রী (আল্লাহর বান্দাদের জন্য) তোমরা ব্যয় করবে, তার লাভ ও সওয়াব তোমাদের কাছেই পৌঁছাবে। বস্তুত তোমাদের ব্যয় আল্লাহর ওয়াস্তেই হওয়া উচিত। আর যেসব উত্তম বস্তু-সামগ্রীই তোমরা আল্লাহর রাহে ব্যয় করবে তোমরা তার পরিপূর্ণ বিনিময় প্রাপ্ত হবে; তোমাদের কোনো হকই বিনষ্ট করা হবে না।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ২৭২)।
দু’এক আয়াত পরে আবারো ইরশাদ হয়েছে, ‘যেসব বান্দা (আল্লাহর রাহে অন্যদের জন্য) নিজেদের সম্পদ ব্যয় করে রাতের বেলা ও দিনের বেলা গোপনে ও প্রকাশ্যে, তাদের জন্য তাদের পরওয়াদেগারের নিকট (জান্নাতে সেসব) প্রতিদান রয়েছে (যা সে দয়ালু পরওয়ারদেগারের মহিমার উপযোগী)। আর (তাদের অবস্থা হবে এই যে,) না তাদের কোনো ভয়-ভীতি থাকবে, না তারা চিন্তিত হবে।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ২৭৪)।
আল্লাহর রাহে অন্যান্য বান্দাদের জন্য নিজেদের বস্তুসামগ্রী ব্যয়ে উৎসাহ দান প্রসঙ্গে কোরআন আরও একটি কথা বলেছে যে, এ পথে ব্যয়কারী যতই ব্যয় করবে আল্লাহর পক্ষ থেকে এর শতগুণ তাকে দেয়া হবে। সুতরাং বলতে গেলে এ পথে ব্যয় করা অত্যন্ত লাভজনক এক ব্যবসা এবং এমন এক কৃষি, যা থেকে একেকটি বীজের পরিবর্তে কৃষক শতশত এমনকি হাজার দানা লাভ করবে।
করোনা মহামারী চলমান অবস্থাতেই আমাদের মাঝে রমজান মাস এসেছে। যে মাসে কোনো নেক আমল করলে অন্য যে কোনো মাসের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। আমাদের চারপাশের অভাবি ও বিপর্যস্ত মানুষের মাঝে দান করার এই সুবর্ণ সুযোগ কারোরই হাত ছাড়া করা উচিত নয়। তাই আসুন আমরা আমাদের দানের হাত প্রসারিত করি। হাসি ফুটে উঠুক অসহায় মানুষের চোখে। খাবার উঠুক অনাহারীর মুখে। নিজে ভালো থাকার পাশাপাশি সবাইকে ভালো রাখার চেষ্টা করি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।