বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও ঘরে থাকার পরামর্শ মানতে গিয়ে নি¤œ আয়ের মানুষের আয় অনেক কমে গেছে। এ পরিস্থিতিতে চরম দারিদ্র্যের হার আগের তুলনায় বেড়ে গেছে ৬০ শতাংশ। ১৪ শতাংশ মানুষের ঘরে কোনো খাবারই নেই। নি¤œ আয়ের মানুষের ওপর করোনাভাইরাসের প্রভাব নিয়ে ব্র্যাক পরিচালিত এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। গত ৩১ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের ৬৪ জেলায় ২,৬৭৫ জন নি¤œ আয়ের মানুষের ওপর এ জরিপ চালানো হয়।
ব্র্যাকের অ্যাডভোকেসি ফর সোশ্যাল চেঞ্জ প্রগ্রাম পরিচালিত এ জরিপে দেখা যায়, অংশগ্রহণকারী ২,৬৭৫ জনের মধ্যে ৩৬ শতাংশ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কী ধরনের ব্যবস্থা অবলম্বন করতে হবে-তার পরিষ্কার ধারণা নেই। এমনকি করোনা সংক্রমণের লক্ষণ (জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট) দেখা দিলে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সরাসরি চলে না আসার যে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে সে বিষয়েও ধারণা নেই বেশির ভাগের। প্রতিবেশীর করোনাভাইরাসের লক্ষণ দেখা দিলে তাদের কী পরামর্শ দেবেন এমন প্রশ্নের জবাবে ৫৩ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, শহরের হাসপাতাল বা সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দেবেন। আর করোনাভাইরাসের হেলপলাইনে ফোন করার কথা বলেছেন মাত্র ২৯ শতাংশ মানুষ।
জরিপে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের পরিপ্রেক্ষিতে সুনির্দিষ্ট কিছু সুপারিশ করা হয় প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে। ব্র্যাকের সুপারিশে বলা হয়, টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে করোনাভাইরাস নিয়ে করণীয় সম্পর্কে পৃথক, বৃহৎ মাত্রার প্রচারাভিযান চালাতে হবে। সামাজিক দূরত্বের পদক্ষেপ সঠিকভাবে বাস্তবায়নের জন্য দেশব্যাপী খাদ্য সংকটে পড়া মানুষের কাছে শিগগির খাদ্য পৌঁছাতে না পারলে তাদের ঘরে রাখা সম্ভব হবে না বলে জানানো হয়। জীবিকা অর্জনে তারা বাইরে বের হতে বাধ্য হবে। শহর থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ গ্রামে ফিরে গেছে, যারা গ্রামকেন্দ্রিক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতাভুক্ত নয়। তাদের কাছে জরুরি খাদ্যসামগ্রী পৌঁছানোর আশু ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।
এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি বোরো ধান কাটা শুরু হবে, যা চলবে মে মাসের শেষ পর্যন্ত। এ সময় কৃষক যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং সঠিক দাম পায় সে জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আগাম ধান ক্রয় অভিযান পরিচালনা করা যেতে পারে। গ্রাম থেকে শহরে সবজি, দুধ, ডিম, মাছসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য পরিবহন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে গ্রামে এসবের দাম কমে গেছে। খাদ্য সরবরাহ চেইন যাতে স্বাভাবিক থাকে সে জন্য বিশেষ ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। এ ছাড়া সংকট-পরবর্তী সময় গ্রামাঞ্চলের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ক্ষতি পুষিয়ে পুনরায় ব্যবসা চালু করার জন্য অর্থায়নসহ অন্যান্য সহযোগিতা পৌঁছানোর পদ্ধতি-প্রক্রিয়াও আগাম নেওয়া উচিত।
এ ছাড়া জরিপে পাওয়া অন্য উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলোর মধ্যে দেখা যায়, নি¤œ আয়ের মানুষ জীবিকার দিক থেকে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৮৯ শতাংশ চরম দরিদ্রে পরিণত হয়েছে অর্থাৎ দারিদ্র্যরেখার নি¤œসীমার নিচে নেমে গেছে। এ ছাড়া করোনা মহামারির আগে জরিপে অংশ নেওয়া ২৬৭৫ জনের গড় আয় ১৪,৫৯৯ টাকা থাকলেও করোনা প্রাদুর্ভাবের পর তাদের গড় আয় কমে দাঁড়িয়েছে ৩,৭৪২ টাকায়। দেশের চট্টগ্রাম (৮৪%), রংপুর (৮১%) এবং সিলেট বিভাগের (৮০%) মানুষের আয় কমেছে সবচেয়ে বেশি। এদিকে সরকারি ছুটি বা সামাজিক দূরত্বের কারণে ৭২ শতাংশ মানুষ কাজ হারিয়েছে অথবা তাদের কাজ কমে গেছে। ৮ শতাংশ মানুষের কাজ থাকলেও এখনো বেতন পায়নি। কৃষিকাজে সম্পৃক্তদের (৬৫%) তুলনায় অ-কৃষি খাতের দিনমজুর বেশি (৭৭%) ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৫১ শতাংশ রিকশাচালক, ৫৮ শতাংশ কারখানা শ্রমিক, ৬২ শতাংশ দিনমজুর, ৬৬ শতাংশ হোটেল/রেস্তোরাঁকর্মী জানান, চলতি মাসে তাঁদের আয় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।
এ ছাড়া করোনাভাইরাস সম্পর্কে ৯৯.৬ শতাংশ মানুষ শুনেছেন বলে জরিপে উঠে এসেছে। ৪৮ শতাংশ মানুষ মনে করেন, সরকারি হাসপাতালে কভিড-১৯-এর রোগীর চিকিৎসা হয় না। এ ছাড়া ৯ শতাংশ মানুষ জানেনই না এই অবস্থায় কী করা উচিত।
এদিকে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারের সাধারণ ছুটির ঘোষণাকে সমর্থন করেছেন ৬৮ শতাংশ মানুষ, সমর্থন করেননি ৭ শতাংশ। মহামারি ঠেকাতে সরকারের ভূমিকা যথেষ্ট বলে মনে করেন ৬৪ শতাংশ মানুষ। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মাত্র ৪ শতাংশ মানুষ (যাদের বেশির ভাগের বাস শহরে) জরুরি ত্রাণ পেয়েছেন বলে জরিপে উঠে এসেছে। সমস্যা দীর্ঘায়িত হলে ধার-দেনার কথা চিন্তা করছেন ১৯ শতাংশ মানুষ। মূলত কোরোনাভাইরাসের স্বাস্থ্যগত দিকগুলো সম্পর্কে নি¤œ আয়ের মানুষের উপলব্ধি এবং এর অর্থনৈতিক সংকট সম্পর্কে ধারণা পেতে জরিপটি পরিচালিত হয় বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। ব্র্যাকের মাইক্রোফাইন্যান্স, আরবান ডেভেলপমেন্ট প্রগ্রাম এবং পার্টনারশিপ স্ট্রেংদেনিং ইউনিটের কর্মীরা এই জরিপের তথ্য সংগ্রহ করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।