পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মহান আল্লাহ সৌন্দর্যপ্রিয়। তিনি এই পৃথিবীকে অত্যন্ত সুন্দর, মনোরম ও নিখুঁত করে সৃষ্টি করেছেন। এই জন্য তিনি কারো সহায়তা গ্রহণ করেননি। পৃথিবীর সৌন্দর্য সুরক্ষা ও বর্ধনেও তাঁর কোনো সহায়তার প্রয়োজন নেই। মানুষ তাঁর প্রিয় বটে, কিন্তু এতে তারও প্রয়োজন নেই। এ ক্ষেত্রে তিনিই যথেষ্ট।
মহামহিম আল্লাহ মানুষ সৃষ্টির আগে আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক বলেছেন, তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, যিনি আকাশ ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেন। তারপর তিনি আকাশে সমাসীন হন। তিনিই দিনকে রাত্রি দিয়ে ঢেকে দেন, যাতে ওরা একে অন্যকে দ্রুতগতিতে অনুসরণ করে। আর সূর্য, চন্দ্র নক্ষত্ররাজি তারই আওতাধীন। তিনি তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। জেনে রাখো, সৃষ্টি করা ও নির্দেশ দেয়া তাঁরই কাজ। তিনি মহিমাময় ও বিশ্বপ্রতিপালক। সূরা আরাফ: ৫৪। আল্লাহর সৃষ্টি সুশৃঙ্খল, নিয়মানুবর্তী ও সৌন্দর্যময়। তাঁর ভাষায়: তিনি যথাবিধি আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। যখন তিনি বলেন ‘হও’, তখন তা হয়ে যায়। তাঁর কথাই সত্য। সূরা আনআম: ৭৩। অন্য এক আয়াতে তিনি বলেছেন, আকাশ ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্ব তারই। তিনি কোনো সন্তান গ্রহণ করেননি। সেই সার্বভৌমত্বে কোনো শরীক নেই। তিনি সবকিছু সৃষ্টি করেছেন আর প্রত্যেককে যথোচিত প্রকৃতি দান করেছেন। সূরা ফুরকান: ২।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পৃথিবীকে পাহাড়-পর্বত, নদী-সমুদ্র, গাছ-পালা, তৃণ-লতা, ফল-ফুল, জীব-জন্তু, শস্যদানা আলোকময় দিন, অন্ধকার রাত, সুনির্মল বায়ু, মনোহর আকাশ, ইত্যাদিতে শোভিত করেছেন। এই যে বিবিধ প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যময় উপাদন, এদের মধ্যে মানুষও অন্যতম। মানুষকে আল্লাহ পৃথিবীতে তাঁর খলিফা হিসেবে পাঠিয়েছেন। বলেছেন, তিনিই তোমাদেরকে পৃথিবীতে খলিফা করছেন। আর তোমাদেরকে যা দিয়েছেন, তা দিয়ে পরীক্ষা করার জন্য। সূরা আনআম: ১৬৫। এও বলেছেন, তিনি পৃথিবীর সবকিছুকে তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন। সূরা বাকারা: ২৯।
আল্লাহর সৃষ্টিসমূহের মধ্যে মানুষের এই শ্রেষ্ঠতম মর্যাদা কেন? এর একটি নিগুঢ় উদ্দেশ্য আছে। সেটা হলো, তিনি মানুষকে তাঁর ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। তার সঙ্গে জিনের কথাও এসেছে। বলা হয়েছে, আমার উপাসনার জন্যই মানুষ ও জিনকে সৃষ্টি করেছি। সূরা জারিয়াত: ৫৬। মানুষের অস্তিত্ব, প্রয়োজন ও উপযোগিতার মূলকথা হলো, আল্লাহর ইবাদত। অর্থাৎ তিনি যা করতে বলেছেন, তা করা এবং যা করতে নিষেধ করেছেন তা করা থেকে বিরত থাকা। এর ব্যতিক্রম বা ব্যত্যয় ঘটলে আল্লাহর দুনিয়ায় মানুষের প্রয়োজন কী? আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন।
আল্লাহতায়ালা আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তাদের স্রষ্টা, প্রতিপালক ও রক্ষাকারী। এদের ধ্বংস ও বিনাশের ক্ষমতাও নিরঙ্কুশভাবে তাঁরই। আল্লাহ এককভাবে সব কিছু সৃষ্টি করেছেন। তাঁর কোনো সাহায্যকারীর প্রয়োজন হয়নি। সৃষ্টিসমূহের প্রতিপালন ও সুরক্ষার কাজও তিনিই এককভাবে করছেন। অবশ্যই শেষ বিচারদিনের মালিকও তিনিই। তাঁর এই পৃথিবী থেকে অসৎকর্মশীল, অকৃতজ্ঞ ও সীমালঙ্খনকারী মানুষ যদি না থাকে, তবে দুনিয়ায় কেন অপূর্ণতা সৃষ্টি হবে?
করোনাভাইরাস মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। ভাইরাসজনিত মহামারী পৃথিবীতে এর আগেও হয়েছে এবং তাতে মানুষ গণহারে মারা গেছে। কিন্তু অতীতে কোনো ভাইরাস করোনার মতো গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েনি। এত ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি করেনি। সাড়ে তিন মাসের মধ্যে এ ভাইরাস দুই শতাধিক দেশে সংক্রমিত হয়েছে। এ পর্যন্ত লাখ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এবং লক্ষাধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে।
করোনাভাইরাস মানুষের অস্তিত্বকেই হুমকির মধ্যে নিক্ষেপ করেছে। এর কোনো প্রতিষেধক নেই। কবে নাগাদ প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হবে, কেউ বলতে পারে না। ততদিনে মানুষের বিনাশ কোনো পর্যায়ে পৌঁছাবে, কে জানে! প্রাণঘাতী এই ব্যাধির কবল থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য পৃথিবীর তাবৎ মানুষের অর্ধেকের বেশি স্বেচ্ছাবন্দি হিসাবে ঘরে আটক হয়ে আছে। সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকতে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ফলপ্রসূ বিবেচিত হওয়ায় সব দেশেই সামাজিক বিচ্ছিন্নতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
গোটা মানব জাতির স্বাভাবিক জীবনযাত্রা, তার ধারা ও ধরনে আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। এই সঙ্গে জীবিকা, কর্মপ্রবাহ, উৎপাদন, আমদানি-রফতানি, ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ, পরিবহন ইত্যাদি অচল হয়ে পড়েছে। রাজনীতি, কূটনীতি, অর্থনীতি থেমে গেছে। উন্নয়ন স্তব্ধ। সভ্যতাও ভয়াবহ হুমকিতে।
করোনা বিশ্বের উন্নত, উন্নয়শীল ও দরিদ্র দেশগুলোকে একই সমতলে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। একই উদ্বেগ, শঙ্কা, ভীতি ও বিপন্নতার শিকার সব দেশ ও সব মানুষ। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের একমাত্র পরাশক্তি। মারণাস্ত্র ও অর্থ বলে এবং প্রভাববিস্তারী ক্ষমতার দিক দিয়ে সেরা এই দেশটি এখন করোনায় নাস্তানাবুদ। তার রাষ্ট্র পরিচালনা ব্যবস্থার দুর্বলতা, স্বাস্থ্যব্যবস্থার ভঙ্গুরতা স্পষ্টভাবে দৃশ্যগ্রাহ্য হয়ে উঠেছে। যার মজুদ পারমাণবিক অস্ত্রে বিশ্বকে বহুবার ধ্বংস করে দেয়া সম্ভব, সেই দেশটি এখন সম্পূর্ণ অসহায় হয়ে পড়েছে।
মৃত্যুর দিক দিয়ে ইতোমধ্যে দেশটি শীর্ষস্থান দখল করেছে। অস্ত্র, অর্থ, ক্ষমতার প্রভাব, কোনো কাজে আসছে না। দেশটি তার নাগরিকদের ন্যূনতম সুরক্ষা দিতে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ। নিউইয়র্কের হাসপাতালগুলোতে স্থান সংকুলান হচ্ছে না লাশের। লাশের সম্মানজনক সৎকার হচ্ছে না; গণকবর দেয়া হচ্ছে।
ওদিকে যার সাম্রাজ্যে সূর্য অস্ত যায় না বলে প্রবাদ ছিল সেই ব্রিটেনের করোনায় আক্রান্ত প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন হাসপাতলে ভর্তি হয়েছিলেন। অবশ্য সুস্থ হয়ে গতকাল হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। শুধু তাই নয়, করোনার ভয়ে রাণী এলিজাবেথ একাধিকবার প্রাসাদ বদল করেছেন। শেষ রক্ষা হয়নি প্রিন্স চার্লসেরও। তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
জার্মানী, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, প্রভৃতি সভ্যতাগর্বী ও উন্নত দেশও স্মরণকালের ভয়াবহতম বিপর্যয়ের সম্মুখীন। বিশ্বের খ্যাতিমান রাজনীতিক, পেশাজীবী, ক্রীড়াবিদ, সেলিব্রেটি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। অবস্থান, ক্ষমতা ও বিত্ত কোনো কিছুই করোনার মতো ক্ষদ্রাতিক্ষুদ্র অণুজীবকে প্রতিহত করতে পারছে না। তার কাছে পরাজয় কবুল করতে বাধ্য হয়েছে ক্ষমতাবান দেশগুলো।
তেলের কারণে সউদী আরব প্রভাব-বৈভবে মুসলিম বিশ্বে শীর্ষ স্থান লাভ করলেও এর রাজপরিবারের সদস্যরা করোনার ভয়ে ভীত-কম্পমান। তারা এখন অনেকেই কোয়ারেন্টাইনে। ক্ষমতা, অর্থ, সম্পদ ও প্রতিপত্তি দিয়ে সব সময় যে সব কিছু হয় না করোনা সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে ও দিচ্ছে।
মানুষের মধ্যে এবং সমান্তরালভাবে মানব সভ্যতায় একটা বড় রকমের পরিবর্তন আসন্ন বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। এই পরিবর্তনের নিয়ামক হচ্ছে করোনাভাইরাস। করোনার আগের এবং পরের পৃথিবী সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে যাবে। করোনাকারণে ইতোমধ্যেই সমুদ্রের পানি অনেকটা পরিষ্কার হয়ে গেছে। ইতোপূর্বে নানা রকম দূষণে সমুদ্র তার বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলেছিল। বিশ্বের বর্জ্য সামগ্রীর শেষ ভাগাড় হয়ে পড়েছিল সমুদ্র। ইতোমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন সমুদ্র সৈকতে লক্ষ্যণীয় পরিবর্তন ঘটেছে। প্রকৃতি সজিব হয়ে উঠছে এবং সেখানে পাখির আগমন ও বিচরণ বেড়েছে, যেটা ছিল দুর্লভ।
এদিকে খবর বেরিয়েছে, ভারতের ১২৫ মাইল দূরবর্তী এলাকা থেকে এখন হিমালয় স্পষ্ট দৃশ্যমান হচ্ছে। এতদিন বায়ুদূষণে তা দেখা যেতো না। বিশ্বের পরিবেশবাদীরা এর মধ্যেই জানিয়েছেন, পরিবেশে দূষণের মাত্রা কমছে। ঢাকা-দিল্লির বায়ুদূষণ হ্রাস পেয়েছে। করোনাকারণে কলকারখানা, যানবাহন, ইটভাটা ইত্যাদি বন্ধ থাকায় বায়ু ও পরিবেশে এই ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।
অন্যান্য বছরের এই সময়ের চেয়ে এখন প্রকৃতিতে সবুজের বিস্তার ও ফুলের সমারহ অনেক বেশি। অনেক দৃষ্টিনন্দন। পৃথিবী সৌন্দর্যময় ও মনোহারি হয়ে উঠেছে। স্বংক্রিয়ভাবে সবকিছু হয়ে গেছে। এখানে মানুষের ভূমিকা শূন্য। জলবায়ুর পরিবর্তন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, বায়ুমন্ডলে অতিবেগুনী রশ্মির অব্যাহত অনুপ্রবেশ ইত্যাদি কারণে বিশ্ব পরিবেশ নিয়ে যে উদ্বেগ দেখা যাচ্ছে, এই সাড়ে তিন মাস সময়ে তার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। জলবায়ুু পরিবর্তনজনিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিশ্বের দেশগুলো এ পর্যন্ত যা করতে পারেনি, করোনা তা করে দেখিয়ে দিয়েছে। মহান আল্লাহ তাঁর মহিমাবলে কারো ভূমিকা ছাড়াই পরিবেশকে শোধন করে দিয়েছেন।
করোনার কাছে ধনী-গরিব বলে কোনো ভেদাভেদ নেই। ধনী যেমন তাতে আক্রান্ত, তেমনি, গরিবও। মৃত্যুর ক্ষেত্রেও বৈষম্য নেই। করোনার শিক্ষা এই যে, মৃত্যুতে যখন সবাই সমান, তেমনি জীবিতকালেও পরস্পরের মধ্যে এই সমতা থাকতে হবে। সেটাই মানবিক সাম্য, যার অভাব বিদ্যমান বিশ্বজুড়ে। উগ্রবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, বিভিন্ন রকম বর্ণবাদ, ধর্মীয় বৈষম্য ইত্যাদি মানুষের মানবিক মূল্যবোধই হ্রাস করেনি, একে অপরের দুশমনে পরিণত করেছে। অথচ মহান আল্লাহপাকের দৃষ্টিতে মানুষ সবই এক জাতিভুক্ত।
করোনাকারণে উগ্রবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, বর্ণবাদ ও পশ্বাচার অনেকটাই কমেছে। আরও একটি বিষয় লক্ষ্যযোগ্য হয়ে উঠেছে যে, দেশ ও অঞ্চল নির্বিশেষে মানুষের মধ্যে হামদর্দী ও পারস্পারিক সহায়তার ভাব আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। মানুষ নিজের জীবন বিপন্ন করে আক্রান্তদের চিকিৎসা, সেবা ও সহযোগিতা দিচ্ছে। এটা মহানুভয়তার চূড়ান্ত। বহু ডাক্তার, নার্স, চিকিৎসাকর্মী এজন্য মৃত্যুকে পর্যন্ত বরণ করতে এতটুকু দ্বিধা করছে না। এছাড়া অসহায়-দরিদ্র মানুষকে সহায়তার জন্য দেশে দেশে ধনী ও বিত্তবান শ্রেণি এগিয়ে এসেছে। মানুষ মানুষের জন্য, এ সত্যই আরো একবার প্রমাণিত হচ্ছে।
মানুষ যখন কোনো কারণে ঘরবন্দি হয়ে পড়ে কিংবা সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন থাকতে বাধ্য হয়, তখন তার মধ্যে আত্মচিন্তা ও আত্মোপলব্ধির স্ফূরণ ঘটে। তার বিবেক তখন সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং ভালো-মন্দ, সত্য-মিথ্যা, উচিত-অনুচিত বিষয়ে সঠিক নির্দেশনা দান করে। মানুষের মধ্যে এই যে পরিবর্তন, তার পেছনে এই আত্মচিন্তা ও আত্মোপলব্ধির ভূমিকা কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায় না।
করোনা আতঙ্ককর, ভীতিকর অবশ্যই। এটা গোটা মানব জাতির জন্য বিপর্যয়কর ও মহাবিপদস্বরূপ। এর জন্য কে দায়ী? আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, তোমাদের যে বিপদাপদ তা তো তোমাদেরই কৃতকর্মের ফল। আর তোমাদের অনেক অপরাধ তিনি ক্ষমা করে দেন। সূরা শুরা: ৩০। আল্লাহ বিপদাপদ দিয়ে তার বান্দাদের পরীক্ষা করেন, এমন কথাও তিনি বলেছেন। এও বলেছেন, আল্লাহর নির্দেশ ছাড়া কোনো বিপদই আসে না। আর যে আল্লাহে বিশ্বাস করে তিনি তার অন্তরকে সুপথে পরিচালিত করেন। আল্লাহ সব বিষয়ে ভালো জানেন। সূরা তাগাবুন: ১১। বিপদাপদে ধৈর্যশীল থাকার তাগিদ দিয়েছেন আল্লাহতায়ালা। বলেছেন, (তারাই ধৈর্যশীল) যারা তাদের ওপর কোনো বিপদাপদ এলে বলে, আমরা তো আল্লাহরই, আর নিশ্চিতভাবে তারই দিকে ফিরে যাবো। এইসব লোকের প্রতি তাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে আশীর্বাদ ও দয়া পতিত হয়। আর এরাই সৎপথপ্রাপ্ত সূরা বাকারা: ১৫৬-৫৭।
বিপদাপদে ধৈর্যশীলদের ভীত, আতঙ্কিত ও বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। আল্লাহতায়ালার ওপর ভরসা করে থাকা এবং তাঁর সিদ্ধান্ত মেনে নেয়াই তার জন্য উত্তম। গত সাড়ে তিন মাসে বিশ্বের সবকিছু অচল ও বন্ধ। কিন্তু আল্লাহর অসীম রহমত ও করুণায়, এখন পর্যন্ত না খেয়ে কোথাও কেউ মারা যায়নি। পশুপাখিও না খেয়ে নেই।
বিশ্বে সাড়ে ছয়শ’ কোটিরও বেশি মানুষ। তাদের খাদ্যাসহ অন্যান্য চাহিদা কত হতে পারে, তা কল্পনাও করা যায় না। অথচ তাদের সব চাহিদাই কিছু কম বা বেশি পূরণ হচ্ছে। একে আল্লাহর রহমত ছাড়া আর কী বলা যায়? আল্লাহই যে প্রত্যেকের রিজিকদাতা তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তিনিই ঘোষণা করেছেন, পৃথিবীতে প্রত্যেক জীবের জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহর। সূরা হুদ: ৬।
করোনাকারণে যেসব ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ গোচর হয়ে উঠেছে, তাতে সহজাত বোধ-বিবেচনাসম্পন্ন মানুষের জন্য রয়েছে শিক্ষা। সর্বশক্তিমান ও সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক একমাত্র আল্লাহ। সব কিছুই তাঁর অধীন। কোনো কিছুই তাঁর এখতিয়ারের বাইরে নয়। এই সত্য যদি মানুষের চৈতন্যে আসে তবে সেটাই হবে, সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
মানুষ জীবনকে ভালোবাসে, মৃত্যুকে ভয় পায়। এক্ষেত্রে ধনী-নির্ধন বলে কথা নেই। করোনা তা প্রমাণ করে দিয়েছে। করোনাভাইরাস দ্রুততম সময়ে বিশ্বে যে মহামারী হয়ে দেখা দেবে, কয়েক মাস আগেও তা কারো জানা ছিল না। ভবিষ্যদ্বক্তারা অনেক ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী করলেও করোনা সম্পর্কে কোনো কিছুই বলতে পারেনি। মানুষের চরম অসহায়তা এখানে স্পষ্ট। আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী। তিনি যা ইচ্ছা তাই করেন। সূরা বুরুজ: ১৬।
স্বভাবতই আকস্মিক এই বিপর্যয়ে ও জীবনের অনিশ্চয়তায় মানুষের মধ্যে আল্লাহমুখী প্রবণতা জাগ্রত হয়েছে। মানুষের দৃষ্টি এখন ঊর্ধাকাশে। আকাশের অধিপতির কাছে তার সকল প্রার্থনা, সকল আর্তি। তাঁর কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ ছাড়া উপায় নেই। এই একান্ত উপলব্ধিতে মানুষ এখন ঋদ্ধ। আল্লাহমুখী প্রবণতা মানুষের মধ্যে মানবতাবোধের নতুন করে জাগরণ ঘটিয়েছে, সৎকর্মশীলতা বাড়িয়ে দিয়েছে। মানুষে মানুষে পারস্পারিক সহযোগিতা যেমন বেড়েছে তেমনি, আন্তর্জাতিক সহমর্মিতাও বেড়েছে। বিশ্বনেতাদের মধ্যেকার পারম্পারিক সম্পর্ক আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি হৃদ্যতাপূর্ণ, সহানুভূতিশীল। করোনা মোকাবেলায় তারা পরস্পরকে সাহায্য সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। আর্থিকভাবেও সহায়তার কথা বলছেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সংগঠন যতটা সম্ভব আর্থিক সহযোগিতার ঘোষণা দিচ্ছে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, করোনা সবচেয়ে ক্ষতি করবে বিশ্ব অর্থনীতিকে। অর্থনীতি বড় রকমে মন্দার মুখে পড়তে পারে এবং ৩০-এর দশকের মহামন্দাকেও তা ছাড়িয়ে যেতে পারে। আশঙ্কিত মন্দা মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ সকল দেশ মোটা অঙ্কের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। যুক্তরাষ্ট্র কয়েক ট্রিলিয়ন ডলার প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন করেছে ৫০ হাজার কোটি ইউরো বা ৫৪ হাজার কোটি ডলার।
এডিবি বলেছে, করোনাকারণে বিশ্ব অর্থনীতি থেকে ৪ ট্রিলিয়ন ডলার হারিয়ে যেতে পারে। এই অঙ্ক ভবিষ্যতে আরো বাড়তে পারে। তারপরও দেখা গেছে, বিশ্বের দেশসমূহ করোনা মোকাবেলায় যেমন জোটবদ্ধ বা ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তেমনি অর্থনীতি পুনরুদ্ধারেও যুগপৎ প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। সবকিছু লকডাউন, শাটডাউন হওয়ার পরও অর্থনীতি যে ভেঙ্গে পড়েনি, সেটাও মহামহান আল্লাহর অনুগ্রহ।
আল্লাহপাক পরম করুণাময়, পরম দয়ালু। তার করুণা, দয়া ও অনুগ্রহর কোনো শেষ নেই, সীমা নেই। তিনিই বলেছেন, তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা করে তার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। সুরা নমল: ১৮। মানুষসহ জীবজগতের অস্তিত্বের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বায়ু, পানি ও আলোর। আল্লাহর কী দয়া ও মহিমা, এই তিন উপকরণ পৃথিবীতে তিনি অফুরান করে দিয়েছেন।
আজ অক্সিজেনের জন্য বিশ্বজুড়ে হাহাকার চলছে। করোনায় আক্রান্তদের জন্য এর প্রয়োজন সমধিক। অথচ বাতাসে অক্সিজেনের কোনো অভাব নেই। এই বিষয়গুলো বিশ্বের রাষ্ট্রনায়ক, রাজনীতিক দার্শনিক, সমাজবেত্তা ও চিন্তকদের ভাবতে হবে, উপলব্ধি করতে হবে। করোনাকারণে যে শুভ পরিবর্তনগুলো দেখা দিয়েছে, মানুষের মধ্যে যে সহানুভূতি-সহৃদয়তা জাগ্রত হয়েছে, বিশ্ব মানবের মধ্যে যে ঐক্য ও ভ্রাতৃবোধ জন্ম হয়েছে, তা ধরে রাখতে হবে এবং সম্প্রসারণ ঘটাতে হবে।
মহামহান আল্লাহ বান্দার কৃতজ্ঞতা পছন্দ করেন। আসুন, কায়মনোবাক্যে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি। তাঁর প্রশংসা করি এবং এ মহামারীর বিপর্যয় থেকে সুরক্ষার জন্য তাঁর কাছে প্রার্থনা জানাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দোয়া করতে বলেছেন, যাতে আল্লাহ করোনাভাইরাস থেকে আমাদের রক্ষা করেন। আসুন, আন্তরিকভাবে তাঁর কাছে দোয়া করি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।