Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দারিদ্র্যতার কাছে হার মানেনি সিরাজুল

প্রকাশের সময় : ১৮ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মাহফুজ মন্ডল, বগুড়া থেকে

দর্জি বাড়ি চলরে ‘বন্ধু’ দর্জি বাড়ি চল। সেই ছন্দের পুনঃ জন্ম করলেন এক প্রতিবন্ধী। শারীরিকভাবে দুর্বল হলেও নিজের ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সম্ভাবনার পথে এগিয়ে চলেছেন বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটরা ইউনিয়নের রুস্তমপুর গ্রামের সরদারপাড়ার জাহের আলীর ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী সিরাজুল ইসলাম। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার অদূরে প্রত্যন্ত অঞ্চলের ১০ গ্রামের মাঝে রুস্তমপুর গ্রামে নিজের বাড়ির উঠানে তৈরিকৃত মাটির দুই কক্ষে প্রত্যাশা নামে মিনি টেইলার্স খুলেছেন তিনি। প্রতিবন্ধী সিরাজুলের প্রতাশা নামের এই মিনি টেইলার্সে শিশু থেকে শুরু করে নারী ও পুরুষের যাবতীয় পোশাকের কাপড় বিক্রয় করে। সেই কাপড় রুস্তমপুর গ্রামের অসচ্ছল পরিবারের নারী দর্জিদের অর্ডারের মাধ্যমে পোশাক তৈরি করে ডেলিভারি দেয়া হয়। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষ শহরে এসে পোশাক ক্রয় না করে রুস্তমপুর গ্রামের প্রত্যাশা টেইলার্সে ভিড় করছেন। দারিদ্র্যতাকে হার মানিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়াটাই প্রতিবন্ধী সিরাজুলের স্বপ্ন। বর্তমানে রুস্তমপুর গ্রামের ওই মিনি টেইলার্স দর্জি বাড়ি হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে। প্রতিবন্ধী সিরাজুলের মিনি টেইলার্সের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হতে চলেছেন সংসারে পিছিয়ে পড়া একঝাঁক নারী। সরেজমিন রুস্তমপুর গ্রামের সরদারপাড়া প্রত্যশা টেইলার্সে গিয়ে প্রতিবন্ধী সিরাজুলের সাথে কথা হয়। ১৯৯৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পেরে হতাশায় পড়েন তিনি। এরপর নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে সম্ভাবনার পথ খুঁজতে থাকেন সিরাজুল। ২০০০সালে উপজেলার ভাটগ্রাম ইউনিয়নের চাকলমা বাজারের রায়হান টেইলার্সে পোশাক তৈরির কারিগরের (দর্জি) কাজ শিখে নিজেই একটি টেইলার্স প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করেন। ২০০১ সালে নিজের ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে রুস্তমপুর গ্রামের নিজ বাড়ির উঠানে মাটি দিয়ে দুই কক্ষ বিশিষ্ট ঘর নির্মাণ করে গ্রাম্য টেইলার্স প্রতিষ্ঠা করে। নাম দেয়া হয় প্রত্যাশা টেইলার্স। প্রতিবন্ধী সিরাজুল বলেন, আমি শরীরিকভাবে প্রতিবন্ধী। ভারী কোনো কাজ করতে পারি না। বুদ্ধি ও ইচ্ছা শক্তিই আমাকে সম্ভাবনার পথ দেখিয়েছে। অন্যের প্রতিষ্ঠানে কারিগরের (দর্জি) কাজ শিখে নিজেই প্রতিষ্ঠান করেছি। আমার গ্রামের আশপাশের প্রায় ১০গ্রামের মানুষ শহরে না গিয়ে এখান থেকেই থান কাপড় কিনে পোশাক তৈরি করে নিচ্ছেন। আমার টেইলার্সে রেডিমেট সার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, থ্রি-পিচ, ছোট বাচ্চাদের পোশাকসহ নারী-পুরুষের যাবতীয় পোশাক রয়েছে। টেইলার্স প্রতিষ্ঠার শুরুর দিকে কিছুটা ঢিলেঢালা বেচাবিক্রি ছিল। বর্তমানে ক্রেতাদের সংখ্যা বেড়েছে। ধর্মীয় উৎসব ও গ্রাম্য বিভিন্ন উৎসবকে ঘিরে আমার টেইলার্সে ক্রেতাদের ভিড় বেড়ে যায়। তিনি বলেন, আমাদের গ্রামে বিদ্যুত নেই। যে কারণে রাতের বেলায় কোপড় সেলাই করতে পারি না। দিনের বেলায় পোশাক তৈরি করা হয়। আমার প্রতিষ্ঠানে কারিগরের(দর্জি) প্রয়োজন। কিন্তু গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা নাজুক ও বিদ্যুত না থাকায় শহরের কারিগর(দর্জিরা) আমার এখানে থাকা তো দূরের কথা আসতেই চায় না। আমি নিজেই কারিগর ও কাটিং মাস্টার হলেও গ্রাহকদের অর্ডারের কাপড় একাই তৈরি করা সম্ভব নয়। ক্রেতা সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে পোশাক তৈরির কাজও বেড়ে গেছে। এজন্য নিজ গ্রামেই চারজন অসচ্ছল নারীকে সেলাই কাজ শিখিয়েছি। আমার দোকানের অর্ডারের কাপড় তাদেরকে দিয়েই পোশাক তৈরি করে ডেলিভারি করে যাচ্ছি। গ্রামের দর্জি আঞ্জুমান ও রেদোয়ান জানান, প্রতিবন্ধী সিরাজুলের প্রত্যাশা টেইলার্সের অর্ডার নেয়া কাপড় নিয়ে গ্রামের বেশ কয়েকজন অসচ্ছল নারী দর্জিদের দিয়ে পোশাক তৈরি করে। এতে করে স্বাবলম্বী হতে চলেছেন সংসারে পিছিয়ে পড়া একঝাঁক নারী। আর এই সফলতা শারীরিক প্রতিবন্ধী সিরাজুলের।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দারিদ্র্যতার কাছে হার মানেনি সিরাজুল
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ