বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
বান্দার শোকর ও কৃতজ্ঞতা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের বড় পছন্দ। তিনি চান বান্দা প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর শোকর আদায় করুক, যাতে তিনি নেয়ামত-অনুগ্রহে তাকে ভরিয়ে দিতে পারেন এবং যা দিয়েছেন, বাড়তি দান দ্বারা তাকে পরিপূর্ণ করে তুলতে পারেন। যত শোকর ততোধিক দান- এটাই তাঁর বিধান। তিনি এর নিশ্চয়তা দিয়ে বলেন, তুমি যদি শোকর আদায় করো, আমি তোমাকে আরো বেশি দেবো। শোকরগোজার হওয়ার জন্য এটা এক ঐশী প্রণোদনা।
এ রকম অনুপ্রেরণাদায়ী আয়াত কোরআন মাজীদের পাতায় পাতায় চোখে পড়ে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসও আছে প্রচুর। জ্ঞানবান ও বুদ্ধিমানের জন্য তাতে শোকরগোজারের যথেষ্ট সবক রয়েছে। কিন্তু দয়াময় আল্লাহ বান্দাকে তো জানেন। আলস্য ও উদাসীনতা তার মজ্জায় মেশানো। বড় আনমনা। মনের সংযোগ ছাড়া তো সবক হাসিল হয় না। তাই মনোযোগ সৃষ্টির জন্য চোখের সামনে খুলে দিয়েছেন নানা দৃশ্যপট, যা দেখলেই মনে কৃতজ্ঞতা জাগার কথা।
প্রতিটি মানুষের সামনেই এমন কত দৃশ্যই না বিরাজ করে, যা তার বহুবিধ সম্পন্নতা স্মরণ করিয়ে দেয়, যেন বলে দেয়-আহা, চেয়ে দেখো তোমার কত আছে! শিক্ষানবিস মন ঠিকই তা থেকে সবক গ্রহণ করে। সে কৃতজ্ঞতায় আনত হয়ে বলে ওঠে- রাব্বুল আলামিনের শিক্ষা কারিকুলাম বড় বিচিত্র এবং তা অতি পূর্ণাঙ্গ। তিনি ছবির সাহায্যে শিক্ষা দিয়েই ক্ষান্ত হননি। তিনি বান্দাকে হাতে-কলমেও শোকরের তালিম দিয়েছেন। বাস্তব প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শোকরগোজার রূপে গড়ে তোলার ব্যবস্থা করেছেন।
দৈনন্দিন জীবনের ঘটনাপ্রবাহ ও বয়ে চলা জিন্দেগির চড়াই-উতড়াইয়ের প্রতি লক্ষ করুন না, একি কেবলই প্রাকৃতিক আয়ু পূরণের চলমানতা? এর ভেতর কি কোনো পরিকল্পিত নির্মাণ নেই? এ কালক্ষয় নয়, নাকি কোনো পূর্ণতা বিধানের সুব্যবস্থিত প্রক্রিয়া? আচরিত জীবনে বান্দা যত অবস্থার সম্মুখীন হয়, তার প্রতিটি দ্বারাই মহান আল্লাহ মূলত বান্দাকে তাঁর সত্যিকারের বান্দারূপে গড়ে তোলার বাস্তব প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন।
বান্দা যদি তাতে নিজ ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগ করে, তবে এ প্রশিক্ষণের সুফল সে পাবেই। ওই ইচ্ছাশক্তির প্রয়োগটুকু তার দরকার, যেহেতু সে জড় নয়, বুদ্ধিমান জীব। বান্দা ইচ্ছা করলে তার প্রতিটি হাল থেকেই নিজেকে কৃতজ্ঞরূপে গড়ে তোলার প্রশিক্ষণ নিতে পারে। কিন্তু পার্থিব জীবনে মোহাচ্ছন্ন মানুষ বড় স্থ‚লদর্শী।
আপাতদৃষ্টির সীমাবদ্ধতা ছাড়িয়ে সে নিজেকে আরো বিস্তার ও আরো গভীরে নিয়ে যেতে পারে না বা নিয়ে যেতে চায় না। ফলে সে কুদরতি প্রশিক্ষণের সুফল ভোগ থেকে বঞ্চিত থেকে যায়। কিন্তু সে কি চিরবঞ্চিতই থেকে যাবে? দয়াময় আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছা সে রকম নয়। তিনি দিতেই চান।
সুতরাং পরবর্তী ধাপরূপে তিনি বাধ্যতামূলক কিছু কর্মসূচি দিয়েছেন, যা পালন করলে মানুষ বাস্তবিক শোকরগোজার বান্দা হয়ে উঠতে পারে। সেই কর্মসূচির অন্যতম প্রধান অঙ্গ রমজানের রোজা।
রোজার অপর নাম সবর। রোজায় সবরের প্রশিক্ষণ হয় সরাসরি এবং তা অতি স্পষ্ট। কিন্তু এতে যে শোকরেরও সবক এবং প্রশিক্ষণ রয়েছে, সেদিকে নজর কমই যায়। অথচ এ প্রশিক্ষণও অস্পষ্ট নয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।