Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হতাশ নয় : মুমিন হবে আশাবাদী

মাওলানা শিব্বির আহমাদ | প্রকাশের সময় : ১৯ এপ্রিল, ২০২০, ১১:৫১ পিএম | আপডেট : ১২:১৪ পিএম, ২০ এপ্রিল, ২০২০

ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর ইবনে খাত্তাব (রা.)। তাঁর ইসলাম গ্রহণের কাহিনী আমরা অনেকেই জানি। যখন নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর দাওয়াতি কার্যক্রমকে কিছুতেই কাফের কুরাইশরা প্রতিহত করতে পারছিল না, আবার আরবের কঠিন গোত্রপ্রীতির কারণে কেউ তাঁকে হত্যা করার মতো সাহসও করছিল না, তখন এক মজলিসে ঘোষিত হলো পুরস্কার। নবী মুহাম্মাদকে হত্যার পুরস্কার। বীর সাহসী তো সেখানে কতজনই ছিল। কিন্তু এক উমর ছাড়া কেউ সেদিন মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। তিনি খোলা তরবারি নিয়ে ছুটলেন নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-কে হত্যা করার লক্ষ্যে। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার রহমত ও কুদরত দেখুন। কাফেরদের পুরো সমাজ মিলে যে কাজটি করার হিম্মত করতে পারেনি, একা উমর তা সম্পন্ন করার দুঃসাহস দেখাতে বেরিয়ে পড়লেন। তাও কেমন অপরাধ- ইসলামের নবীকে সরাসরি হত্যা! উমরের এ মিশন সফল হলে তো ইসলাম এখানেই শেষ!

এমন জঘন্য ও গুরুতর এক অপরাধের দিকে ছুটে চলা উমর পথিমধ্যে আল্লাহ তায়ালার রহমত বর্ষণে এতটাই সিক্ত হলেন, নবীজী (সা.)-এর কাছে গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করে মুসলমান হয়ে গেলেন। এখানেই কি শেষ! তিনি ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা। নবীজী (সা.) এই দুনিয়াতেই সুনির্দিষ্টভাবে যে দশজন সাহাবিকে জান্নাতি বলে ঘোষণা করেছেন, যাদেরকে আমরা ‘আশারায়ে মুবাশশারা’ বলে স্মরণ করি, তিনি তাঁদের দ্বিতীয়জন।

আমাদের ইসলামী ইতিহাসের পরতে পরতে এমন অনেক বরেণ্য মনীষীর দেখা মিলবে, যারা শুরুর জীবনে নানামুখী পাপে ডুবে ছিলেন। পরবর্তী জীবনে তারা এতটাই বড় হয়েছেন, এখনো আমরা তাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। ফুযায়ল ইবনে ইয়ায, মালিক ইবনে দিনারের মতো নামের এখানো অভাব নেই। তাজা উদাহরণ দিই।

সারা বিশ্বের মুসলমানদের শোকের সাগরে ভাসিয়ে এ দুনিয়া থেকে আকস্মিকভাবে বিদায় নিলেন পাকিস্তানের সঙ্গীতশিল্পী জুনায়েদ জামশেদ। শুরুর জীবনে ছিলেন পপতারকা। সেই জগতে তিনি ছিলেন যারপরনাই সফল। বিশ্বজোড়া তার খ্যাতি। জগৎটা যে কতটা নোংরা- তা কি বলার অপেক্ষা রাখে! অথচ সেখান থেকে তিনি উঠে এলেন এমন উচ্চতায়, বিশ্বজুড়ে দ্বীনদার মুসলমানদের কাছে তিনি হয়ে উঠলেন একজন প্রিয় মানুষ।

আর তাবলীগ জামাতের বিশ্বব্যাপী মেহনতের বদৌলতে বর্তমান পৃথিবীর আনাচে-কানাচে এমন কত জুনায়েদ জামশেদ ছড়িয়ে আছে- কে জানে? গায়ক হয়ে উঠছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমান। সন্ত্রাসী-ডাকাত, ইসলামের দুশমন, অমুসলিম ধর্মগুরু, মন্দির-গির্জার প্রধান ব্যক্তি উঠে আসছেন ইসলামের আলোকিত সীমানায়। এই বাস্তবতাকে সামনে রেখে কি দ্বীন-ধর্ম আর পরকাল নিয়ে হতাশ হওয়ার কোনো সুযোগ আছে?

আল্লাহ তায়ালার কী দ্ব্যর্থহীন আহবান- বলো, হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ, তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেন। সন্দেহ নেই, তিনিই ক্ষমাশীল দয়ালু। (সূরা যুমার : ৫৩)।

একই কথা পার্থিব সঙ্কট নিয়েও। এখানকার কোনো সঙ্কটই স্থায়ী নয়। দুনিয়াই যেখানে ক্ষণস্থায়ী, সেখানে এসব সঙ্কট স্থায়ী হবে কিভাবে? পবিত্র কোরআনের একটি ছোট সূরা ‘সূরা আলাম নাশরাহ’। এ সূরায় আল্লাহ তায়ালার ওয়াদা, (‘কষ্টের সঙ্গেই তো স্বস্তি আছে। অবশ্যই কষ্টের সঙ্গেই স্বস্তি আছে।’) (সূরা আলাম নাশরাহ : ৫-৬)।
আল্লাহ তায়ালার এ ওয়াদা সর্বকালের জন্যই সত্য। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাকের একটি বৈশিষ্ট্য এভাবে বর্ণিত হয়েছে, ‘বরং তিনি, যিনি অসহায়ের আহŸানে সাড়া দেন, যখন সে তাঁকে ডাকে এবং তিনি বিপদাপদ দূর করে দেন আর পৃথিবীতে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করেন। আল্লাহর সঙ্গে কি অন্য কোনো মাবুদ আছে? তোমরা খুব সামান্যই উপদেশ গ্রহণ করো।’ (সূরা নামল : ৬২)।

তাই হতাশ নয়; মুমিন হবে আশাবাদী। আল্লাহর রহমতের আশায় থাকবে সে; নিরেট পার্থিব বিষয় নিয়েও, দ্বীনী ও পরকালীন বিষয়েও। সর্বশক্তিমান দয়ালু আল্লাহর গুণবাচক নামগুলোর প্রতি যার বিশ্বাস থাকবে অটুট, তার হতাশ হওয়ার সুযোগ কোথায়! এ বিশ্বাস হতাশাকে দূর করবেই।



 

Show all comments
  • Md Saifullah ২০ এপ্রিল, ২০২০, ১:৫৪ এএম says : 0
    জীবনে বিপদ আসতেই পারে। নানা সময় নানা দিক থেকে বিপদ এসে হামলে পড়ে। অর্থসম্পদ, সন্তানাদি ও সম্মান-মর্যাদা আক্রান্ত হয় অনেক কিছুই। দুনিয়ার জীবনে বিপদাপদের মুখে পড়ার কথা আল্লাহর পক্ষ থেকে সুস্পষ্টভাবেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব সামান্য ভয় ও ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফসলের কিছুটা ক্ষতি দিয়ে; আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও- যাদের ওপর কোনো মুসিবত এলে বলে, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’- নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর আর অবশ্যই আমরা তার কাছেই ফিরে যাব। (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৫৫-১৫৬)
    Total Reply(0) Reply
  • তোফাজ্জল হোসেন ২০ এপ্রিল, ২০২০, ১:৫৪ এএম says : 0
    বিপদের মুহূর্তে কী করতে হবে সেই নির্দেশনাও দেওয়া আছে এ আয়াতে। কিন্তু বিপদ যখন কিছুটা দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং তা কেটে যাওয়ার কোনো স্বাভাবিক সম্ভাবনা থাকে না, তখন নানামুখী হতাশা মনে আঘাত হানে। হতাশা আল্লাহর রহমতের কথা ভুলিয়ে দিতে চায়। অথচ পবিত্র কোরআনের ভাষ্য মতে- মুমিন কখনোই হতাশ হতে পারে না।
    Total Reply(0) Reply
  • সাইফুল ইসলাম চঞ্চল ২০ এপ্রিল, ২০২০, ১:৫৫ এএম says : 0
    বিপদে পড়লে মানুষ কীভাবে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে এর কিছু বর্ণনা পবিত্র কোরআনেও এসেছে। বলা হয়েছে, ‘আমি মানুষকে যখন কোনো নেয়ামত দিই, তখন সে মুখ ফিরিয়ে নেয় ও পাশ কাটিয়ে যায়। আর যদি কোনো অনিষ্ট তাকে স্পর্শ করে, তাহলে সে সম্পূর্ণ হতাশ হয়ে পড়ে!’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ৮৩)
    Total Reply(0) Reply
  • বারেক হোসাইন আপন ২০ এপ্রিল, ২০২০, ১:৫৫ এএম says : 0
    বাস্তবতাকে সামনে রেখে দীন-ধর্ম আর পরকাল নিয়ে হতাশ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আল্লাহতায়ালা দ্ব্যর্থহীনভাবে আহ্বান করে বলেন, ‘বলো, হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ, তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গোনাহ ক্ষমা করে দেন। নিশ্চয় তিনিই ক্ষমাশীল ও দয়ালু। (সুরা জুমার, আয়াত : ৫৩)
    Total Reply(0) Reply
  • কায়সার মুহম্মদ ফাহাদ ২০ এপ্রিল, ২০২০, ১:৫৬ এএম says : 0
    হতাশা ও নৈরাশ্য নয়; মুমিন হবে আশাবাদী। নিরেট পার্থিব বিষয় নিয়েও, দীনি ও পরকালীন বিষয়েও আল্লাহর রহমতের আশায় থাকবে। সর্বশক্তিমান দয়ালু আল্লাহর গুণবাচক নামগুলোর প্রতি যার বিশ্বাস অটুট, তার হতাশ হওয়ার সুযোগ নেই।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Sirajullah, M.D. ২২ এপ্রিল, ২০২০, ১২:২১ এএম says : 0
    We face this question everyday and can not answer with our very limited knowledge of Islam. Question is what will happen to millions of people who did not hear about Prophet Muhammad (SA) and his prophethood. Even in Bangladesh people did not hear about the prophethood of Muhammad (SA) until 600 years after his death. What would happen to these fore fathers of ours. They lived in the period of Muhammad (SA) ‘s Nobuyat but did not hear his name even. Same is true for the millions of people who lived in Amercan Continents. Next question comes the Bush men in Andaman, Australia, Newzealand and Amazon (They stay naked) who were not visited by any body from Tabligee Jamat. Will they go to heaven ? or get burnt in Hell. Also What will happen to Hijras. Will any body with better religious knowledge please write an article on this subject for our education. Islam says education is mandatoiry foir all the Muslims and Muslimas.
    Total Reply(0) Reply
  • মো শাহীন আলম ২৩ এপ্রিল, ২০২০, ১০:৪৫ পিএম says : 0
    আমি একজন মানুষ আমার ধর্ম হল ইসলাম আমি আল্লাহতায়ালার কাছে সামান্য একটা চাকরির জন্য মোনাজাত করি কিন্তু আল্লাহতায়ালা কি আমাকে একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিবেন না
    Total Reply(0) Reply
  • ahmed hossain khan ১৪ আগস্ট, ২০২০, ১১:৪৫ এএম says : 0
    allahor upor vorosa rekhe juggota o samorto onujai kormo korbo hotas keno hobo amar allahor rahmat onek onek besi,
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন