Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

সীমালঙ্ঘনে মানবসভ্যতা পতনের দিকেই যাবে

প্রকৃতিতে সুখের নাচন -শেষ পর্ব

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ১৮ এপ্রিল, ২০২০, ১১:৫২ পিএম

করোনার অন্যপিঠে মানুষের আগ্রাসন ও কোলাহলমুক্ত প্রকৃতি আপন গতিতে চলার ইতিবাচকতা নিয়ে ইনকিলাবকে দেয়া বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞগণের অভিমত তুলে ধরছি। তাদের সতর্ক আশাবাদ, মানুষের শুভবুদ্ধি বিবেক উদয় প্রয়োজন। অন্যথায় আরো সীমালঙ্ঘনের পরিণতিতে চরমতম পতনের দিকেই যাবে মানবসভ্যতা। 

চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, আইইবি চট্টগ্রামের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, মানুষ গৃহবন্দী। সবকিছু বন্ধ থাকায় প্রকৃতি রাজ্যের সচলতা অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনা সতর্কতার জন্য মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতা এসেছে। প্রকৃতির সুশৃঙ্খল আচরণ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা লাভবান হতে পারি।
চবির পরিবেশ-প্রকৃতি ও বনজ সম্পদ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ইটভাটা, বনে অগ্নিসংযোগ, পরিবহন বন্ধ থাকায় বন নিধন কমেছে। খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, সিলেটসহ বনাঞ্চলে গাছপালার বীজ ছড়িয়ে পড়ছে। সেখান থেকে আপন গতিতে বনের ঘনত্ব বাড়বে। বন্যপ্রাণির বিচরণ ক্ষেত্র বেড়েছে। প্রজননও বৃদ্ধি পাবে। সুফলগুলো যদি ধরে রাখতে পারি তাহলে ভবিষ্যতে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, প্রকৃতিতে সবুজায়ন হচ্ছে। ভারসাম্যতা নিয়ে স্বরূপে ফিরছে। জাফলংসহ দেশের পর্যটন এলাকাগুলো আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। পরিবেশ-প্রকৃতির প্রতি যতœশীল হওয়ার শিক্ষা ও উপলব্ধি জরুরি। এরফলে দেশের অর্থনীতি হবে সমৃদ্ধ।
চবি মেরিন অনুষদের ফিশারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হোসেন জামাল বলেন, আল্লাহর প্রকৃতি স্বাভাবিক সিস্টেমে চালিত হয়। কিন্তু মানুষের হস্তক্ষেপে প্রকৃতির অনিষ্ট ঘটে। সমুদ্রজগতে স্তরে স্তরে বিভিন্ন প্রাণি বিচরণ করে। এর কোনটি অতিমাত্রায় ধরা হলে ভারসাম্য বিনষ্ট হয়। এখন শিল্প দূষণ, শব্দ দূষণ ও বর্জ্য দূষণ বন্ধ থাকায় সামুদ্রিক মাছসহ প্রাণিরাজ্য উন্নত হবে।
চবির সমুদ্র বিজ্ঞানী অধ্যাপক সাইদুর রহমান চৌধুরী বলেন, বঙ্গোপসাগরে দূষণ হ্রাসের ফলে মাছের বিচরণশীলতা বাড়বে। বার্ষিক মৎস্য উৎপাদন সাড়ে ৬ লাখ মেট্রিক টন ও ইলিশ ৬ লাখ টন থেকে উৎপাদন বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে মানুষ প্রকৃতি বিনাশী কর্মকাÐ বন্ধ করেছে কিনা? তাহলে শান্ত ডলফিন দল সৈকতে খেলতে এসেই মানুষই তো আঘাত করে মারলো। করোনায় প্রকৃতিতে কী প্রভাব পড়ছে তার জন্য স্টাডি প্রয়োজন।
হালদা নদী বিশেষজ্ঞ চবি অধ্যাপক ড. মনজুরুল কীবরিয়া বলেন, লকডাউনের ফলে মা-মাছ নিধন, দূষণ, ড্রেজারে বালু উত্তোলন, পর্যটকের ভিড়, বর্জ্য, পলিথিন ফেলাসহ হালদার উপর মানুষের অত্যাচার অনেকটা বন্ধ রয়েছে। তাছাড়া হালদা তীরে কাগজকল ও বিভিন্ন দূষণকারী কারখানা বন্ধ। এরফলে এশিয়ায় মিঠাপানির রুই, কাতলা মাছের এই প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্রে ডিম ছাড়ার জন্য সহায়ক হবে। ডিম ও রেণু পোনা সংগ্রহের প্রধান উৎস হিসেবে জাতীয় অর্থনীতিতে হালদা সরাসরি জোগান দেয় বার্ষিক ৮শ’ কোটি টাকা। মুজিববর্ষে হালদা নদীকে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণার প্রক্রিয়া চলছে।
চুয়েটের পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মো. রিয়াজ আখতার মল্লিক বলেন, পৃথিবীতে এখন ৫০ শতাংশ দূষণ কমেছে। করোনা কেটে গেলে মানুষ প্রকৃতি-বান্ধব হবে? নাকি প্রকৃতি-বিরোধী বিভিন্ন কর্মকাÐে আরও উঠেপড়ে লাগবে? তার উপর নির্ভর করছে ভবিষ্যতে কতদূর লাভবান হচ্ছি। তবে পরিবেশ-প্রকৃতিকে তার স্বাভাবিক গতিতে চলতে বাধা না দিলে দ্রæতই স্বরূপে ফিরে আসে। বর্তমান ইতিবাচকতায় তা দেখা যাচ্ছে।
সৈকতের লাগোয়া বাসিন্দা কক্সবাজারের বিশিষ্ট সাংবাদিক আহমদ গিয়াস প্রতিদিন নিজের চোখে দেখা পরিবর্তনের অভিজ্ঞতার কথা জানান। বললেন, করোনা লকডাউনের ফলে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত ও আশপাশের পরিবেশ-প্রকৃতিতে বেশ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করছি। পর্যটনের নামে বেপরোয়া চাপে ধ্বংসের মুখে পড়া প্রকৃতি পুনর্গঠিত হচ্ছে। সাগর তীরে বালিয়াড়ি তৈরি হচ্ছে নির্বিঘেœ বেড়ে ওঠা সাগরলতায়। আনন্দে ঘুরে বেড়ায় হরেক জাতের পাখি। পাখ-পাখালির কলতানে মুখর সমুদ্র সৈকত। মোহনাগুলোতে লাল কাঁকড়ার মিছিল। সামুদ্রিক প্রাণিগুলো সৈকতের খুব কাছে এসে খেলছে। যান্ত্রিক আওয়াজ কম থাকায় সৈকত তীরবর্তী গাছপালা ও পাহাড়ে অভাবনীয় সংখ্যক পাখি বাসা বুনেছে। অবাধে বিচরণ করছে বানর, গুঁইসাপ, পেঁচাসহ অজস্র প্রানিকুল। মানুষের উপকারি ও পরিবেশ-বান্ধব প্রাণিকুলের বিচরণ বেড়েছে। নির্জনতার ফলে বুনো পশু-পাখিরা নির্বিঘেœ প্রজননের সুযোগ পাচ্ছে। যা আমাদের জীববৈচিত্র্যকে করছে সমৃদ্ধ। ফল-ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির সম্ভাবনা বাড়ছে। পর্যটকহীর এ শহরে ভ‚-গর্ভস্থ পানি রিচার্জ হচ্ছে। আল্লাহতায়ালা পৃথিবীতে মানুষকে প্রেরণ করেন তদারককারী হিসেবে। অর্পিত দায়িত্ব সঠিক পালন করলে তাহলে মানুষই হয় প্রকৃতির উপকারভোগী।



 

Show all comments
  • Nannu chowhan ১৯ এপ্রিল, ২০২০, ১১:১১ এএম says : 0
    How i wish this process will be continued so we shall be able to get fresh breeze also at the same time sickness will redeuce.
    Total Reply(0) Reply
  • মো:আমিনুল কবির ১৯ এপ্রিল, ২০২০, ১১:২৬ এএম says : 0
    একদম সত্যি কথা, এটা তো আগে কখনো ভেবে দেখি নাই।
    Total Reply(0) Reply
  • ড. এ কে এম আমিনুল হক ২০ এপ্রিল, ২০২০, ১১:২৭ এএম says : 0
    করোনার কারণে প্রকৃতি তার স্বরূপে ফেরার অবকাশ পেয়েছে। এটি অবশ্যই আমাদের একটি ইতিবাচক প্রাপ্তি।
    Total Reply(0) Reply
  • শহীদুল হক কাজল ২০ এপ্রিল, ২০২০, ১২:৫৫ পিএম says : 0
    পৃথিবীতে মানব সৃস্ট অসহনীয় নীতিঃবহির্ভুত কার্যক্রম প্রাকৃতিক পরিবেশকে অতিষ্ট করার কারণে মহামারি করোনা প্রকৃতির আাশির্বাদ।মানব কল্ল্যাণে নতুন ভাবে প্রকৃতি সাজানোর ইংগিত।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাংলাদেশ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ