বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর ইবনে খাত্তাব (রা.)। তাঁর ইসলাম গ্রহণের কাহিনী আমরা অনেকেই জানি। যখন নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর দাওয়াতি কার্যক্রমকে কিছুতেই কাফের কুরাইশরা প্রতিহত করতে পারছিল না, আবার আরবের কঠিন গোত্রপ্রীতির কারণে কেউ তাঁকে হত্যা করার মতো সাহসও করছিল না, তখন এক মজলিসে ঘোষিত হলো পুরস্কার। নবী মুহাম্মাদকে হত্যার পুরস্কার। বীর সাহসী তো সেখানে কতজনই ছিল। কিন্তু এক উমর ছাড়া কেউ সেদিন মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। তিনি খোলা তরবারি নিয়ে ছুটলেন নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-কে হত্যা করার লক্ষ্যে। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার রহমত ও কুদরত দেখুন। কাফেরদের পুরো সমাজ মিলে যে কাজটি করার হিম্মত করতে পারেনি, একা উমর তা সম্পন্ন করার দুঃসাহস দেখাতে বেরিয়ে পড়লেন। তাও কেমন অপরাধ- ইসলামের নবীকে সরাসরি হত্যা! উমরের এ মিশন সফল হলে তো ইসলাম এখানেই শেষ!
এমন জঘন্য ও গুরুতর এক অপরাধের দিকে ছুটে চলা উমর পথিমধ্যে আল্লাহ তায়ালার রহমত বর্ষণে এতটাই সিক্ত হলেন, নবীজী (সা.)-এর কাছে গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করে মুসলমান হয়ে গেলেন। এখানেই কি শেষ! তিনি ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা। নবীজী (সা.) এই দুনিয়াতেই সুনির্দিষ্টভাবে যে দশজন সাহাবিকে জান্নাতি বলে ঘোষণা করেছেন, যাদেরকে আমরা ‘আশারায়ে মুবাশশারা’ বলে স্মরণ করি, তিনি তাঁদের দ্বিতীয়জন।
আমাদের ইসলামী ইতিহাসের পরতে পরতে এমন অনেক বরেণ্য মনীষীর দেখা মিলবে, যারা শুরুর জীবনে নানামুখী পাপে ডুবে ছিলেন। পরবর্তী জীবনে তারা এতটাই বড় হয়েছেন, এখনো আমরা তাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। ফুযায়ল ইবনে ইয়ায, মালিক ইবনে দিনারের মতো নামের এখানো অভাব নেই। তাজা উদাহরণ দিই।
সারা বিশ্বের মুসলমানদের শোকের সাগরে ভাসিয়ে এ দুনিয়া থেকে আকস্মিকভাবে বিদায় নিলেন পাকিস্তানের সঙ্গীতশিল্পী জুনায়েদ জামশেদ। শুরুর জীবনে ছিলেন পপতারকা। সেই জগতে তিনি ছিলেন যারপরনাই সফল। বিশ্বজোড়া তার খ্যাতি। জগৎটা যে কতটা নোংরা- তা কি বলার অপেক্ষা রাখে! অথচ সেখান থেকে তিনি উঠে এলেন এমন উচ্চতায়, বিশ্বজুড়ে দ্বীনদার মুসলমানদের কাছে তিনি হয়ে উঠলেন একজন প্রিয় মানুষ।
আর তাবলীগ জামাতের বিশ্বব্যাপী মেহনতের বদৌলতে বর্তমান পৃথিবীর আনাচে-কানাচে এমন কত জুনায়েদ জামশেদ ছড়িয়ে আছে- কে জানে? গায়ক হয়ে উঠছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমান। সন্ত্রাসী-ডাকাত, ইসলামের দুশমন, অমুসলিম ধর্মগুরু, মন্দির-গির্জার প্রধান ব্যক্তি উঠে আসছেন ইসলামের আলোকিত সীমানায়। এই বাস্তবতাকে সামনে রেখে কি দ্বীন-ধর্ম আর পরকাল নিয়ে হতাশ হওয়ার কোনো সুযোগ আছে?
আল্লাহ তায়ালার কী দ্ব্যর্থহীন আহবান- বলো, হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ, তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেন। সন্দেহ নেই, তিনিই ক্ষমাশীল দয়ালু। (সূরা যুমার : ৫৩)।
একই কথা পার্থিব সঙ্কট নিয়েও। এখানকার কোনো সঙ্কটই স্থায়ী নয়। দুনিয়াই যেখানে ক্ষণস্থায়ী, সেখানে এসব সঙ্কট স্থায়ী হবে কিভাবে? পবিত্র কোরআনের একটি ছোট সূরা ‘সূরা আলাম নাশরাহ’। এ সূরায় আল্লাহ তায়ালার ওয়াদা, (‘কষ্টের সঙ্গেই তো স্বস্তি আছে। অবশ্যই কষ্টের সঙ্গেই স্বস্তি আছে।’) (সূরা আলাম নাশরাহ : ৫-৬)।
আল্লাহ তায়ালার এ ওয়াদা সর্বকালের জন্যই সত্য। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাকের একটি বৈশিষ্ট্য এভাবে বর্ণিত হয়েছে, ‘বরং তিনি, যিনি অসহায়ের আহŸানে সাড়া দেন, যখন সে তাঁকে ডাকে এবং তিনি বিপদাপদ দূর করে দেন আর পৃথিবীতে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করেন। আল্লাহর সঙ্গে কি অন্য কোনো মাবুদ আছে? তোমরা খুব সামান্যই উপদেশ গ্রহণ করো।’ (সূরা নামল : ৬২)।
তাই হতাশ নয়; মুমিন হবে আশাবাদী। আল্লাহর রহমতের আশায় থাকবে সে; নিরেট পার্থিব বিষয় নিয়েও, দ্বীনী ও পরকালীন বিষয়েও। সর্বশক্তিমান দয়ালু আল্লাহর গুণবাচক নামগুলোর প্রতি যার বিশ্বাস থাকবে অটুট, তার হতাশ হওয়ার সুযোগ কোথায়! এ বিশ্বাস হতাশাকে দূর করবেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।