Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রমজানে দান-সদকা

খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ৩ মে, ২০২০, ১২:০৩ এএম | আপডেট : ১২:১০ এএম, ৩ মে, ২০২০

রমজান মাসব্যাপী রোজা পালনের মাধ্যমে রোজাদার নানা বিষয়ে অনুশীলন-চর্চার এক অপূর্ব সুযোগ লাভ করে থাকে। ভুখা-অনাহারে থাকার যে অভ্যাস সৃষ্টি হয় তা রোজাদারকে দরিদ্র অভাবীদের দুঃখ-কষ্ট অনুভব করার শক্তি দান করে। এর দ্বারা ফকির, মিসকিন ও অভাবিদের প্রতি দয়া-করুণা প্রদর্শন করার মন-মানসিকতা সৃষ্টি হয়।

কারণ রোজা রাখার ফলে কোনো কোনো সময় রোজাদার অভুক্ত উপবাস থাকার যে কষ্ট অনুভব করে থাকে তাতে অধিকাংশ সময় সেই অভাবি-অভুক্তদের অবস্থা স্মরণ হতে থাকে এবং তাদের প্রতি সহানুভ‚তিশীল হয়ে তাদেরকে দয়া, অনুগ্রহের দৃষ্টিতে দেখতে অভ্যস্ত হয়। রোজার আরও একটি উপকার এই যে, ফকির-মিসকিনদের অনুসরণে রোজাদারও তাদের ন্যায় কষ্ট ভোগ করে এবং এতে আল্লাহ তাআলার দরবারে তার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। এ সম্পর্কে একজন বুজুর্গের একটি ঘটনা উল্লেখযোগ্য।

আবু নসর বিশির হাফী (রহ.) (হিজরি ২২৭/৮৪১) একজন বিখ্যাত সুফী সাধক ছিলেন। তিনি বাগদাদে ইন্তেকাল করেন। তার বহু ভক্ত অনুসারী ছিলেন। তার সম্পর্কে কথিত আছে যে, একবার কড়া শীতের সময় এক ব্যক্তি তাঁর কাছে এমন সময় উপস্থিত হয় যে, তিনি বসে বসে শীতে কাঁপছিলেন এবং তার হাঁটুর ওপর কাপড় ঝুলছিল।
আগত লোকটি তাকে জিজ্ঞাসা করল, ‘এমন ভীষণ শীতেও আপনি শরীরে কাপড় রাখেননি কেন?’ হজরত বিশির হাফী (রহ.) বললেন, ‘এখানে ফকিরের সংখ্যা অধিক। কাপড় দ্বারা তাদের খবরগিরি করার শক্তি-সামর্থ্য আমার নেই। তাই আমি তাদের অনুসরণ করছি, তাদের ন্যায় কষ্ট ভোগ করার মাধ্যমে এবং তারা যেভাবে শীতের কষ্ট ভোগ করছে আমিও তাই করছি।’

এ কারণে দেখা যায়, আরেফীন ও আওলিয়ায়ে কেরাম খাওয়ার সময় প্রত্যেক লোকমায় বলতেন,‘আল্লাহুম্মা, লা তোওয়া খিজনি বিহক্কিল জায়েঈন’, অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ, ভুখাদের অধিকারের স্বার্থে আমার হিসাব চেও না।’ হজরত ইউসুফ (আ.) সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তাঁর বিপুল খাদ্যসামগ্রী থাকা সত্তে¡ও তিনি দুর্ভিক্ষের সময় তৃপ্তিসহকারে খাবার খেতেন না, যাতে অনাহারি-ভুখাদের ভুলে না যান এবং যাতে কষ্ট ভোগ করার ব্যাপারে তাদের মতো হতে পারেন।

মেশকাত শরীফে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণিত একটি হাদিসে বলা হয়েছে, তিনি বলেন, রমজান মাসের আগমন ঘটলে রসূলুল্লাহ (সা.) প্রত্যেক কয়েদীকে মুক্ত করে দিতেন এবং প্রত্যেক সায়েল বা ভিক্ষুককে দান করতেন। হুজুর (সা.) এমনিতেই সব সময়ই ভিক্ষুককে দান করতেন, আর রমজান মাসে এরূপ দানের মাত্রা অধিক বেড়ে যেত।

কয়েদিদের প্রতিও সহানুভ‚তি স্বরূপ রমজানের বিশেষ মাহাত্ম্যের কারণে কয়েদিদের মুক্ত করে দিতেন, যাতে তারাও রমজানের ফজিলতের ভাগী হয়ে আল্লাহর রহমত, মাগফিরাত, গুনাহ ও দোজখ হতে মুক্তি অর্জন করতে পারে। গরিব-মিসকিন ও কয়েদিদের প্রতি এই উদারতা ও সহানুভ‚তি প্রদশর্ণের মাধ্যমে রসূলুল্লাহ (সা.) বাস্তবে তাঁর উম্মতের জন্যও উত্তম শিক্ষা রেখে গেছেন।

দান-খয়রাতের ওপর রসূলুল্লাহ (সা.) বহু হাদিসে গুরুত্বারোপ করেছেন। রমজান মাসে এই মানবিক দিকটির প্রতি সকলের বিশেষভাবে দৃষ্টি দান করা উচিত। কেননা রোজা পালনের মাধ্যমে মুসলমানগণ কিছুটা হলেও গরিব-দুঃখীদের অভাব-কষ্ট অনুভব করতে পারেন।

এই দান-সদকা অবশ্যই হালাল উপায়ে অর্জিত হতে হবে, হারাম উপার্জনের হলে তা কোনো কাজে আসবে না, বরং পাপের কারণ হওয়ার আশঙ্কাই বেশি। কেননা আল্লাহ হালাল ব্যতীত হারাম কবুল করেন না।



 

Show all comments
  • মেহেদী ৩ মে, ২০২০, ১:৪৪ এএম says : 0
    ‘দানশীলতা’ মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেই একটি মহৎ গুণ। আর ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে তো কথাই নেই। কুরআন এবং হাদিসে দান-সদকার বহু আকর্ষিক ফজিলত রয়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • তোফাজ্জল হোসেন ৩ মে, ২০২০, ১:৪৪ এএম says : 0
    রমজানে দান-সদকার জন্য রয়েছে বিশেষ ফজিলত। যা ধর্মপ্রাণ এবং আর্থিক সামর্থ্যবান মুসলমানদের জন্য সুখকর সংবাদ।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ তোফায়েল হোসেন ৩ মে, ২০২০, ১:৪৪ এএম says : 0
    হাদিস শরীফে দেখা যায়, রমজান মাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যান্য মাসসমূহের তুলনায় অত্যধিক পরিমাণে দান-সদকা করতেন। আর এই দান-সদকার পরিমাণ এত বেশি ছিল যে, বাতাসের গতিবেগের চেয়েও তা দ্রুত গতিতে সম্পন্ন হতো! (বুখারী শরীফ : কিতাবুস সাওম)।
    Total Reply(0) Reply
  • জোহেব শাহরিয়ার ৩ মে, ২০২০, ১:৪৫ এএম says : 0
    সামর্থ্য থাকলে, কোনো এক হতদরিদ্র পরিবারের এক মাসের সাহরি ও ইফতারের দায়িত্ব নেই। এতে অঢেল সাওয়াব অর্জনের পাশাপাশি রমজান মাসের পবিত্র ভাব-গাম্ভীর্য চারদিকে ছড়িয়ে পড়বে।
    Total Reply(0) Reply
  • তরুন সাকা চৌধুরী ৩ মে, ২০২০, ১:৪৫ এএম says : 0
    আমরা ঈদের জন্য নতুন নতুন জামা-কাপড় সংগ্রহ করি। চাইলে এবারের ঈদে প্রতিবেশী কিংবা চেনা-জানা কোনো গরিবকে একটি নতুন জামা উপহার দিতে পারি। ফুটপাতে বসবাসকারী কোনো শিশুর মুখে হাসি ফোটাতে পারি।
    Total Reply(0) Reply
  • কায়সার মুহম্মদ ফাহাদ ৩ মে, ২০২০, ১:৪৫ এএম says : 0
    সমাজে সকল শ্রেণী সমভাবে রমজান কাটাতে পারবে আমাদের মুক্তহস্তে দানের মাধ্যমে। চলুন, দান-সদকায় অগ্রগামী হই। হই একজন অসহায় মানুষের চলন্ত সহযোগী।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন