Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রমজান সহানুভূতি ও সহমর্মিতার মাস

মাওলানা মুনশী মুহাম্মাদ মহিউদ্দিন | প্রকাশের সময় : ৪ মে, ২০২০, ১২:০৩ এএম

মাহে রমজান তাকওয়া অর্জনের মাস। সহমর্মিতার মাস। প্রতি বছরই সংযম ও নেক আমলের বার্তা নিয়ে এ মাসের আগমন ঘটে। এ মাসের প্রতিটি দিনই সাহরি, ইফতার, তারাবিহ, নফল নামাজ, তিলাওয়াত, যিকির-আযকার ও দান-খয়রাতের মতো বহুবিধ ইবাদতের সমাহার। আর তাই এ মাসে মুসলমানদের দৈনন্দিন রুটিন, আমলের প্রস্তুতি, আমলের উপলক্ষ ও নেক কাজের আগ্রহ বরাবরই একটু ভিন্ন হয়ে থাকে। পাশাপাশি এ মাসের অনিবার্য বিষয় যেহেতু, শারীরিক অবসাদ ও ক্লান্তিবোধ, যা রোজার দীর্ঘ উপবাসের কারণে হয়ে থাকে- তাই এ সময় অন্যের একটু সহায়তা ও সহমর্মিতা খানিকটা হলে স্বস্তি এনে দিতে পারে রোজাদারের মনে।

সুতরাং বরকতপূর্ণ এই মাহে রমজানে রোজা ও অন্যান্য ইবাদতে বরকত লাভের একটি অনিবার্য অনুষঙ্গ হচ্ছে, পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতা। তাছাড়া পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতা একটি স্বতন্ত্র নেক আমলও। বলা বাহুল্য, মাহে রমজানে এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য অন্যান্য ইবাদতের মতই বহু গুণে বৃদ্ধি পায়। নেককাজ ও তাকওয়া অর্জনের ক্ষেত্রে অন্যের সহায়তা ও সহযোগিতা করা সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে- ‘তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে একে অন্যকে সহযোগিতা করবে। গুনাহ ও যুলুমের কাজে একে অন্যের সহযোগিতা করবে না। আল্লাহকে ভয় করে চলো। নিশ্চয়ই আল্লাহর শাস্তি অতি কঠিন।’ (সূরা মায়েদা : ২)।

হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে- ‘যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের পার্থিব কষ্টসমূহের একটি দূর করে দেয়, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তার একটি কষ্ট দূর করে দেবেন। যে ব্যক্তি কোনো অভাবির অভাবের কষ্ট লাঘব করে, আল্লাহ তাআলা তার দুনিয়া ও আখেরাতের অভাবের কষ্ট লাঘব করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের দোষ গোপন রাখবে, আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখেরাতে তার দোষ গোপন রাখবেন। আল্লাহ তাআলা বান্দার সহায়তায় থাকেন, যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সহায়তায় থাকে।’ (সহীহ মুসলিম : হাদিস ৩৮)।

আরেক হাদিসে এসেছে- ‘তোমাদের মধ্যে যে তার ভাইয়ের উপকার করার সামর্থ্য রাখে, সে যেন তা করে।’ (সহীহ মুসলিম : হাদিস ৬১)। ‘শুআবুল ঈমান’ ও ‘সহীহ ইবনে খুযাইমা’র এক রেওয়ায়েতে রমজান মাস সম্পর্কে এসেছে- (রমজান মাস) সহানুভ‚তি ও সহমর্মিতার মাস। (শুআবুল ঈমান : হাদিস ৩৩৩৬; সহীহ ইবনে খুযাইমা : হাদিস ১৮৮৭)। কোরআন ও সুন্নাহর বাণীগুলো এ বিষয়ে সুস্পষ্ট যে, নেক কাজে মুসলিম ভাইয়ের সহযোগিতা করা অনেক বড় নেক আমল। আল্লাহ তাআলা নিজেই এর আদেশ করেছেন এবং আল্লাহ তাআলা সহায়তাকারীর সাহায্যে থাকার সুসংবাদ দিয়েছেন। আর তা যদি হয় মাহে রমজানে! রোজাদারের সহযোগিতা করার কারণে! তাহলে তো ‘নূরুন আলা নূর’। বিশেষত পৃথিবীর এক সঙ্কটকালে রমজান আমাদের মাঝে এসেছে। যেখানে সহযোগিতা ও সহমর্মিতাই পারে সুন্দর একটি পৃথিবী উপহার দিতে।

নেক কাজে মুসলিম ভাইয়ের সহযোগিতা, বিশেষভাবে রোজাদারের সহযোগিতা একটি বিশাল ও বিস্তৃত অধ্যায়। এখানে শুধু রোজাদারের সহযোগিতার কয়েকটি আঙ্গিক ও দিক সংক্ষিপ্তাকারে পেশ করা হলো। আল্লাহ তাআলা আমাদের এগুলোর ওপর আমল করে রমজানের বরকতকে বহুগুণে বাড়িয়ে নেয়ার তাওফিক দান করুন। আমীন।



 

Show all comments
  • মরিয়ম বিবি ৪ মে, ২০২০, ১:২৬ এএম says : 0
    মোত্তাকি সেই ব্যক্তিকে বলা হয়, যিনি সংযমের জীবনযাপন করে। লাগামহীন জীবনযাপন যার অভ্যাস নয়। সংযমের জীবনে অভ্যস্ত করার জন্যই আল্লাহতায়ালা আমাদের ওপর এক মাসের সিয়াম সাধনা ফরজ করেছেন।
    Total Reply(0) Reply
  • মশিউর ইসলাম ৪ মে, ২০২০, ১:২৬ এএম says : 0
    মাহে রমজানের এক মাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে বান্দা সংযমের প্রশিক্ষণ নেয়। আর এটা সম্ভব হয় একে অন্যের প্রতি সহমর্মিতার চর্চার মাধ্যমে।
    Total Reply(0) Reply
  • জোবায়ের আহমেদ ৪ মে, ২০২০, ১:২৭ এএম says : 0
    পবিত্র রমজান সহমর্মিতা চর্চারও মাস। সন্দেহ নেই— ধৈর্য, সহনশীলতা, তাকওয়া অর্জনই সিয়াম সাধনার মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু এসবের বাইরেও রোজার বড় একটা উদ্দেশ্য হলো, মানব জাতিকে সহানুভূতি-সহমর্মিতার অনুপম শিক্ষা প্রদান করা। ইসলামে সাম্য-মৈত্রীর যে নান্দনিক দর্শন রয়েছে, সিয়াম সাধনার মাধ্যমেই মূলত এর বাস্তবায়ন হয়ে থাকে।
    Total Reply(0) Reply
  • কায়সার মুহম্মদ ফাহাদ ৪ মে, ২০২০, ১:২৭ এএম says : 0
    রমজান যেমন বান্দার প্রতি মহান আল্লাহর রহমত বা দয়াকে আকর্ষণ করে, ঠিক তেমনি এক বান্দার প্রতি অপর বান্দার, এক মানুষের প্রতি অপর মানুষের অন্তরে মমত্ব, সহানুভূতি, দয়া, ভালোবাসার উপলক্ষ সৃষ্টি করে।
    Total Reply(0) Reply
  • সাইফুল ইসলাম চঞ্চল ৪ মে, ২০২০, ১:২৭ এএম says : 0
    সংযম সাধনার এ মাসে ক্ষুধা ও পিপাসার প্রকৃত অনুভূতির মাধ্যমে বিত্তবান-সচ্ছল রোজাদার মানুষ দরিদ্র ও অভাবী মানুষের না খেয়ে থাকার কষ্ট বুঝতে সক্ষম হন। এ উপলব্ধির আবেশেই বিত্তশালী ব্যক্তি সহানুভূতি ও সহমর্মিতা নিয়ে অন্যের পাশে দাঁড়ানোর স্বতঃস্ফূর্ত প্রেরণা বোধ করেন।
    Total Reply(0) Reply
  • কায়সার মুহম্মদ ফাহাদ ৪ মে, ২০২০, ১:২৮ এএম says : 0
    রমজান মানুষের ঘুমন্ত আত্মাকে জাগিয়ে তোলে। দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রেরণা জোগায়। নতুন উন্নত পোশাক পরিধান যাদের কাছে স্বপ্ন ছাড়া কিছু নয়, রমজানে বিত্তবান কর্তৃক সেই দরিদ্র্য শ্রেণির মানুষদের নতুন জামাকাপড় প্রদান এক অনিন্দ্য সুন্দর দৃশ্যের অবতারণা ঘটায়। ইসলামের নিষ্কলুষ সৌন্দর্য এখানেই
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন