Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রোহিঙ্গাদের পাঠানো হচ্ছে ভাসানচরে

বিশেষ সংবাদদাতা, কক্সবাজার | প্রকাশের সময় : ৩ মে, ২০২০, ১২:৫৪ পিএম

উখিয়া-টেনাফে আর নয় রোহিঙ্গা। এবার রোহিঙ্গাদের পাঠানো হবে ভাসানচরে। তবে প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গাদের একটি ছোট দলকে নেওয়া হচ্ছে ভাসানচরে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রে এমন তথ্যই জানা গেছে।

শুক্রবার (১ মে) মিয়ানমার থেকে দালালদের মাধ্যমে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় আটক প্রায় ৭০ রোহিঙ্গাকে প্রথমবারের মতো ভাসানচরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন গতকাল (২ মে) শনিবার সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের আর জায়গা দেওয়া সম্ভব নয়। এ কারণে যারা শনিবার এসেছে, তাদের ভাসানচরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটাই হবে রোহিঙ্গাদের প্রথম কোনো দল, যাদের ভাসানচরে পাঠানো হচ্ছে।

জানা গেছে, এই রোহিঙ্গারা প্রথমে মিয়ানমার থেকে দালালদের মাধ্যমে পালিয়ে বড় ট্রলারে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে তারা বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় প্রবেশের চেষ্টা করলে সে চেষ্টাও ব্যর্থ করে দেওয়া হয়।

এরপর রোহিঙ্গাদের বহনকারী ট্রলারটি মিয়ানমারের দিকে গিয়ে নতুন কৌশল হিসেবে ছোট ছোট দলে ভাগ করে ডিঙি নৌকা ধরে বাংলাদেশের সীমান্তে আসে। এক শ্রেণির বাংলাদেশি দালালই তাদের নিয়ে আসে। তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হয়েছে।

এই দালালদের পেছনে স্থানীয় কোনো কোনো এনজিওর ইন্ধন আছে বলে জানা গেছে। ডিঙি নৌকায় আসা ওসব রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে পাঠানো হচ্ছে।

আরো জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের নৌকায় করে বাংলাদেশে নিয়ে আসার জন্য স্থানীয় কোনো এনজিওর মাধ্যমে কক্সবাজার ক্যাম্প থেকেই মাথাপিছু ৮০/৯০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। তবে তারাও এনজিওর নাম বলতে পারেননি। এই কাজে জড়িত দালালরা বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার দালাল চক্রের সঙ্গে যুক্ত বলেও একাধিক সূত্রজানিয়েছে।

ওদিকে ৫ শত রোহিঙ্গাবাহী একটি ট্রলার কয়েকদিন ধরেই সমুদ্রে এখনো ভাসছে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা এই রোহিঙ্গাদের নেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি চাপ অব্যাহত রাখে। যদিও প্রথমে পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন যে নতুন করে রোহিঙ্গাদের নেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু পরে ওই ৭০ জনকে নিতে হলো।

এদিকে রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফ এলাকায় ব্যাপকভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। উখিয়া -টেকনাফের ৩৪ টি শিবিরে আশ্রিত রোহিঙ্গারা ইতিমধ্যে নানা ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। তারা মাদক পাচার, সন্ত্রাস,গুম- খুন অপহরণসহ স্থানীয় অধিবাসীদের হত্যা করতেও পিচপা হয়নি।

এ পর্যন্ত ৩ জন স্থানীয় অধিবাসী কে তারা হত্যা করেছে। এখনো রোহিঙ্গা ডাকাতদের হাতে অপহৃত দুই গ্রামবাসী উদ্ধার হয়নি। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে রোহিঙ্গা গ্রহণ করার জন্য জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থার আহবানে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। তারা গতকাল টেকনাফের মিনাবাজারে এর প্রতিবাদে এবং রোহিঙ্গা ডাকাতদের শায়েস্তা করার দাবিতে সড়ক অবরোধ করেছে। টেকনাফ থানার ওসিকেও তারা সেখানে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল।

এমনিতেই সরকার ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে এর ওপর নতুন করে আরও রোহিঙ্গা গ্রহণ করার চাপ বাংলাদেশের পক্ষে কিছুতেই সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে না।

এরই প্রক্ষিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন শনিবারও বলেছেন, বাংলাদেশের পক্ষে রোহিঙ্গা সংকটের চাপ আর বহন করা সম্ভব নয়। এটা উন্নত দেশগুলোর বোঝার কথা। তারা কেন অন্যান্য দেশকে রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করতে বলছেন না। তারা কেন শুধু বাংলাদেশকে চাপ দিচ্ছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান সংশ্নিষ্ট দেশ ও সংস্থাগুলোকে জানানো হয়েছে।

এর আগে সরকার নোয়াখালীর ভাসানচরকে রোহিঙ্গাদের বসবাসের উপযোগী করে তোলা হয়েছে। ৭০ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে পাঠানোর মাধ্যমে ভাসানচরে ব্যাপকভাবে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের কর্মসূচি এখনই শুরু হচ্ছে না। তবে নতুনভাবে আসা ৭০ জনকে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় সেখানে পাঠানো হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রো


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ