Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

লকডাউনে কমেছে বায়ুদূষণ ঢাকার প্রকৃতিতে সজীবতা

রফিক মুহাম্মদ : | প্রকাশের সময় : ২৬ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০৩ এএম

নগরীতে নেই কোন ব্যস্ততা, নেই কোন কোলাহল। বিকল বা সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার তাড়াও নেই কারো। চলছে অদৃশ্য শত্রু করোনার সাথে যুদ্ধ। যার মূল অস্ত্র ঘরে থাকা। তাইতো প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সাধারণ ছুটির নামে চলছে অঘোষিত লক ডাউন। জরুরি সেবা ছাড়া সব কিছু বন্ধ রয়েছে।
রাজধানীতে এখন গাড়ির হর্ন নেই, কল কারখানার আওয়াজ নেই, নেই চোখ জ্বালা করা গাড়ির কালো ধোঁয়া। তাইতো প্রকৃতি সেজেছে নতুন সাজে। জেগে উঠেছে সবুজ পাতারা। গ্রীষ্মের শুরুতে কৃষ্ণচূড়ার ডালে ডালে লাল আভা ছড়িয়ে ফুল ফুটছে। ফুলের ফাঁকে কিচির মিচির করে ঘুরে বেড়াচ্ছে ময়না-শালিকসহ নানা প্রজাতির পাখি।
কোথাও বা এই অসময়েও হঠাৎ করে ডেক উঠছে কোকিল। গাছে গাছে আপন মনে খেলা করছে কাঠড়িালী। কোথাও বা রাস্তার পাশে কোন গাছে ফুটে থাকা ফুলে উড়ছে প্রজাপতি। অন্যরকম এক আবেশ ছড়াচ্ছে প্রকৃতি। দেখলে বিশ্বাস হয় না, খোদ ঢাকার প্রকৃতির এই রূপ।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো : ফরহাদ হোসাইন বলেন, বর্তমান সাধারণ ছুটি বা লকডাউনের প্রকৃত সুফল আমরা কতটুকু পাচ্ছি সেটা হয়তো প্রশ্ন সাপেক্ষ। কিন্তু এই লক ডাউনের সুফল প্রকৃতি যে পেয়েছে তা চারপাশে তাকলে স্পষ্ট বুঝা যায়। কলকারখানা, যানবাহন সব কিছু বন্ধ থাকায় বায়ুদূষণ কমে গেছে।
কিছুদিন আগেও ঢাকা ছিল বিশ্বের শীর্ষ বায়ুদূষনের শহরগুলোর একটি। ঢাকার বাতাসে দূষণের মাত্রা ২৫০ ছাড়িয়ে ছিল। যা ছিল খুবই অস্বাস্থ্যকর। মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে এখন ঢাকার বাতাসে দূষণের মাত্রা ১০০ এর মধ্যে চলে এসেছে। এতে প্রকৃতিতেও অন্যরকম সজিবতা ফিরে এসেছে। এ থেকে আমাদের অবশ্যই শিক্ষা নিতে হবে। বাসযোগ্য নগরী রাখতে হলে অবশ্যই দূষণ মুক্ত পরিবেশ রাখতে হবে। কলকারখানা এবং গাড়ি সব পরিবেশসম্মত হতে হবে।
গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটির নামে চলছে লকডাউনকরোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে ঘর থেকে মানুষকে বেরোতে বারণ করা হচ্ছে। মানুষ ঘরবন্দি। গণপরিবহনের চাকাও ঘুরছে না। গণপরিবহন আর জনশূন্য ঢাকা এখন আর দূষণের নগরী নয়। নেই গাড়ির ধোঁয়া। বাতাসে নেই ভারি শিশা। উন্নয়ন কাজ বন্ধ। তাই ধুলোও উড়ছে না। ফুরফুরে বাতাসে তরতর করে বেড়ে উঠছে সড়কদ্বীপের গাছ। পথ বিভাজনে ফুটে থাকা ফুলগুলো রঙ ছড়াচ্ছে। সারা বছরের ধূসরতা কেটে গেছে এ কদিনেই। এক সজিব-সবুজ রূপে ফিরছে লতাগুল্ম ও গাছপালাগুলো।
ঢাকার মানিক মিয়া এভিনিউ, সংসদ ভবন এলাকা, ধানমন্ডি, বিজয়সরণি, মহাখালী, বনানী, রমনা পার্ক এবং বিমানবন্দর সড়কের পথের দুপাশে লাগানো গাছগুলোতে নতুন সবুজ পাতায় নতুন করে সেজেছে। পথ বিভাজনের মাঝে ফুল গাছ, লতাগুল্মগুলোও সতেজ হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় বাসযোগ্য ঢাকা গড়তে পরিবেশ দূষণ বন্ধ করার বিষয়টি নতুন করে ভাবাচ্ছে বলেই জানালেন পরিবেশবিদরা।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়র মোহাম্মদ আব্দুস সোবাহান বলেন, করেনার মত এই ভয়াবহ দুর্যোগ কেউই চায় না। তবে এই মহামারি আমাদের অনেক কিছু শিক্ষা দিয়ে গেছে। এর থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। করোনা সংক্রমণ রোধে আমরা সব কিছু বন্ধ করে দিয়েছি। কলকারখানা এবং যানবাহন বন্ধ থাকার কারণেই কমেছে দূষণ। এক কথায় রাজধানীতে নেই বায়ু দূষণ, নেই শব্দ দূষণও। তাই ঢাকাকে বাসযোগ্য রাখতে হলে ভবিষ্যতে অবশ্যই পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: লকডাউন

৭ এপ্রিল, ২০২২
১৩ জানুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ