Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রতিটি ঘর হোক ইবাদতগাহ

মুফতী মুহাম্মদ ওয়ালীয়ুর রহমান খান | প্রকাশের সময় : ২২ এপ্রিল, ২০২০, ১১:৫২ পিএম

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা তোমাদের নামাজের একাংশ তোমাদের ঘরে আদায় কর; তোমাদের বাড়ি-ঘরকে কবর বানিয়ে ফেল না। (আবূদাঊদ)। অর্থাৎ সুন্নত ও নফল নামাজ নিজ নিজ বাসস্থানে আদায় করা উত্তম। রাসূলুল্লাহ (সা.) সাহাবায়ে কেরাম ও সলফে সালেহীনগণ ফরজ ব্যতীত অন্য সব নামাজ যথাসম্ভব ঘরে আদায় করতেন। বাড়ি-ঘরকে নামাজ শূন্য রাখা কবর বনানোর নামান্তর। নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, যিকির-আযকারসহ সকল ব্যক্তিগত ইবাদত মূলত ঘর-বাড়িতে করা মুসলমানদের রীতি ছিল। কিন্তু মানুষের কর্মতৎপরতা ব্যাপক হয়ে যাওয়া এবং সবার কর্মক্ষেত্র বা ঘর-বাড়িতে নামাজের পরিবেশ না থাকায় পরবর্তীতে অধিকাংশ মুসলমান মসজিদেই সব ইবাদত সেরে আসার অভ্যাস করে ফেলেছেন।

এক সময় মুসলমানদের ঘর-বাড়ি থেকে সকাল-সন্ধায় কোরআন তিলাওয়াত আর রাতের শেষ প্রহরে নামাজের মধুর আওয়াজ ভেসে আসতো; মানুষ বুঝতে পারতো যে এগুলো মুসলমানদের বাড়ি-ঘর। আযান হলে পুরুষরা মসজিদে যাবেন আর মহিলারা আউয়াল ওয়াক্তে ঘরে নামাজ আদায় করবেন। নামাজ শেষে কোরআন পড়বেন, মোনাজাতে মকবুল পড়বেন ও তাসবীহ নিয়ে বসবেন; এ ছিল মুসলিম পরিবারের বৈশিষ্ট্য।

এখন সমাজে এ দৃশ্য খুব কম দেখা যায়। বিজাতিদের মত মুসলমাদেরও দৈনন্দিন জীবনের বড় একটি অংশ দখল করে নিয়েছে বেড়ানো-খেলানো, টেলিভিশন দেখা বা মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ততা। দিন দিন আমরা পবিত্র কোরআন ও ঘরের নামাজ বন্দেগি থেকে এত দূরে সরে গিয়েছি যে, কি শহর কি গ্রাম কোথাও আর সকাল-সন্ধা বা কোনো সময়ই আমাদের ঘর থেকে তিলাওয়াত, যিকির বা নামাজ-কালামের চর্চার কোনো সাড়া-শব্দ পাওয়া যায় না। এ অবস্থা বড়ই দুর্ভাগ্যের।

আমাদের প্রতি আল্লাহ তা‘আলা অসন্তুষ্ট হওয়ার জন্য আমাদের এসব উদাসীনতাই যথেষ্ট। তিনি আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আমরা নিজেদের ও পরিবারের জীবনধারাকে যেন ইসলামী রীতি-নীতির আলোকে সংশোধন করতে সক্ষম হই।

বর্তমান সময়ে মহামারী করোনাভাইরাস বিস্তার রোধে বিশে^র ফকিহগণ মুসলিম জনসাধারণকে ফরজসহ সব ইবাদত সাময়িকভাবে নিজ নিজ ঘরে পালনের পরামর্শ দিয়েছেন। সরকারও সব নাগরিককে ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে আমাদের সুযোগ এসেছে ইসলামের দাবি অনুযায়ী যার যার বাড়ি-ঘরে আল্লাহর ইবাদত চালু করার। বিশেষ করে সকাল সন্ধা কোরআন তিলাওয়াত, নারী-পুরুষ সবাই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সম্ভব হলে জামাআত, সুন্নত-নফল নামাজসমূহ, ইশরাক, চাশত, আওয়াবিন, তাহাজ্জুদ, সালাতুত তাওবাহ ইত্যাদি নামাজ এবং শিশু-কিশোরদের কোরআন ও মাসআলা-মাসায়েল শিক্ষাদান প্রতিটি পরিবারে হওয়া জরুরি।

করোনা সঙ্কট থেকে মুক্তির জন্য আমাদের এখন যেমন বেশি বেশি আল্লাহকে স্মরণ করতে হবে; আল্লাহর হুকুমে সঙ্কট কেটে যাওয়ার পরও ফরজ নামাজ ব্যতীত অন্য সব ইবাদত ঘরে অব্যাহত রাখতে হবে। তেলাওয়াত ও যিকির দ্বারা ঘর-বাড়িকে প্রাণবন্ত করার মধ্যে অনেক বরকত ও রহমত নিহিত আছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেছেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরা অধিক পরিমাণে আল্লাহর যিকির কর এবং সকাল-সন্ধায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর। (সূরা আহযাব-৪১-৪২)।

এ যিকির ও তাসবীহ যেন মুসলমানের ঘরে ঘরে হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা তোমাদের ঘরগুলোকে কবরস্থান বানিয়ে রেখ না। নিশ্চয়ই যে ঘরে সূরা বাকারা তিলাওয়াত হয় সে ঘর থেকে শয়তান পলায়ন করে। (সহীহ মুসলিম)। তিনি বলেছেন, তোমরা কোরআন পাঠ করো। কোরআন কিয়ামতের দিন তিলাওয়াতকারীদের জন্য সুপারিশকারী হয়ে আসবে। (সহীহ মুসলিম)।

অন্য হাদীসে আছে, পৃথিবীর যেসব বাড়িতে কোরআন তিলাওয়াত হয় সে বাড়িগুলো আকাশবাসীর নিকট উজ্জল জ্যোতির্ময় হয়ে চমকাতে থাকে যেমন পৃথিবীবাসীর নিকট আকাশের নক্ষত্রগুলো উজ্জল জ্যোতির্ময় হয়ে চমকাতে থাকে। (বায়হাকি)। তিনি বলেছেন, সূরা বাকারার শেষ দু‘টি আয়াত, যে ব্যক্তি রাতের বেলা এ দু‘টি আয়াত পড়বে, এ দু‘টি আয়াত তার হেফাযতের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে। (মুত্তাফাক আলাইহ)। এসব ছাড়াও অসংখ্য দলিল রয়েছে ঘরে ইবাদতের ফযীলত সম্পর্কে।

করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেই এবার মুসলমানদের জীবনে পবিত্র শাবান মাস ও লাইলাতুল বারাআত এসেছে। অন্যান্য বছর মসজিদে মসজিদে বয়ান ও যিকির-আযকার হতো মানুষকে তওবা, আত্মসংশোধন ও ইবাদতে উৎসাহিত-অনুপ্রণিত করার জন্য। এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে মসজিদে আগমনে বিধি-নিষেধ থাকায় সবাইকে নিজ নিজ বাসস্থানে সব ধরনের ইবাদত বন্দেগি সম্পন্ন করতে হবে।

এমনিতেও সব নফল নামাজ নিজ ঘরে পড়া উত্তম ও নবীজি (সা.)-এর সুন্নত। ঐতিহ্যগতভাবে আমাদের মুরব্বীগণ ও মা-বোনরা কিন্তু এসব ইবাদত-সাধনা ঘরেই করতেন। এ রাতের অতিরিক্ত ইবাদত-বন্দেগি, তিলাওয়াত, যিকির ও দু‘আ এবং মাসের রোযাসমূহ নফল হওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে প্রকাশ্যে পালন করতে দেখা যায় না।

শবে বরাত ও শাবান মাসের নামাজ রোজা নফল হলেও এসব থেকে সর্বসাধারণকে বিমুখ করা সঠিক নয়। আন্তরিকভাবে গোপনে কৃত নফল ইবাদতের মর্তবা আল্লাহর নিকট অনেক বেশি। কারণ, ফরজ ইবাদত হয় অনেকটা শাস্তির ভয়ে; আর নফল ইবাদতসমূহ হয় আল্লাহর মহব্বতে।

 

 

 

 



 

Show all comments
  • Mohammad Sirajullah, M.D. ২২ এপ্রিল, ২০২০, ১২:১৪ এএম says : 1
    We face this question everyday and can not answer with our very limited knowledge of Islam. Question is what will happen to millions of people who did not hear about Prophet Muhammad (SA) and his prophethood. Even in Bangladesh people did not hear about the prophethood of Muhammad (SA) until 600 years after his death. What would happen to these fore fathers of ours. They lived in the period of Muhammad (SA) ‘s Nobuyat but did not hear his name even. Same is true for the millions of people who lived in Amercan Continents. Next question comes the Bush men in Andaman, Australia, Newzealand and Amazon (They stay naked) who were not visited by any body from Tabligee Jamat. Will they go to heaven ? or get burnt in Hell. Also What will happen to Hijras. Will any body with better religious knowledge please write an article on this subject for our education. Islam says education is mandatoiry foir all the Muslims and Muslimas.
    Total Reply(0) Reply
  • পারভেজ ২২ এপ্রিল, ২০২০, ৩:৪০ এএম says : 1
    হে আল্লাহ তুমি আমাদের সবাইকে হেফাজত করো।
    Total Reply(0) Reply
  • বুলবুল আহমেদ ২২ এপ্রিল, ২০২০, ৩:৪২ এএম says : 1
    আসুন আমরা সবাই বেশি বেশি আল্লাহর ইবাদাত করি এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি
    Total Reply(0) Reply
  • মনিরুল ইসলাম ২২ এপ্রিল, ২০২০, ৩:৪৩ এএম says : 1
    এই কঠিন পরিস্থিতি থেকে আমাদেরকে একমাত্র মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনই রক্ষা করতে পারেন।
    Total Reply(0) Reply
  • শফিক রহমান ২২ এপ্রিল, ২০২০, ৩:৪৫ এএম says : 1
    সামানে রমজান আমাদের উচিত এখন থেকে বেশি বেশি ইবাদাত বন্দেগী করা।
    Total Reply(0) Reply
  • ShahJalal ২২ এপ্রিল, ২০২০, ৪:৩৬ পিএম says : 0
    আজকে একটা নতুন স্বপ্ন দেখছি, দাদার কাছ থেকে ২ বিগা ল্যান্ড পাইছি, বিক্রি করলে ৫ লাখ টাকা পাবো, তা নিয়া ভুটান যাবো. সেখানে ৭০০০ মুসলিম আছে. সেখানে সেটেল হবো, তাদের সাথে নিয়া ইবাদত করবো. Good luck!
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন