পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনাভাইরাস সংক্রমন আতঙ্কে আমরা প্রায় সবাই মানসিক ভাবে উদ্বিগ্ন। আমাদের বেশীর ভাগ সময় অতিবাহিত হচ্ছে নিউজ চ্যানেল কিংবা বিভিন্ন উৎস থেকে করোনার সর্বশেষ আপডেট জেনে। করোনা সংক্রমন রোধে আমরা এখন বাড়িতে অবস্থান করছি। এ সময় নিজেকে কিভাবে শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ্য রাখতে হবে সে সম্পর্কে অবগত হওয়ার ও চেষ্টা করছি।
এমন পরিস্থিতিতে পরিবারে বা পরিচিত গন্ডির মধ্যে যেসব বয়ঃবৃদ্ধ ব্যক্তি রয়েছেন তারাও যেন মানসিক এবং শারীরিক ভাবে ভালো থাকেন সে দিকেও লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। সাধারণত জীবনের এ পর্যায়ে এসে বয়স্ক ব্যক্তিরা এক ধরনের হতাশাবোধ, অনিশ্চয়তা এবং শারীরিক বিভিন্ন অসুস্থতাজনিত কারনে কষ্ট পেতে থাকেন। এ অবস্থায় যখন পরিবারে প্রিয়জনদের তারা উদ্বিগ্ন অবস্থায় দেখতে পান তখন তারা ও উদ্বিগ্ন এবং অস্থির হয়ে পড়েন।
হোম কোয়ারেন্টিন এবং লকডাউন নির্দেশনা মেনে যারা এ অবস্থায় পরিবার েেথকে দূরে রয়েছেন তাদের জন্য পরিবারের সদস্যদের দুঃশ্চিন্তা করাটা খুব স্বাভাবিক। তাই পরিবারের অন্য সদস্যদের পাশাপাশি বয়স্ক ব্যক্তিদের বর্তমান অবস্থান এবং ভালো থাকার ব্যাপারে আশ^স্ত করা গুরুত্বপূর্ন। প্রয়োজনে তাদের কাছে জানতে চাওয়া বর্তমানে কি কি বিষয়ে দুঃশ্চিন্তা বা হতাশাবোধ তৈরী হচ্ছে ?
এ সময়ে বয়স্ক ব্যক্তিদের যেসব সমস্যা দেখা দিতে পারে- বারবার বিপদের চিন্তা হওয়া। ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে উৎকন্ঠা ও হতাশাবোধ তৈরী হওয়া। ঘনঘন মেজাজ পরিবর্তন এবং বিরক্ত বোধ করা বা অনেক বেশী মন খারাপ হওয়া। নার্ভাসনেসের কারনে হয়তো একই প্রশ্ন বারবার করা এবং ভুলে যাবার ঘটনা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে। মৃত্যু আতঙ্ক কাজ করতে পারে। ঘুমের সমস্যা ও পূর্বের শারীরিক সমস্যার আরো অবনতি হওয়ার আশঙ্কা এবং নতুন কোন রোগ দেখা দিতে পারে।
প্রবীণদের ভালোর জন্য যে বিষয়গুলো করা যেতে পারে- বয়স্কদের সামনে করোনা পরিস্থিতির অবনতি আলোচনা করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সর্বশেষ আপডেট যদি তারা জানতেও চান সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি বিবেচনা করে কিভাবে সচেতন থাকা যায় বা করোনা মোকাবেলায় কি কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে প্রভৃতি নিয়ে মিডিয়ায় যে আলোচনা হচ্ছে তা শেয়ার করা যেতে পারে। তবে অবশ্যই খবরগুলোর উৎস যেন যথার্থ হয়। অর্থ্যাৎ তাদের মানসিক প্রশান্তির কথা বিবেচনা করে প্রয়োজনে কোন নেতিবাচক সংবাদ শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
সুষম পুষ্টি ও পথ্য গ্রহণ মনিটর করা। তাদের প্রয়োজনীয় ওষুধ ও অনন্য জিনিসপত্র বাড়িতে পর্যাপ্ত রাখা এবং কোন চিকিৎসকের ফোন নাম্বার ও অনন্য জরুরি ফোন নাম্বারগুলো হাতের কাছে রাখা।
এখন যেহেতু বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে বাড়ির খোলা জায়গায় হাঁটা, পরিবারের শিশুদের সাথে খেলাধুলা, গল্প করা ও ধর্মীয় আচার পালনের মাধ্যমে তারা উদ্বিগ্নতা প্রশমন করতে পারেন। এছাড়া মানসিক প্রশান্তির জন্য তাদেরকে কোন বিশেষজ্ঞের নির্দেশনা অনুযায়ী রিল্যাক্সেশন বা শিথিলায়ন কৌশল শেখানো যেতে পারে। তবে যাদের শ্বাসকষ্ট সমস্যা রয়েছে সেক্ষেত্রে ব্রিদিং রিল্যাক্সেশন কৌশল প্রয়োগ করার আগে বিশেষজ্ঞের মতামত গ্রহণ করুন । বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ফোন এবং অনলাইন ভিত্তিক মনো-সামাজিক কাউন্সিলিং প্রদান করছে। প্রয়োজনে সেখান থেকে ও সহায়তা নেয়া যেতে পারে।
প্রবীণদের সেল্ফ কেয়ার স্কীল শেখানো যেমন : ঠিক ভাবে খেতে পারা ও সময় মত ওষুধ সেবন। ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার কাজগুলো সফল ভাবে করতে পারা ইত্যাদি প্রশংসা ও প্রনোদনার মাধ্যমে উৎসাহিত করা হলে তারা অনেকাংশে অবসাদগ্রস্থতা কাটিয়ে উঠতে পারেন।
জীবনের এ পর্যায়ে এসে অনেক প্রবীণ ব্যক্তির মধ্যে এক ধরনের মানসিক সঙ্কট দেখা দেয়। শারীরিক বিভিন্ন অসুস্থতা ও কর্ম থেকে অবসর গ্রহণের কারনে নিজেকে মূল্যহীন ভাবাসহ হীনমন্যতায় ভুগতে থাকেন। তাদেরকে এই মর্মে বুঝাতে হবে যে, তার অভিবাবক সুলভ উপস্থিতি এবং অভিজ্ঞতা পারিবারিক পরিবেশের জন্য প্রয়োজনীয় ও আনন্দদায়ক। তাই তারা পরিবারের জন্য আশীর্বাদ, বোঝা নয়।
প্রবীণদের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের সাথে ফোন বা অনলাইনের মাধ্যমে কথা বলিয়ে দিতে পারলে তাদের একাকিত্ববোধ অনেকাংশে কম হয়। যারা পরিবার থেকে এসময় দূরে অবস্থান করছেন তারা বৃদ্ধ মা-বাবা ও অনন্য প্রবীণ আত্মীয় অনাত্মীয়, পরিজনদের সাথে নিয়মিত কুশলাদি বিনিময় এবং যথাসম্ভব সহযোগীতা করলে তারা স্বস্তিবোধ করবেন এবং ভালো থাকবেন।
বার্ধক্য এসে একজন প্রফুল্ল ব্যক্তিও বিষন্ন হয়ে যান। আত্মবিশ^াসী থেকে হয়ে পরেন দ্বিধান্বিত সর্বোপরি একপ্রকার স্নায়বিক চাপ এসময়ে তার মধ্যে কাজ করতে পারে। অনেকে বিভিন্ন শিশুসুলভ আচরণও করতে পারেন। এসময় সর্বদা পরিবারের সাহচর্য, মনোযোগ ও ভালোবাসা প্রত্যাশা করতে থাকেন। বয়সের ভারে ন্যূজ এ মানুষদের শারীরিক কষ্ট হয়তো শেয়ার করা সম্ভব না। কিন্তু ভালো ব্যবহার, সেবা-যতœ এবং তাদের সাথে সুন্দর কিছু সময় কাটিয়ে তাদেরকে মানসিক ভাবে প্রফুল্ল রাখলে আমরা ও বোধ করি অনেক পূন্য ও প্রশান্তি লাভ করবো। আমরা ভালো রাখলেই তবে তারা ভালো থাকবেন।
লেখক : চিকিৎসা মোনবিজ্ঞানী, রিজিওনাল ট্রমা কাউন্সিলিং সেন্টার, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।