Inqilab Logo

সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

সুইডেনে প্রতিবেশি দেশগুলোর চেয়ে সংক্রমণ-মৃত্যু বেশি

ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত জাপানের চিকিৎসাকর্মীরা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৮ এপ্রিল, ২০২০, ১১:৫১ পিএম

শনাক্ত : ২২,৮৭,৩২৩ মৃত : ১,৫৭,৪৬৮ সুস্থ : ৫,৮৫,৮৩৮

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় গৃহীত পদ্ধতি প্রতিবেশিদের তুলনায় বেশি প্রাণহানির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সুইডেনে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্টিফান লোফভেন কোভিড-১৯ মোকাবিলায় তার সরকারের অবহেলার জন্য সমালোচিত হয়েছেন।
জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি জানিয়েছে, গতকাল পর্যন্ত ১ কোটি জনসংখ্যার দেশটিতে নিশ্চিত করোনারোগী শনাক্ত হয়েছে ১৩ হাজার ৮২২ এবং ১ হাজার ৫১১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। সুইডেনের মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিবেশি ডেনমার্ক (৩২১), নরওয়ে (১৫২) এবং ফিনল্যান্ড (৭৫)-এর সম্মিলিত যোগফলের চেয়ে বেশি। নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় জাপানের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে সতর্ক করেছেন দেশটির চিকিৎসকেরা।
এদিকে গতকাল রাত পৌনে ১১টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিশ্বের করোনাভাইরাস শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২২ লাখ ৮৭ হাজার ৩২৩ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১ লাখ ৫৭ হাজার ৪৬৮ জন। আর সুস্থ হয়ে পরিবারে ফেরা মানুষের সংখ্যা ৫ লাখ ৮৫ হাজার ৮৩৮ জন। গতকাল এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মৃত্যুর তালিকার শীর্ষে ছিল যুক্তরাজ্য যেখানে মারা গেছেন ৮৮৮ জন। এর ফলে তাদের মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৪৬৪ জনে। গতকাল আরো ৫ হাজার ৫২৫ জন নতুন শনাক্তের মধ্যদিয়ে দেশটিতে করোনারোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ২১৭ জনে। এদিন আরো মারা গেছে- যুক্তরাষ্ট্রে ৭৩৫, ইতালিতে ৪৮২, বেলজিয়ামে ২৯০, হল্যান্ডে ১৪২, সুইডেনে ১১১, ইরানে ৭৩, মেক্সিকোতে ৬০, স্পেনে ৪১, ব্রাজিল ও রাশিয়ায় ৪০, পর্তুগালে ৩০, জার্মানিতে ২৫, সুইজারল্যান্ডে ১৭ ও হাঙ্গেরীতে ১৬ জন।
প্রতিবেশিদের তুলনায় মৃত্যুহারও উদ্বেগজনক সুইডেনের। এই দেশে যেখানে ১০ লাখে ১১৮ সেখানে প্রতিবেশি ডেনমার্কে ৫৫ এবং ফিনল্যান্ডে ১৩। উভয় দেশই এই সংক্রমণকে সীমাবদ্ধ রাখার লক্ষ্যে কঠোর প্রাথমিক লকডাউন বাস্তবায়ন করেছে।
সুইডেনের প্রতি ১০ লাখে মৃত্যুহার জার্মানির (৪২) তুলনায় যথেষ্ট বেশি, যদিও যুক্তরাষ্ট্রের (১৮২) চেয়ে কম এবং ইতালি (৩৯৯) এবং স্পেনের (৩৯৯) উভয়ের চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কম।
গোথেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত ও পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. ওলে হ্যাগগ্রাস্টম ইনডিপেন্ডেন্টকে বলেন, ‘আপনি যদি নিকটতম তুলনামূলক কাছের দেশগুলির সাথে তুলনা করেন, যেমন নরওয়ে, ডেনমার্ক এবং জার্মানি, আমরা খুব খারাপ অবস্থানে’।
‘আমাদের আরও মৃত্যু হচ্ছে, যা আমি মনে করি সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান, কারণ আপনি যদি সংক্রামিত মোট সংখ্যার দিকে নজর দেন তবে আপনি কীভাবে পরীক্ষা করেন তার ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করতে পারে। কৌশলটি সম্পর্কে উদ্বিগ্ন হওয়া যুক্তিসঙ্গত, তবে একই সাথে আমরা জানি না যে, এটি দীর্ঘমেয়াদী ভুল কিনা। সুইডিশ স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের উদ্বেগ হ’ল আপনি যদি আমাদের সমাজের ওপর খুব কঠোর ব্যবস্থা রাখেন তবে দীর্ঘমেয়াদে ধরে রাখা অসম্ভব।
রেস্তোরাঁ ও ব্যবসায় খোলা রেখে এবং লোকেরা কতবার বা কী কারণে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সে বিষয়ে কোনও বিধিনিষেধ তৈরি না করে সরকার তাদের জনগণকে নিজেদের জন্য সামাজিক দূরত্বের বিচারের দায়িত্ব দিয়েছিল। গোথেনবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের এপিডেমিওলজির অধ্যাপক বো লুন্ডব্যাকের কাছে এই পদক্ষেপ নিয়ে শিক্ষাবিদরা তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং এই মহামারীটি দেশে পৌঁছাবে বলে বিশ্বাস না করা সরকারের ‘বোকামি’ বলে অভিযোগ করেছেন। এই পদ্ধতির অন্যান্য সমালোচকদের মধ্যে রয়েছেন ডক্টর সিসিলিয়া সোডারবার্গ নকলার, কারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের মাইক্রোবায়াল প্যাথোজেনেসিস বিশেষজ্ঞ, যিনি নিজেকে একটি ‘বিপর্যয়ে’ বলে জন্য চিহ্নিত করছেন।
‘আমি একজন বিজ্ঞানী, আমি কেবলমাত্র ডেটা বিশ্বাস করি এবং ডেটা বলে যে, আমরা বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছি’, -ডা. নকলার বলেছিলেন। ‘আমরা এখন জ্ঞাত সম্মতি ছাড়াই একটি পরীক্ষার অংশ’। তবে ক্রমবর্ধমান সংখ্যা সত্তে¡ও মি. লোফভেন ৫০ জনের বেশি লোকের জমায়েতের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে পরামর্শ দিয়েছেন বার এবং রেস্তোরাঁ কেবল টেবিল সার্ভিসে সীমাবদ্ধ রাখতে।
চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে ভয় জাপানের স্বাস্থ্যকর্মীদের
নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় জাপানের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে সতর্ক করেছেন দেশটির চিকিৎসকেরা। ভাইরাসের কারণে চাপ তৈরি হওয়ায় জরুরি কক্ষগুলো মারাত্মক অসুস্থ রোগীদের সেবা দিতে পারছে না বলে জানিয়েছেন দেশটির কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকভাবে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আনার দাবি করলেও জাপানে গতকাল করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দশ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। দেশটিতে দুইশ’রও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। দেশটির সবচেয়ে বেশি করোনা কবলিত এলাকা রাজধানী টোকিও।
টোকিও শহরের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর চাপ কিছুটা কমাতে সন্দেহভাজন করোনা রোগীদের পরীক্ষায় সহায়তা দিচ্ছে জেনারেল সার্জারির একদল চিকিৎসক। ওই চিকিৎসকের অ্যাসোসিয়েশনের উপপ্রধান কোনোসিন তামুরা বলেন, চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়া ঠেকাতে এটা করা হচ্ছে। সবারই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত। অন্যথায় হাসপাতালগুলো ভেঙে পড়বে।
জাপানের দুটি মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ইতোমধ্যে জাপানের হাসপাতালগুলোর অন্য মারাত্মক অসুস্থ রোগীদের সেবা দেয়ার ক্ষমতা কমে গেছে। ইতোমধ্যেই রোগী ফিরিয়ে দিতে শুরু করেছে দেশটির হাসপাতালগুলো। অন্য দেশগুলোর তুলনায় কম করোনা রোগী থাকার মধ্যেই এসব ঘটেছে। চিকিৎসকেরা ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের অভাবের অভিযোগ তুলেছে। আর এতেই প্রমাণিত হয়েছে ভাইরাসটি মোকাবিলায় জাপান ভালোভাবে প্রস্তুতি নেয়নি।
আইয়াকো কাজিওয়ারা ভীত, জাপানের চিকিৎসা ব্যবস্থার ভবিষ্যত কী হতে যাচ্ছে তা নিয়ে দেশটি প্রস্তুত নয়। তিনি সাইতামা প্রদেশের একটি হাসপাতালে শীর্ষ নার্স এবং গুরুতর অসুস্থ করোনভাইরাস রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন এমন একটি নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘এটি কঠিন, কারণ আমরা মনে করি রোগীর উন্নতি হচ্ছে, তবে তারপরে তারা হঠাৎ করে আরও খারাপের দিকে মোড় নেবে’।
গত কয়েক সপ্তাহে জাপানের করোনভাইরাস সংক্রমণ বেড়েছে। তারা আশা করেছিল যে, সরকারের প্রাথমিক পদক্ষেপ তার বিস্তার নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছিল। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, গতকাল পর্যন্ত জাপানে ৯ হাজার ৭৮৭ জন শনাক্ত হয়েছে, যার মধ্যে ১৯০ জন মারা গেছেন। গত ১ মার্চ পর্যন্ত দেশটিতে ২৪৩ জন শনাক্ত হয়েছিল। সূত্র : ইন্ডিপেন্ডেন্ট, সিএনএন, বিবিসি ও ওয়ার্ল্ডমিটার্স।

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সুইডেন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ