দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
রোগ-ব্যাধি মুমিনের ঈমান পরীক্ষার কষ্টি পাথর বা মাধ্যম। যেদিন পর্যন্ত পৃথিবীতে মানুষ থাকবে। সেদিনপর্যন্ত সময় সময়ে আল্লাহতায়ালা রোগ-ব্যাধি দিয়ে ঈমানের পরীক্ষা নিতেই থাকবেন। পরীক্ষা মানেই পরীক্ষিত হওয়ার আতংক। এরপরও পরীক্ষা দিয়ে পাশ করতে হবে। ইহার কোন বিকল্প নেই। মৃত্যু যেমন দ্রæব সত্য। কেউ তা রোধ করতে পারে না। তদ্রæপ রোগ-ব্যাধিও মুমিন বান্দা ক্ষেত্রে একইরূপ। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে।’ (সূরা বাকারা:১৫৫)। ‘আর ভালো এবং মন্দ দ্বারা আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করে থাকি।’ (সূরা আম্বিয়া:৩৫)।
সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের আক্রমনে মানুষ আতংকিত হয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে মুমিন বান্দার করণীয় হলো আতংকিত না হয়ে আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা। তাঁর করুণা ভিক্ষা প্রার্থনা করা। অতীত জীবনের সকল ভূল-ত্রু টির জন্য ক্ষমা চাওয়া। তওবা ইস্তেসফার বেশি বেশি পাঠ করা। কারণ হাদিসের পরিভাষায় রোগ-ব্যাধি ও বালা-মুসিবত মুমিনের জন্য রহমত স্বরূপ। হযরত আবূ হোরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা:) বলেছেন, ‘মুমিন ব্যক্তির উপমা হলো, সে যেন শস্য ক্ষেতের কোমল চারাগাছ। যে কোনো দিক থেকেই তার দিকে বাতাস আসলে বাতাস তাকে নুইয়ে দেয়। আবার যখন বাতাসের প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায় তখন সোজা হয়ে দাঁড়ায়। বালা-মুসিবত তাকে নোয়াতে থাকে। আর ফাসিক হলো শক্ত ভূমির উপর কঠিনভাবে সোজা হয়ে দাঁড়ানো বৃক্ষের ন্যায়, যাকে আল্লাহ যখন ইচ্ছা করেন ভেঙ্গে দেন।’ (বোখারি:৫২৪১)।
প্রত্যেকটি বালা-মুসিবত কিংবা রোগ-ব্যাধি আসার পিছনে কোন না কোন রহস্য লুকায়িত থাকে। যা একজন সাধারণের পক্ষে বুঝা সম্ভব নয়। আল্লাহতায়ালা এমনিতে বা অযথা কোন কাজ করেন না কিংবা বান্দার উপর কোন বিষয় চাপিয়ে দেন না। যেমনটি আল্লাহতায়ালা রোগ-ব্যাধির ক্ষেত্রে করে থাকেন। তিনি রোগ-ব্যাধি প্রদানের মাধ্যমে বান্দার গোনাহ মাফ করে দেন। হযরত আবূ হোরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা:) বলেছেন,‘মুসলমানদের উপর যে সকল যাতনা, রোগ-ব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানী আপতিত হয়, এমনকি যে কাঁটা তার দেহে বিদ্ধ হয়, এ সবের দ্বারা আল্লাহ তার গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন।’(বোখারি:৫২৩৯)। হযরত আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা:) বলেছেন,‘কোনো ঈমানদার ব্যক্তির শরীরের একটি কাঁটার আঘাত কিংবা তার চেয়ে অধিক কোনো আঘাত লাগলে আল্লাহ তায়ালা তার একটি মাকাম বুুলুন্দ করে দেন কিংবা একটি গোনাহ মাফ করে দেন।’ (মুসলিম:৬৩২৮)।
দুনিয়াতে যত ধরনের রোগ-ব্যাধি রয়েছে। আল্লাহতায়ালাই মানুষকে প্রত্যেকটি রোগ-ব্যাধির চিকিৎসা পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছেন। এমন কোন রোগ-ব্যাধি নেই, যে চিকিৎসা পদ্ধতি তিনি মানুষকে শিক্ষা দেননি। রোগ-ব্যাধি যেমন তিনি দিয়ে থাকেন, শেফাও তিনিই করে থাকেন। তিনিই আমাদের একমাত্র প্রভ‚। তিনি ছাড়া দ্বিতিয় আর কোন শেফা দানকারী নেই। হযরত আবূ হোরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা:) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা এমন কোন রোগ অবতীর্ণ করেননি যার নিরাময়ের উপকরণ তিনি সৃষ্টি করেননি।’ (বোখারি:৫২৭৬)। হযরত আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, আমি রাসূল (সা:) কে প্লেগ রোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি বলেন, তা হচ্ছে আল্লাহর এক প্রকার আজাব। যাকে ইচ্ছা আল্লাহ তার উপর প্রেরণ করেন। তবে আল্লাহ মুমিনের জন্য তা রহমত বানিয়ে দিয়েছেন।’ (বোখারি:৩৩২)।
রোগ-ব্যাধির প্রাদূর্ভাবের সময় মুমিনদেরকে কখনো হতাশ হওয়া যাবে না। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,‘তোমরা হতোদ্যম হয়ো না, চিন্তিত হয়ো না, তোমরা যদি ঈমানদার হও তাহলে তোমরা বিজয়ী হবে।’ (সূরা আল-ইমরান:১৩৯)। ‘আমি যখন মানুষদের অনুগ্রহ আস্বাদন করাই, তখন তারা তাতে খুশি হয়; আবার যখন তাদেরই (মন্দ) কাজের কারণে তাদের ওপর কোন মুসিবত পতিত হয় তখন তারা সাথে সাথেই নিরাশ হয়ে পড়ে।’ (সূরা রূম:৩৬)। আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে সকল প্রকার রোগ-ব্যাধি, বালা-মুসিবত ও মহামারি থেকে শিক্ষা নেয়ার তৌফিক দান করুক। আমীন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।