Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

প্রশ্ন : ইসলামের আলোকে করোনাভাইরাসে করণীয় কী?

আলহাজ্ব হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ আজিজুল হক | প্রকাশের সময় : ১৬ এপ্রিল, ২০২০, ১১:৫২ পিএম

উত্তর : করোনাভাইরাসের মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে গোটা বিশ্ব আতঙ্কিত, নিস্তব্ধ ও হতবাগ। ইতিমধ্যে এ রোগে হাজার হাজার মানুষ মারা গেলেও আজ পর্যন্ত কোন চিকিৎসা প্রতিশোধক আবিষ্কার হয়নি। ইসলামের আলোকে প্রথমে আলোকপাত করছি , এ রকম রোগ কখন আসে এবং কেন আসে ? আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান , যাতে তারা ফিরে আসে। (সূরাঃ রুম, আয়াত-৪১) তফসীর গ্রন্থে ‘বিপর্যয়’ বলে মহামারী, দুর্ভিক্ষ, অগ্নিকান্ড, ইত্যাদি আপদ-বিপদ বোঝানো হয়েছে। আয়াত থেকে জানা গেল যে, এসব পার্থিব বিপদাপদের কারণ মানুষের গোনাহ এবং কুকর্ম। অপর এক আয়াতে এই বিষয়বস্তু এভাবে বর্ণিত হয়েছে, তোমাদের উপর যেসব বিপদ-আপদ পতিত হয়, তা তোমাদের কর্মেরই ফল। আর তিনি তো তোমাদের অনেক গোনাহ ক্ষমাই করে দেন। (সূরাঃ শূরা,আয়াতঃ৩০) অর্থাৎ দুনিয়াতে বিপদাপদের সত্যিকার কারণ হলো গোনাহ। যদিও দুনিয়ায় এসব গোনাহের পুরোপুরি প্রতিফল দেওয়া হয় না এবং প্রত্যেক গোনাহের কারণেই বিপদ আসে না। বরং বেশির ভাগ গোনাহ তো ক্ষমাই করা হয়। তথাপি যেগুলো মাফ করেন না, সেগুলোর পুরোপুরি শাস্তি দেন না, বরং সামান্য স্বাদ অস্বাদন করানো হয় মাত্র। যাতে পাপ কাজ থেকে বিরত হয়। প্রত্যেক গোনাহের কারণে বিপদ আসলে একটি মানুষও পৃথিবীতে বেঁচে থাকত না। তাই আলেমগণ বলেন, যে ব্যক্তি কোন গোনাহ করে, সে সারা বিশে^র সকল মানুষ, চতুষ্পদ জন্তু ও পশু-পাখিদের প্রতি অবিচার করে। কারণ, তার গোনাহের কারণে মহামারী, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টিসহ যেসব বিপদাপদ দুনিয়াতে আসে, তাতে সব প্রাণীই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই কিয়ামতের দিন এরা সবাই গোনাহগার ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ করবে। ব্যাপক গোনাহের কারণে বিপদাপদ আসা, এটাই গোনাহর আসল বৈশিষ্ট্য। কিন্তু মাঝে মাঝে অন্যান্য কারণেও বিপদাপদ আসে। যেমন পয়গম্বর ও ওলীগণের বিপদাপদের কারণ গোনাহ নয়,বরং তাদেরকে পরীক্ষা করা। কুরআন মজীদ সব বিপদাপদকে গোনাহের ফল সাব্যস্ত করেনি, বরং যেসব বিপদ সমগ্র বিশ্ব অথবা গোটা শহর কিংবা পুরো জনপদকেই ঘিরে ফেলে সেসব বিপদাপদকে সাধারণত ঃ গোনাহর এবং বিশেষতঃ প্রকাশ্য গোনাহর ফল সাব্যস্ত করেছে। ব্যক্তিগত কষ্ট ও বিপদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য নয়। হ্যাঁ ব্যাপকারের বিপদাপদ যেমন মহামারী, দুর্ভিক্ষ মানুষের প্রকাশ্য পাপাচারে হয়ে থাকে। র্বব(মা’আরিফুল কুরআন) রাসূলুল্লাহ (সা:) কসম খেয়ে বলেছেন,তোমরা অবশ্যই ভালো কাজের আদেশ এবং খারাপ কাজ হতে নিষেধ করবে। নতুবা অনতিবিলম্বেই আল্লাহ তায়ালা তোমাদের উপর আযাব প্রেরণ করবেন। তারপর তোমরা (আযাব মুক্তির জন্য) তার নিকট দু’আ করবে, কিন্তু তোমাদের দু’আ কবুল করা হবে না। (মিশকাত) ইসলামের আলোকে এখন জানব এসব মহামারী থেকে মুক্তির উপায় কি? করণীয় হলো ঃ প্রথমতঃ পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। (মুসলিম) তাই পরিচ্ছন্ন হয়ে রোগ সম্পর্কে পুরোপুরি সচেতন হওয়া। দ্বিতীয়তঃ যেহেতু আল্লাহর দিকে ফিরার জন্য এই সর্তকবাণী তাই বেশি বেশি দু’আ ও ইস্তেগফার করা। তৃতীয়তঃ দান-সদকা করা। কেননা নবীজি (সা:) বলেন, তোমরা সদকা দ্বারা রোগীর চিকিৎসা কর। সদকা রোগ ও বালা-মসিবত দূর করে এবং আয়ু ও নেকি বৃদ্ধি করে। (বায়হাকী) চতুর্থতঃ সবর এবং সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া। কারণ আল্লাহ বলেছেন, হে মুমিনগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চিতই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন। (সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৫৩) পঞ্চমতঃ “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন ” দু’আটি অর্থের প্রতি যথাযথ লক্ষ্য রেখে পাঠ করে শান্তনা লাভ করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, যখন তারা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে, ( ইন্না লিল্লাহি ---অর্থ) নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাবো। (সূরা বাকারা, আয়াতঃ১৫৬) ষষ্ঠতঃ মহামারীর এলাকা থেকে মৃত্যুর ভয়ে পলায়ন না করা। মুআয (রা:) বলেন, রাসূল (সা:) আমাকে দশটি বিষয়ে ওসিয়ত করেছেন। তন্মধ্যে একটি হলোঃ যদি কোন এলাকার মহামারী ছড়াইয়া পড়ে, তবে সেখান থেকে পলায়ন করিবে না। (আহমদ) কেননা মৃত্যু যথা সময়ে উপস্থিত হবেই। সপ্তমতঃ সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ (দাওয়াত ও তাবলীগ) ব্যাপকহারে করা। অষ্টমতঃ দূরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্তির জন্য নবীজির শিখানো দু’আ পড়া।“আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল বারাসি,ওয়াল জুনুনি,ওয়াল জুযামি, ওয়া সাইয়্যিল আসক্বাম” অর্থ ঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার পানাহ চাচ্ছি, শ্বেত রোগ, পাগল হওয়া, কুষ্ট রোগ এবং দূরারোগ্য ব্যাধি (মহামারী) থেকে।
উত্তর দিচ্ছেন : আলহাজ্ব হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ আজিজুল হক



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ