Inqilab Logo

সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

নামেই শুধু শ্রমিক কল্যাণ ফান্ড

সহযোগিতা পাচ্ছে না শ্রমিকরা

সিরাজগঞ্জ থেকে সৈয়দ শামীম শিরাজী | প্রকাশের সময় : ২৩ এপ্রিল, ২০২০, ১১:৫২ পিএম

শ্রমিকদের কল্যাণের নামে বছরজুড়ে চাঁদা তুললেও চলমান এই দুর্দিনে শ্রমিকদের কোনো প্রকার সহায়তা করছে না সংগঠনটি

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে জেলায় সকল রুটে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় বেকার হয়ে পড়েছে হাজার হাজার পরিবহন শ্রমিক। তাদের দিন কাটছে অনাহারে-অর্ধাহারে। শ্রমিকদের কল্যাণের নামে বছর জুড়ে নেতারা চাঁদা তুললেও চলমান এই দুর্দিনে কোন প্রকার সহায়তা করছে না সংগঠনটি। নেতারা বলছেন, শ্রমিককল্যাণ ফান্ডের সংগৃহীত টাকা প্রতিমাসেই শেষ হয়ে যায়। এখন ভরসা শুধু সরকার।
উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল গোলচত্বর জুড়ে এমন সুনসান নীরবতা। এই স্থান দিয়েই চলাচল করে উত্তরবঙ্গের সকল যানবাহনসহ ঢাকা রুটের দক্ষিণবঙ্গের একাংশ যানবাহন। যাত্রীদের যাত্রাপথে বিরতীর স্থান হওয়ায় এখানে দিনরাত চলে বিরামহীন ব্যস্ততা। গড়ে উঠেছে ছোট-বড়অন্তত অর্ধশত হোটেল রেস্তোরা। কিন্তু সবকিছু বন্ধ হয়ে পড়ায় বেকার হয়ে পড়েছে হাজার হাজার শ্রমিক। যানবাহন বের করলে কিংবা হোটেল খুললে মামলা আর আদায় করা হচ্ছে জরিমানা। এমন অবস্থায় কষ্টের শেষ নেই শ্রমিকদের। পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাহার-অর্ধাহারে কাটছে তাদের দিন। অথচ এখন একটি টাকাও সহযোগিতা করছে না কোন সংগঠন। সংগঠনটির নেতারা বলছেন প্রতিমাসের টাকা মাসেই শেষ হয়ে যায়। তাই এখন সহযোগিতা করবে সরকার।
জেলার বেলকুচি রুটের বাস শ্রমিক সোলাইমান শেখ জানান, প্রতিদিন বাস নিয়ে বের হলেই শ্রমিক সংগঠনের চাঁদা বাবদ দেড়শ’ থেকে দু’ইশত টাকা দিতে হয়। সংগৃহীত এই টাকাগুলো শ্রমিকদের দুর্দিনে খরচ করার কথা। অথচ আমরা এখন ত্রাণের জন্য রাস্তায় রাস্তায় ঘুরি আর নেতারা লকডাউন এ বাড়িতে বসে থাকে।
সিরাজগঞ্জ-রাজশাহী রুটে চলাচলকারী বাসের সুপারভাইজার চান্দু মিয়া জানালেন, এই রুটের আটটি পয়েন্টে প্রতিটি বাসকে শ্রমিক ফান্ডে টাকা দিতে হয়। অথচ প্রতিটি শ্রমিক না খেয়ে আছে। দেশের কোন জেলায় কোন শ্রমিক এর সুফল পাচ্ছেনা।
বাস শ্রমিক ইসমাইল হোসেন জানান, ঢাকা-টাঙ্গাইল গাজীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে নেতাদের যে চাঁদা দিতে হয় তা শ্রমিকদের ভাগ্যে জোটে না। নেতাদের ঘরে খাবারের অভাব হয়না অথচ আমরা শ্রমিকরা না খেয়ে মরছি। গত ১৬ দিন মনে হচ্ছে ১৬ বছর।
বাস চালক মনজুর হোসেন জানান, এখন নেতাদের কাছে গেলে বলেন, এমপি সাহেব তালিকা চেয়েছেন সেখান থেকে ৩শ’-৪শ’ শ্রমিককে ত্রান এনে দেবে। এখন নেতারা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে আমাদের সহায়তার জন্য।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শ্রমিক জানালেন, শ্রমিকদের টাকাতেই নেতারা ফুলে-ফেঁপে উঠেছেন। জেলা মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আনছার আলীর ১৬টি বাস। সভাপতি সুলতান মাহমুদের আটটি বাস রয়েছে। এছাড়া প্রথম সারির প্রায় প্রতিটি নেতার একটি দুটি গাড়ি আছে। আমাদের টাকায় গাড়ি কিনে নেতা হয়েছে অথচ আমরা এখন না খেয়ে মরছি।
হাটিকুমরুল-এর খোরশেদ আলম জানালেন, অবুঝ ছেলেমেয়েদের আবদারে বাড়িতে থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। বাড়িতে গেলেই শুধু নাই নাই। তাই নিষেধ থাকলেও রাস্তায় সময় পার করছি। নেতাদের কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না।
মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সুলতান মাহমুদ জানান, শ্রমিক সংগঠনের নামে যে টাকা তোলা হয় তা প্রতি মাসেই শেষ হয়ে যায়। অবশিষ্ট কোন টাকা না থাকায় আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা করতে পারছিনা। তবে সরকারিভাবে তালিকা চেয়েছে সেখান থেকে কিছু সহযোগিতা করা হবে।
হাইওয়ে বগুড়া অঞ্চলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আবু রায়হান ইবনে রহমান বলেন, উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলার প্রবেশদ্বার হাটিকুমরুল গোলচত্বর। গণপরিবহন বন্ধ রাখতে হাইওয়ে পুলিশ কড়া নিরাপত্তার মধ্যে নিরলসভাবে কাজ করছে। বর্তমানে ৬০০ কিলোমিটার মহাসড়ক আমরা জিরো টলারেন্স রেখেছি কেউ গাড়ি বের করতে পারবেনা।
এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহমেদ জানান, সকলের কাছে তালিকা চাওয়া হয়েছে তালিকা মোতাবেক ত্রান বরাদ্দ দেয়া হবে। তবে সবার আগে প্রয়োজন সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কল্যাণ-ফান্ড
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ