Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মৃত্যু দেয়ার মালিক একমাত্র আল্লাহ

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ১৫ এপ্রিল, ২০২০, ১১:৫০ পিএম | আপডেট : ১১:৫৭ পিএম, ১৫ এপ্রিল, ২০২০

কোরআন কারীম যেভাবে বিনয়, নম্্রতা, ক্ষমা, অনুকম্পা ও উপেক্ষণের শিক্ষা দান করে, তেমনিভাবে যথাস্থানে বীরত্ব, বাহাদুরি ও সাহসিকতা প্রদর্শনেরও দীক্ষা দেয়। উদাহরণত সত্য ও মিথ্যা এবং ন্যায় ও অন্যায়ের সংগ্রামের ক্ষেত্রে কোরআন মাজিদ তার অনুসারী ও মান্যকারীদের লৌহপুরুষের মতো পরিপূর্ণ বীরত্ব ও দৃঢ়তার সাথে যুদ্ধ করার নির্দেশ দান করে। এক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ তায়ালা তার সে সমস্ত বান্দাকে ভালোবাসেন, যারা তার পথে কাতারবন্দী হয়ে এমনভাবে যুদ্ধ করে, যেন তারা একটি সীসাঢালা প্রাচীর।’ (সূরা সফ : আয়াত ৪)।

অন্য আরেক জায়গায় রাসূলুল্লাহ সা.-এর সাহাবায়ে কেরামের সে ঈমানি শক্তি ও বীরত্বের আলোচনা বিশেষ প্রীতি ও প্রশংসার ভঙ্গিতে করা হয়েছে। যখন তাদেরকে প্রভাবিত ও ভীতসন্ত্রস্ত করে তোলার জন্য এ সংবাদ পৌঁছানো হলো যে, তোমাদের শত্রæপক্ষ তোমাদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার উদ্দেশে বিপুল আয়োজন করেছে এবং বিরাট সমরোপকরণ সংগ্রহ করেছে, তখন তারা আদৌ প্রভাবিত ও সন্ত্রস্ত হয়নি। বরং তারা তাতে করে তাদের ঈমানি শক্তি অধিকতর শাণিত হয়ে উঠে।

তারা বলে, আমাদের জন্য আমাদের আল্লাহই যথেষ্ট। এসব কিছু আমরা দেখে নেবো। সূরা আল ইমরানে ইরশাদ হয়েছে : ‘আমার সে সমস্ত ঈমানদার বান্দা যাদেরকে লোকেরা বলল, (তোমাদের নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য) সমস্ত লোক সমবেত হয়েছে এবং তারা বিপুল উপকরণ সংগ্রহ করে নিয়েছে। তাদের প্রতি তোমাদের ভীত হওয়া প্রয়োজন। তখন এ বিষয়টি ঈমানি অবস্থা অধিকতর দৃঢ় করে দেয় এবং তারা বলে, আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট ও উত্তম কর্ম সম্পাদক।’ (সূরা আল ইমরান : আয়াত ১৭৩)।

এ প্রসঙ্গে আরো একটি বিষয় উপলক্ষণীয় যে, মৃত্যুর ভয় কিংবা কোনো কষ্ট বা ক্ষতির আশঙ্কা এমন বিষয়, যা সাহসিকতা ও শৌর্য বীরত্বের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় এবং মানুষকে ভীরু বানিয়ে দেয়। কোরআন মাজিদ ভীরুতার এ মূলটিকেও উপড়ে ফেলেছে। বিভিন্ন স্থানে বলে দেয়া হয়েছে যে, মৃত্যুর জন্য সময় নির্ধারিত রয়েছে। সে সময় উপস্থিত হয়ে গেলে কেউ বাঁচাতে পারে না। আর যদি সে সময় তখনো না আসে, তা হলে কেউ মারতেও পারে না।

এমনিভাবে নানা জায়গায় বলা হয়েছে, কোনো কষ্ট বা ক্ষতিসাধন করা না করা একান্তভাবেই আল্লাহর ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। যতক্ষণ পর্যন্ত তার ইচ্ছা ও হুকুম না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ আমাদেরকে কষ্ট দিতে ও ক্ষতি সাধন করতে পারে না। আর যখন তার পক্ষ থেকে হুকুম হবে, তখন কেউ আমাদেরকে কষ্ট ও ক্ষতি থেকে রক্ষাও করতে পারে না।

এ প্রসঙ্গেও এখানে দু’চারটি আয়াত পাঠ করে নিন। সূরা আল ইমরানে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর কারো মৃত্যু আসতে পারে না আল্লাহর হুকুম ব্যতীত। (মৃত্যুর জন্য) নির্ধারিত সময় লেখা হয়ে গেছে।’ (সূরা আল ইমরান : আয়াত ১৪৫)। অন্য আরেক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘যখন তাদের মৃত্যুকাল উপস্থিত হয়ে যাবে, তখন না এক মুহূর্ত পেছনে থাকতে পারবে, না এগিয়ে যেতে পারবে (ঠিক নির্ধারিত সময়ে তুলে নেয়া হবে)। (সূরা ইউনুস : আয়াত ৪৯)।

এমনিভাবে অপর এক আয়াতে বলা হয়েছে, ‘কোনো বিপদই আসতে পারে না আল্লাহর হুকুম ছাড়া।’ (সূরা তাগাবুন : আয়াত ১১)। সূরা তওবায় ইরশাদ হয়েছে, ‘হে রাসূল বলে দিন, কখনো আমাদের কোনো বিপদ আসতে পারে না, তা ছাড়া যা আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য নির্ধারিত করে দিয়েছেন। তিনি আমাদের মালিক। আর যারা ঈমানদার তাদের সব কাজই আল্লাহর ওপর ন্যস্ত করা উচিত। (সূরা তওবাহ : আয়াত ৫১)।

লক্ষ করার বিষয় যে, যাদের অন্তরে এ শিক্ষা বদ্ধমূল হয়ে যাবে, তাদের ভীরুতার অবকাশ কোথায় থাকতে পারে এবং শৌর্য ও সাহসিকতার পথেই বা তাদের জন্য কি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে?



 

Show all comments
  • Saleh ahmed sajib ১৬ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০৫ এএম says : 0
    মুসলমানদের ঈমানি শক্তি এমন টাই হওয়া উচিত,আর সর্বদা আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখা উচিত।
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ মোশাররফ ১৬ এপ্রিল, ২০২০, ১:৪৩ এএম says : 0
    একমাত্র আল্লাহ তাআলাই অবিনশ্বর। অবশিষ্ট সব সৃষ্টি নশ্বর। আল্লাহ ছাড়া সব কিছু তার নির্দিষ্ট হায়াত পূর্ণ হওয়ার পর নিঃশেষ হয়ে যাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • জাহিদ খান ১৬ এপ্রিল, ২০২০, ১:৪৪ এএম says : 0
    এ নিশ্চিত ধ্বংসের কথা অনেক সৃষ্টিই জানে না। অন্যান্য পশুপাখি, কীট-পতঙ্গ জানে না কখন কার জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটবে। আল্লাহ আমাদের ওপর রহম করো।
    Total Reply(0) Reply
  • কামাল ১৬ এপ্রিল, ২০২০, ১:৪৪ এএম says : 0
    মৃত্যুর মতো সত্য আর কিছু নেই। সব আত্মাকে একদিন মৃত্যুবরণ করতে হবে। আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজিদের সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৮৫; সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ৩৫; সুরা আনকাবুত, আয়াত : ৫৭-তে বলেছেন, ‘প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।’ আর এ মৃত্যু হয়ে থাকে আল্লাহ তাআলার নির্দেশে। অন্যত্র ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহর হুকুম ছাড়া কেউ মৃত্যুবরণ করতে পারে না। সে জন্য একটা সময় নির্ধারিত রয়েছে (সুরা আলে ইমরান : ১৪৫)
    Total Reply(0) Reply
  • তোফাজ্জল হোসেন ১৬ এপ্রিল, ২০২০, ১:৪৫ এএম says : 0
    তিনি জন্ম-মৃত্যুর স্রষ্টা। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর আল্লাহ জীবন ও মরণ দান করেন এবং তাঁরই কাছে প্রত্যাবর্তন করতে হবে।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত : ৫৬)
    Total Reply(0) Reply
  • হৃদয়ের ভালোবাসা ১৬ এপ্রিল, ২০২০, ১:৪৫ এএম says : 0
    জন্ম-মৃত্যু আল্লাহ তাআলার কুদরতের এক মহান সৃষ্টি।
    Total Reply(0) Reply
  • কামাল রাহী ১৬ এপ্রিল, ২০২০, ১:৪৬ এএম says : 0
    শুধু মানুষ জানে যে তাকে একদিন মরতে হবে। আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজিদে মানবজাতিকে তার মৃত্যুর কথা অবহিত করেছেন। নবী-রাসুলরা তাঁদের উম্মতদের পার্থিব জীবনের পর আরেকটি জীবনের কথা বর্ণনা করেছেন। মানুষের মৃত্যুর কথা অবহিত করার কারণ হলো, যাতে তারা মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন