Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

করোনা মোকাবেলা এডিবির প্রেসিডেন্টেকে বর্ধিত সহায়তার অনুরোধ অর্থমন্ত্রীর

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ এপ্রিল, ২০২০, ২:৪৫ পিএম

পুরো বিশ্ব এখন একটি ক্রান্তিকাল পার করছে। নভেল করোনাভাইরাসের কারনে মানব সম্প্রদায়ের জীবন ও অস্তিত্ব আজ হুমকীর মুখে। পুরোবিশ্ব প্রকট অর্থনৈতিক মন্দার সম্মুখীন হতে যাচ্ছে। বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দার ধাক্কা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্যও দুঃচিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জানিনা এই সঙ্কট কতদিন থাকবে এবং তা আমাদের অর্থনীতিকে কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তবুও সম্ভাব্য অর্থনৈতিক নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় কাজ করে যাচ্ছি। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) স্বাস্থ্য ও অর্থনীতি খাতে ২০ বিলিয়ন বা দুই হাজার কোটি মার্কিন ডলার আর্থিক সহায়তার প্যাকেজ ঘোষণার জন্য এডিবি’র প্রেসিডেন্ট মাসাতাসুগু আসাকাওয়ার নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এডিবির প্রেসিডেন্টের গতিশীল নেতৃত্বে উন্নয়নশীল দেশগুলো করোনা ভাইরাসের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি তিনি স্বাস্থ্য খাতের জরুরী সেবা ও বাজেট সাপোর্টের জন্য এডিবি তৎক্ষনাত ভিত্তিতে বাংলদেশের জন্য যে ৬০২ দশমিক ৩৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছে সেজন্যও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
আজ সোমবার (২০ এপ্রিল) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট মাসাতাসুগু আসাকাওয়ার সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি এবং সহযোগীতা নিয়ে ফোনে আলাপচারিতার শুরুতে এসব কথা বলেন।
এডিবি প্রেসিডেন্ট বলেন, এই মহামারি এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অর্থনৈতিক, সামাজিক, এবং উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে। যার ফলে এই অঞ্চলের দরিদ্রতা আরও বাড়তে পারে এবং অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিতে পারে। এডিবি ঘোষিত সহযোগিতা প্যাকেজ উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এবং বেসরকারি খাতকে এই মহামারি মোকাবিলা করার জন্য দ্রুত সরবরাহ করা হচ্ছে। তিনি অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশে এডিবির চলমান প্রকল্প ও পাইপলাইনের প্রকল্পগুলো নিয়ে আলোচনা করেন সেগুলো দ্রুত সফলভাবে সমাপ্ত করার পদক্ষেপ গ্রহনের অনুরোধ করেন। বর্তমানে বাংলাদেশে এডিবির প্রায় ৮ দশমিক ৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তায় ৬৩টি প্রকল্প চলমান রয়েছে, পাশাপাশি পাইপলাইনে রয়েছে প্রায় ৯ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তার ৮১টি প্রকল্প।
অর্থমন্ত্রী ও এডিবি প্রেসিডেন্টের মধ্যে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় বাংলাদেশের গৃহিত পদক্ষেপ নিয়েও আলোচনা হয়। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাংলাদেশের গৃহিত পদক্ষেপ সম্পর্কে বলেন, কোথাও লকডাউন, কোথাও গণছুটি আবার কোথাও কারফিউ জারি করে মানুষকে ঘরবন্দি করা হয়েছে। বাংলাদেশে গত ২৫ মার্চ থেকে আগামী ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষনা করা হয়েছে। জরুরি সেবা কার্যক্রম ছাড়া সবকিছু বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এখন দেশের সিংহভাগ শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং ছোট-খাটো কারখানা বন্ধ। গণপরিবহন ও বিমান চলাচল স্থগিত। ইতোপূর্বে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর উদ্বোধন অনুষ্ঠান, স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান ও পহেলা বৈশাখের নববর্ষ অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষ ও অর্থনীতির জন্য ৯৫ হাজার ৬১৯ কোটি টাকার বিভিন্ন আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন, যা জিডিপি’র ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। এই প্যাকেজের অর্থ ব্যয়ে জনসাধারণের ব্যয় বৃদ্ধি, সামাজিক সুরক্ষা জালকে প্রশস্ত করা এবং আর্থিক সরবরাহ বাড়ানোর ক্ষেত্রে জোর দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প, পরিষেবা খাত এবং কুটির শিল্পগুলিকে সুরক্ষার জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে কার্যনির্বাহী মূলধনের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট মাসাতাসুগু আসাকাওয়া বাংলাদেশের গৃহিত বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রশংসা করেন। তিনি দ্রুত সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, করোনার প্রভাবে আমাদের আমদানি-রপ্তানির উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে বেশিরভাগ দেশে প্রবাসী ভাইবোনেরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। স্থবিরতা নেমে এসেছে রেমিট্যান্স প্রবাহে। এই সংকটময় পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার জন্য আমরা অবশ্যই এডিবিকে অবিরাম সমর্থন ও সহায়তার জন্য অনুরোধ করছি। এই ক্রান্তিকালিন সময়ে এডিবির তৎক্ষণিক সহায়তাটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত জরুরী ছিল, কিন্তু বর্তমান উদ্ভুত পরিস্থিতে আমাদের প্রয়োজন এর চেয়ে আরো অনেক বেশী। বাংলাদেশের ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে এডিবি’ বৃহত্তর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে অনুরোধ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সমাজের উপর করোনার বিরূপ প্রভাব মোকাবিলার জন্য এডিবি থেকে বর্ধিত প্রকল্প সহায়তা এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরের ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অতিরিক্ত ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জন্য আরও ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেট সাপোর্ট, কোভিড-১৯ মোকাবেলায় ফ্রন্টলাইন কর্মীদের (চিকিৎসা কর্মী, সিভিল প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, অত্যাবশ্যকীয় সেবা প্রদানকারী) জন্য ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, কোভিড-১৯ এর কারনে চাকুরী হারানো দেশী ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের কর্মসংস্থান সৃস্টির জন্য এবং অতি-ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্প খাতের ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনে ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, আর্থিক সহায়তা এবং অছাড়কৃত ওসিআর লোনের কমিটন্টে চার্জ হ্রাসের অনুরোধ করেন। এডিবি প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের উল্লিখিত খাতসমূহে আর্থিক সহায়তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছেন এবং বিষয়টি পর্যালোচনা করে বাংলাদেশকে সময়মত অবহিত করবেন বলে জানান।

উল্লেখ্য, অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশের উন্নয়নমূলক মাইলফলক অর্জনে ধারাবাহিক ক্রমবর্ধমান সহায়তার জন্য এডিবিকে ধন্যবাদ জানান। এডিবি বাংলাদেশকে এযাবৎ প্রায় ২৫ দশম১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা দিয়েছে। মূলত বিদ্যুৎ, জ্বালানি, স্থানীয় সরকার, পরিবহন, শিক্ষা, কৃষি, জল সম্পদ এবং বাংলাদেশের সুশাসন এবং আর্থিক বিভাগগুলিকে প্রাধান্য দিয়ে এডিবি এ সহায়তা প্রদান করেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অর্থমন্ত্রী

১১ জুন, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ