পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর গত কয়েক বছরে কারখানার সংস্কার ইস্যুতে বড় ধরণের অগ্রগতি হয়েছে। ফলে বিদেশি ক্রেতাদের আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। কিন্তু হঠাৎ করে বিশ্বব্যাপি করোনা মহামারীতে পোশাক রপ্তানির বড় বাজার ইউরোপ ও আমেরিকা ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত করে দেয়। করোনায় বাংলাদেশের ৩২০ কোটি ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়। আর এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দেশের প্রধান রপ্তানি খাতটি। তবে দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে এবং পোশাক খাতের মূল প্রতিযোগী ভিয়েতনাম ও চীন ইতোমধ্যে কারখানা খুলে দেওয়ায় ক্রেতাদের ধরে রাখতে কারখানা খুলতে বাধ্য হয়েছে দেশের গার্মেন্টস শিল্প। এক্ষেত্রে সব ধরণের স্বাস্থ্যবিধি মেনে গত ২৬ এপ্রিল থেকে কারখানা চালু রেখেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের এই দুর্যোগের সময়ে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে পোশাক কারখানা খোলার যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনিও পোশাক কারখানার বাতিল ও স্থগিত কার্যাদেশ যাতে আবার গার্মেন্টসগুলো ফিরে পায় সে প্রচেষ্টাও করছেন।
গতকালও সুইডেন প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছে বাংলাদেশের পোশাক খাতের কোনো অর্ডার বাতিল করবে না তারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে একথা বলেন সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী স্টেফ্যান লোফভেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে বলেন, সকল স্বাস্থ্য বিধি মেনে রফতানিমূখী পোশাক কারখানা খুলে দেয়া হয়েছে। এর আগে যুক্তরাজ্যের ক্রেতারা যাতে গার্মেন্টস খাতে বাংলাদেশে ক্রয়াদেশ বাতিল না করেন সে বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এম আব্দুল মোমেন যুক্তরাজ্যের সহযোগিতা চেয়েছেন। এমনকি ক্রয়াদেশ বজায় রাখার জন্য যুক্তরাজ্যকে বিশেষ ফান্ড গঠনের অনুরোধ করেছেন তিনি। একই সঙ্গে এই সঙ্কটে বিদেশি ক্রেতারা যেন তৈরি পোশাক খাতের পাশে থাকেন, সেজন্য মিশনগুলোকেও জানানো হয়েছে। ইউরোপ-আমেরিকার ক‚টনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, বাতিল হওয়া কার্যাদেশ ফিরিয়ে আনতে ইতিবাচক সহযোগিতার জন্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর ক‚টনীতিক, সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ চলছে। এছাড়া ক্রেতাদের অর্থ সহায়তা দিয়ে ক্রয়াদেশ ঠিক রাখার মাধ্যমে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর পোশাক শিল্পের ক্ষতি কমানোর পদক্ষেপ নিতে যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সংসদ সদস্য রুশনারা আলী। তিনি যুক্তরাজ্য সরকারকে সে দেশের ব্রান্ড বা বায়ারকে সহায়তার মাধ্যমে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। অপরদিকে দেশের তৈরি পোশাক খাতের ৩৭০ কোটি ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিতের বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশ^ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইএফসি বিশে^র ৪০টি উন্নয়ন অংশীদারি প্রতিষ্ঠান, পোশাক ব্র্যান্ড, কারখানা প্রতিনিধি ও আর্থিক মধ্যস্থতাকারীদের নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছে।
পোশাক শিল্প মালিকদের প্রত্যাশা, শিগগিরই করোনাভাইরাস সংকট কেটে যাবে। তখন তাদের তৈরি পণ্যের চাহিদা আবার আগের জায়গায় ফিরে আসবে। ভিয়েতনাম কারখানা খুলে দিয়েছে বা অন্য প্রতিযোগীরা খুলে দিলে তারা ক্রয়াদেশ ধরতে সমস্যায় পড়বেন। অসমাপ্ত কাজ শেষ করা ও নতুন কাজ ধরার জন্য এবং অর্থনীতির চাকা সচল রাখতেই সরকার ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা খুলছেন। পাশাপাশি গতকাল বিজেএমইএ ঢাকার বাইরে পোশাক শ্রমিকদের এখনই ঢাকায় আসার প্রয়োজন নেই। তাদের বেতন বাড়িতেই পৌঁছে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি।
তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, অর্থনীতি সচল রাখার স্বার্থে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যায়ক্রমে সব কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যেকোনও মালিক ইচ্ছে করলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তার কারখানা চালু করতে পারবেন। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি না মেনে একটি কারখানাও খোলা হবে না। একই সঙ্গে তৈরি পোশাক খাত নিয়ে বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে। অনেক ক্রেতাই বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছেন। রুবানা হক বলেন, এখন সবাই একসঙ্গে কাজ করলে ভবিষ্যতে সুন্দর অর্থনীতি গড়তে পারবো।
বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআই সহ-সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, যেসব কারখানা স্বাস্থ্যবিধি মানতে পারছে, কেবল তারাই খুলছে। তারাই খুলবে। কোনও শ্রমিক যাতে অসুস্থ না হন, সে ব্যাপারে সব মালিক সতর্ক আছেন জানিয়ে তিনি বলেন, অর্থনীতি সচল রাখার স্বার্থে, শ্রমিকদের খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার স্বার্থে, আমরা কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ, এই করোনা কবে যাবে, কেউ জানেন না। শোনা যাচ্ছে, আগামী শীতেও এর প্রকোপ বাড়বে। ফলে অর্ডার ধরে রাখতে আমাদের কারখানা খোলার কোনও বিকল্প নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে গার্মেন্ট কারখানার সব মালিক একমত হয়েছেন। ধাপে ধাপে তারা দেশের সব কারখানা চালু করবেন। যদিও চলতি সপ্তাহে সীমিত পরিসরে উৎপাদন চালাচ্ছে। পরবর্তীতে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে কারখানাগুলো। এদিকে পোশাক শ্রমিক করোনায় আক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসা দেওয়ার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আক্রান্ত শ্রমিকের তথ্য দেওয়ার জন্য চালু করা হয়েছে হটলাইন। পাশাপাশি চারটি জোন ভাগ করে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে। কারখানায় শ্রমিকদের হাত ধোয়ার অস্থায়ী কলের ব্যবস্থা দ্বিগুণ করা হয়েছে। নিরাপদ দূরত্ব মেনে শ্রমিকদের কারখানায় ঢোকানো হচ্ছে। কারখানার ভেতরেও একইভাবে দূরত্ব বজায় রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বিজিএমই’র গাইড লাইন কঠোরভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে। গাইড লাইনে কারখানায় প্রবেশ মুখে শ্রমিকদের শরীরের তাপমাত্রা মাপা, কারখানা ভবনের বাইরে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা জুতায় জীবাণুনাশক স্প্রে করাসহ বিভিন্ন নিয়ম মানার কথা বলা হয়েছে। পরিচ্ছন্নতার স্বার্থে কারখানায় প্রবেশের আগে জুতা পলিব্যাগে রেখে একটি নির্দিষ্ট স্থানে (সু র্যাক) রাখা হচ্ছে। এসব স্বাস্থ্য বিধি মানা হচ্ছে কিনা তা তদারক করতে মনিটরিং টিম কাজ করছে বিজিএমইএ’র। যদিও কিছু কারখানা সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মানছেনা বলেও অভিযোগ রয়েছে।
চলচ্চিত্র জগতের পরিচিত মুখ অনন্ত জলিল একজন গার্মেন্ট ব্যবসায়ীও। তিনি এজেআই গ্রুপের মালিক। তিনি জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে তিনি ফ্যাক্টরি খুলেছেন ২৬ এপ্রিল। এরপর থেকে প্রতিদিন ভিডিও করে সেটা তার অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে দেন যাতে সবাই বুঝতে পারে কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে। তবে দু’একটি কারখানা সঠিক স্বাস্থ্যবিধি নাও মানতে পারে। সে দায় পুরো গার্মেন্টস শিল্পের উপর না দেওয়ার আহবান জানান তিনি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সবাইকে সহযোগীতারও আহবান জানান এজেআই গ্রুপের মালিক অনন্ত জলিল।
এদিকে দেশের তৈরি পোশাক খাতের বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইএফসি বেঠকে সকলকে জানায়, বাংলাদেশের এক-পঞ্চমাংশ জিডিপি ও তিন-চতুর্থাংশ রপ্তানি আয় আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এ খাতে ৪৫ লাখ শ্রমিকের বেশিরভাগই নারী। করোনার কারণে বিশে^র পোশাক খাত এখন সংকটের মধ্যে রয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশের ৩২০ কোটি ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়। করোনা মোকাবিলার পর অর্থনৈতিক দুর্যোগের জন্যও প্রস্তুত থাকতে হবে।
ক্লিনার টেক্সটাইলের প্রোগ্রাম ম্যানেজার নিশাত শহীদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের পোশাক খাত পুনরায় গড়ে তোলার সুযোগ হয়েছে। আশা করছি সব কিছু জয় করে প্রতিযোগিতামূলক বাজার আবারও ফিরবে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউটের সিইও আলী আহমেদ বলেন, এখানে দুটো দিক, একটি হলো এটা ঠিক যে ক্রেতারা একের পর এক ব্যবসায় লোকসান গুনতে শুরু করেছিল। আমাদের এখানে কারখানাগুলো বন্ধ হয়েছে হঠাৎ করেই। কিন্তু নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য অর্থ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এটাও ঠিক অর্থনীতি সচল করতে একটা জায়গা থেকে শুরু তো করতেই হবে। পশ্চিমারা যেহেতু সচল হতে শুরু করেছে ফলে আমাদেরও ধীরে ধীরে সচল হতে হবে। আবার মহামারীর পরে কিন্তু দুর্ভিক্ষের আশঙ্কাও থেকে যাচ্ছে। তারপরও অর্থনীতির চাকা ঘোরানো শুরু করতে হবে।
ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপের (ইআরজি) নির্বাহী পরিচালক ড. সাজ্জাদ জহির বলেন, অনেক ক্রেতা আগে ক্রয়াদেশ বাতিল-স্থগিত করলেও এখন আবার সেগুলো নেবেন বলে সম্মতি দিয়েছেন, ফলে কারখানা সচল হওয়ার একটা যৌক্তিকতা আছে। তবে সংক্রমণ রোধে শ্রমিকের মৌলিক সুরক্ষা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। তা কারখানায় প্রবেশ থেকে শুরু করে অভ্যন্তরেও নিশ্চিত করতে হবে। কারখানাগুলোতে স্বাস্থ্য নজরদারিও নিশ্চিত করতে হবে, এক্ষেত্রে স্বচ্ছতাও রাখতে হবে। একটা বিষয় উল্লেখ করা দরকার, কারখানাগুলোয় স্বাস্থ্যগত সুরক্ষা করা এখন জনস্বাস্থ্য প্রেক্ষাপটে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফলে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের সঙ্গে স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টির মিশ্রণ ঘটানোরও প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি।
নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, আমরা সদস্যদের বলেছি, উপস্থিতি কম রাখার সুবিধার্থে নিটিং, ডায়িং ও স্যাম্পল সেকশন খোলার জন্য। ২ মে থেকে কারখানাগুলো পুরোপুরি খুলবে।
উল্লেখ্য, প্রায় এক মাস বন্ধ থাকার পর ২৬ এপ্রিল থেকে খুলতে শুরু করেছে শ্রমঘন পোশাক শিল্পের কারখানাগুলো। বিজিএমইএ এবং শ্রম মন্ত্রণালয়ের যৌথ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কারখানা খোলার ক্ষেত্রে শুরুতে উৎপাদন ক্ষমতার ৩০ শতাংশ চালু করা হবে। পর্যায়ক্রমে তা বাড়ানো হবে। তবে রপ্তানি আদেশের কাজ না থাকা কিংবা কম থাকা কারখানাগুলো সরকারি সাধারণ ছুটির সঙ্গে মিল রেখে আগামী ৫ মে পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।