Inqilab Logo

বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ভারতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাড়ে তিনশ’ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর দেশে ফেরা অনিশ্চিত

প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেশে ফেরার মিনতি

পঞ্চগড় জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৫ এপ্রিল, ২০২০, ৮:০০ পিএম

করোনা ভাইরাসের কারণে ভারতে টানা ২১ দিনের লকডাউন শেষে শুরু হয়েছে আরও ১৯ দিনের লকডাউন। চলবে আগামী ৩ মে পর্যন্ত। টানা এই লকডাউনের কারণে আটকা পড়েছে পাঞ্জাবের লাভলী প্রফেশনাল ইউনিভার্সিটির সাড়ে তিনশ’ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী। ক্যাম্পাসের ভেতরে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা বেঁচে থাকার মত খাবার পেলেও বাইরে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা মানবেতরভাবে দিনযাপন করছে। লকডাউনের কারণে তারা ঘর থেকে বের হতে পারছে না। বাড়ির মালিকের দয়ায় তারা কোন মতে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছেন বলে জানিয়েছেন সেখানকার কয়েকজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত রয়েছে বিদেশে আটকেপড়া সকল শিক্ষার্থীকে দেশে ফিরিয়ে আনার। এরই মধ্যে ভারত থেকে অনেকেই ফিরেছেন। তবে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষার্থীকে ফেরত আনার কোন উদ্যোগ নেয়নি ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশের হাই কমিশন। তারা সেখানে একটি হেল্প লাইন খুলেছিল। সেখানে তারা যোগাযোগ করত। কিন্তু এখন ওই হেল্প লাইনের ফোন কেউ রিসিভ করছে না-অভিযোগ আটকে পড়া শিক্ষার্থীদের।

পাঞ্জাবের লাভলী প্রফেশনাল ইউনিভার্সিটির ইনফরমেশন টেকনোলজি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফেরদৌস আল মাসুম। তার বাড়ি পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাতমেরা ইউনিয়নের পখিলাগা গ্রামে। মুঠোফোনে মাসুম জানান, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগে বাংলাদেশের প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী অধ্যায়নরত। ভারত লকডাউন ঘোষণার আগেই প্রায় দেড়শ’ শিক্ষার্থী বাংলাদেশে চলে আসে। আটকা পড়ে সাড়ে তিনশ’ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ৫০ জনের মত শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের হলে অবস্থান করছে। তাদের জন্য একটি ক্যান্টিন খোলা রাখা হয়েছে। ওই ক্যান্টিনে মাছ-মাংস-ডিম ছাড়া শুধু নিরামিষ দিয়ে দুই বেলা খাবার দিচ্ছে। আর ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করা তিনশ’ শিক্ষার্থী রয়েছে চরম বিড়ম্বনায়। তাদের ঘর থেকে বের হতে দেয়া হচ্ছে না। বাড়ির মালিকের দয়ায় খেয়ে না খেয়ে তারা মানবেতর ভাবে দিন কাটাচ্ছে।

মাসুম জানান, আটকে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য বাংলাদেশ হাই কমিশন এই হেল্প লাইন খুলে। সেই নাম্বারে আমরা নিয়মিত হাই কমিশনের সাথে যোগাযোগ রাখতাম। তারা বরাবরই আমাদের আশ্বাষ দিত আমরা তোমাদের দেশে ফেরার জন্য প্রক্রিয়া চালাচ্ছি। কিন্তু এতদিন যাওয়ার পরও আমরা তাদের কাছ থেকে আশানুরুপ কোন ফল পাইনি। আমরা সবার তথ্য দিয়ে একটি তালিকাও তাদের দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন তারা আর কল রিসিভ করছে না। ভারতে দিন দিন করোনার প্রকোপ বেড়েই চলছে। আমরা সব সময় আতঙ্কের মধ্যে থাকি। কিছুদিন আগে নাগরিক টিভিতে আমাদের নিয়ে একটি নিউজ করা হয়। সেখানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, আমাদের কিভাবে আনবে সেজন্য নাকি এয়ারপোর্ট খুচ্ছে পাচ্ছেন না। অথচ আমাদের ইউনিভার্সিটির কিছু দুরেই অমৃতসর ও চন্ডিগরে দুইটি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট রয়েছে। আমাদের ইউনিভার্সিটি থেকে বলা হয়েছে সরকার আমাদের নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করলে তারা আমাদের সবাইকে ভালভাবে প্রটেক্ট করে বাস দিয়ে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত পৌছে দেবে। কিন্তু আমাদের হাই কমিশন আমাদের দিনের পর দিন নিরাশ করে আসছে। প্রথম দিকেই নেপাল ও ভুটানের শিক্ষার্থীদের সরকার থেকে স্পেশালভাবে ভার্সিটির সামনে থেকে বাস দিয়ে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত তারপর তাদের বিশেষ এয়ারে করে নিজ দেশে ফিরিয়ে নিয়েছে। এছাড়া আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখছি ভারতে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের সরকার বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে ১৪ দিনের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখছে। আমাদের দেশে ফেরত যাওয়ার জন্য টাকা রয়েছে। সরকার আমাদের ফিরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নিয়ে বিমান বা বাস ভাড়ার টাকা আমরা নিজেরাই দেব। সরকারের কোন খরচ হবে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের আকুল আবেদন আমাদের খুব শীঘ্র দেশে ফিরিয়ে নেয়া হোক। স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী আমরা ১৪ দিনের জন্য হোম অথবা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকার জন্য প্রস্তত রয়েছি।

মাসুমের বাবা একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিদ্দিক হোসেন বলেন, সন্তানের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে খুব কষ্ট করে ছেলেকে ভারতে লেখাপড়ার জন্য পাঠিয়েছি। বর্তমানে তারা লকডাউনের মধ্যে খুব খারাপ অবস্থার মধ্যে রয়েছে। বার বার ফোন করছে। কিন্তু আমার তো করার কিছুই নাই। করোনা ভয়াবহতায় তারা মানষিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। আমরা অভিভাবকরা খুবই উদ্বিগ্ন। সন্তানের চিন্তায় ঘুমাতে পর্যন্ত পারছি না। প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আমার অনুরোধ দ্রুত তাদের দেশে ফিরিয়ে আনুন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ