পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের সচেতন ইমাম ও মুসল্লি সমাজ আবেগমুক্ত শরিয়তের বিধান বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। তারা বিজ্ঞ ও সচেতন আলেম সমাজের দেওয়া নির্দেশনা পুরোপুরি মেনে চলবেন। এই ছিল রাজধানীর একটি অনলাইন ইমাম সম্মেলনের সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশের মসজিদসমূহ এই মুহূর্তে লকডাউনের আওতায় আনা উচিত। মারাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সরকার এর দায় এড়াতে পারবে না।
বর্তমানে মক্কা-মদিনাসহ সারা বিশ্বের প্রায় সব মসজিদ লকডাউনের আওতায়। ইমাম-মুয়াজ্জিন খাদেমসহ সীমিত কয়েকজন জামাত কায়েম করেন। সব মুসল্লি নিজ নিজ গৃহে নামাজ পড়ছেন। এমতাবস্থায় কেবল ব্যতিক্রম বাংলাদেশের কিছু মসজিদ। অনেক মসজিদে মুসল্লি বৃদ্ধি পেয়েছে। যা করোনাভাইরাস বিস্তারে সহায়ক হতে পারে। ইমামগণ বলেন, আমরা মুসল্লিগণকে মসজিদে না এসে নামাজ বাসাবাড়িতে পড়ার জন্য যতই বলছি ততোই উল্টো ফলাফল প্রকাশ পাচ্ছে। ফাঁকা হয়ে দাঁড়াতে বললে তারা আরো মিলেমিশে দাঁড়ান, বরং ক্ষেত্রবিশেষ উল্টো মন্তব্য করে, ইমাম সাহেবের আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল (ভরসা) কম। এছাড়া মসজিদগুলি কমিটি শাসিত। কমিটির যত মানুষ, তত মত। ইমামের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন।
এ বিষয়ে খতিব মুফতি ওযায়ের আমীন কর্তৃক প্রচারিত বিবৃতিতে ইমামগণ বলেন, সরকারের ভাবে এমন মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, ওলামায়ে কেরামের অনুমোদনের অভাবে সরকার মসজিদকে লকডাউনের আওতায় আনতে পারছেন না। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে দুইবার মিটিং করেও সরকার আলেমদের কথা সামনে এনে জনগণকে বোঝাতে চাইছে যে, আলেমদের পরামর্শ ছাড়া মুসল্লিদের স্রোত সরকার ফেরাবার চেষ্টা করবে না। আসলে বাস্তবতা কী? দেশের কোন সিদ্ধান্তটা ওলামায়ে কেরামের অনুমোদনের জন্য আটকে থাকে। আমরা তো দেখি, ওলামায়ে কেরামের বিরোধিতার পরও হাজারো সিদ্ধান্ত সরকার নিয়ে থাকে।
ইমামগণ বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বলে দিয়েছে মসজিদে সীমিত আকারে সংক্ষিপ্তভাবে জামাত ও জুমা চলবে। সাধারণ মুসল্লিগণ নিজ গৃহে নামাজ পড়বেন। কিন্তু সীমিতকরণের সুস্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা না থাকায় সীমিতকরণের অনুরোধ জানানোর পর মসজিদে মৌসুমী মুসল্লির সংখ্যা আরো বাড়ছে। এখানে মুসল্লি সমাগম সত্যিই সীমিত হচ্ছেন না কেন? (অথচ সীমিত না বলে ইমাম-মুয়াজ্জিন ও অন্য দুই একজন নিয়ে জামাত ও জুমা হবে, এর বেশি মুসল্লি আসবেন না বলে দিলেই হত)। এ ব্যাপারে ফাউন্ডেশনের বক্তব্য কী? অথবা এর জন্য সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে না কেন? আলেম সমাজ, ইমাম, খতিব ও সচেতন ধর্মপ্রাণ মানুষ তা জানতে চায়।
সউদী আরবসহ সারা মুসলিম বিশ্বের এমনকি সারা দুনিয়ার মসজিদসমূহে সাধারণের গমনে নিষেধাজ্ঞা জারি ও শক্তি প্রয়োগে, এমনকি কারফিউ দিয়ে বলবৎ করা হয়েছে উল্লেখ করে তারা আরো বলেন, যেসব দেশে মসজিদকে লকডাউন করা হয়েছে সেখানে কি ইমাম-খতিবদের পক্ষ থেকে করা হয়েছে, নাকি সরকারের পক্ষ থেকে করা হয়েছে? অবশ্যই সরকারের পক্ষ থেকে করা হয়েছে। তাহলে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ইমামদের কেন দায় নিতে হবে? সরকার কেন সিদ্ধান্ত নিবে না? কোনো অবস্থায়ই সরকার এর দায় এড়াতে পারে না।
ইমাম-খতিবগণ সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, আপনারা বিজ্ঞ ও সচেতন ওলামায়ে কেরামের দেয়া পরামর্শ দ্রুত বাস্তবায়ন করুন। করোনাভাইরাসের ব্যাপক বিস্তারের পূর্বে যথাযথ সিদ্ধান্ত নিন এবং তা বাস্তবায়ন করুন। অতি সীমিত আকারে আজান-নামাজ-জুমা চালু রেখে সব মুসল্লিকে ঘরে নামাজ পড়তে বাধ্য করুন। জুমা ও শবে বরাতে যেন তারা ঘরেই নামাজ পড়েন। বিপদের কিছুদিন শরিয়তের এ সতর্কতামূলক নির্দেশনা মেনে চলে এবং ঘরে অবস্থান করে তারা অশেষ নেকি পাবেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেলে ইন শা আল্লাহ, সব সময়ের মতো তারা প্রাণভরে মসজিদে নামাজ-বন্দেগি করতে পারবেন।
এ ছিল রাজধানীর ইমামগণের একটি সম্মিলিত বক্তব্য। এ বিষয়ে মক্কা ও মদিনার দুই হারাম শরিফের বর্তমান নামাজ পদ্ধতি অনুসরণ করা এবং সারা দুনিয়ার মান্য মুফতিগণের ফতোয়া ও নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দায়িত্ব। কিন্তু যে কোনো কারণে দেশের করোনা পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যেতে থাকলেও মসজিদের সমাগমটি কেবল ইমাম ও খতিবগণের কাঁধে একটি দায়ের মতো চাপিয়ে রেখে সরকার সময় ক্ষেপণ করছে। যখন মাসাধিককাল থেকে হারামাইন শরিফাইন সীমিত আকারে নামাযের দৃষ্টান্ত পেশ করেছে। ইতোমধ্যে ওমরাহ স্থগিত এবং বর্তমানে হজ বাতিলের কথা প্রায় পাকা হতে যাচ্ছে। এসব সরকার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, আলেমগণ শুধু পরামর্শ দিচ্ছেন। বাংলাদেশেও মুসল্লিদের কেবল অনুরোধ করা ছাড়া ইমামগণের বেশি কিছু করার নেই। এ প্রসঙ্গে দেওবন্দ, আল-আজহার, হারামাইন শরিফাইন, কুয়েত-কাতার, ভারত-পাকিস্তান, বাংলাদেশ বিশেষত আল্লামা মুফতি তাকি ওসমানী, আল্লামা খালেদ সাইফুল্লাহ রাহমানীসহ বিশ্বের সব আলেম শুধু মসজিদ, আজান, জামাত, জুমা চার-পাঁচজন লোক নিয়ে চালু রাখা এবং মহামারি কবলিত ও ভয়াবহ সম্ভাবনাময় সংক্রমণের আশঙ্কাজনিত শরিয়তসম্মত কারণে মুসল্লিদের ঘরে নামাজ পড়ার অনুরোধ পাওয়া যাওয়ার পরেও বাংলাদেশে মুসল্লিদের কেন এ হুকুম পালনে বাধ্য করা হচ্ছে না তা বোধগম্য নয়। বাজারে, রাস্তঘাটে প্রয়োজন ছাড়া চলাফেরা বন্ধ। সারাদেশে দীর্ঘদিনের সাধারণ ছুটি। প্রায় ১৮ কোটি মানুষের অনুন্নত ও বিশৃঙ্খল দেশে সব বাহিনী কাজ করে মানুষকে ঘরে রাখার ক্ষেত্রে যথাসম্ভব ভালো সাফল্য দেখিয়েছে। মসজিদের ব্যাপারে তারা ব্যর্থ কেন? এটা কি কোনো বেøইমগেম সাজানোর জন্য। আল্লাহ না করুন, এদেশে মহামারি বড় ও ভয়াবহ রূপ নিলে কেউ যেন অনিয়ন্ত্রিত ও আবেগপ্রবণ নামাজিদের দোষ দিতে না পারে। এই মুহূর্তে এর বেশি বলার কিছু নেই। এরই মধ্যে আমরা দেখেছি, পাকিস্তানে আলেমগণের এ পরামর্শ না মানায় ৩৪ জন ইমামকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। দুঃখজনক হলেও আলেমদের সিদ্ধান্ত না মেনে তাবলীগি এজতেমা করায় মালয়েশিয়ায় প্রথম সেখান থেকেই করোনাভাইরাস ছড়িয়ে যায় যা সামাল দিতে দেশটি গলদঘর্ম হচ্ছে। পাকিস্তানে রাইওয়েন্ড এজতেমা থেকে সমস্যা দেখা দিয়েছে, সিন্ধুতে তাবলীগি জামাতকে গণপ্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়েছে। দিল্লির সা’দ সাহেবের বিষয় এখন সারা ভারতে মুসলমানদের জন্য বোঝার ওপর শাকের আঁটির মতো রূপ নিয়েছে। নিজাম উদ্দিন মারকাজ পুলিশের হাতে। মাওলানা সা’দ সাহেব মামলা ও গ্রেফতারির মুখোমুখি। এর চেয়েও বেশি শঙ্কা রয়েছে তার করোনা পজেটিভ হওয়ায়। ইতোমধ্যে কয়েকজন তাবলীগি প্রাণ হারিয়েছেন, কয়েক শ’ আক্রান্ত, বাকিরা চরম হয়রানির শিকার। বাংলাদেশিরাও দিল্লিতে আটকা পড়েছেন। অবশ্য এসবের পর ঢাকার কাকরাইল মসজিদ তার আওতাধীন সকল জামাতকে বাড়ি ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। পরিস্থিতির নাজুকত্ব বুঝতে হবে, অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করি না হয়ে বিজ্ঞ আলেমদের কথা শুনতে হবে, বেশি আবেগ না দেখিয়ে শরিয়তের বিধান মানতে হবে।
এই মুহূর্তে মসজিদে বড় জামাত, জুমা, শবেবরাত, তাবলীগী জামাত, দোয়া মাহফিল ও লোকসমাগম এড়িয়ে চলাই ইসলামের নির্দেশ। এ সংক্রান্ত বহু আয়াত ও হাদিস আলেমগণের নির্দেশিকায় উল্লেখ করা আছে। আমরা কেবল ইতিহাস থেকে কিছু বাস্তবতা ও সাহাবায়ে কেরামের কিছু নির্দেশনা পেশ করছি।
ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) মহামারি সম্পর্কে তার অনবদ্য গ্রন্থ ‘বাজলুল মাঊন ফি ফাদ্বলিত তাউন’ এ দুটি ঘটনা উল্লেখ করেছেন। দামেশকে একবার মহামারি ছড়িয়ে পড়েছিল, তখন তারা হাজারো মানুষ সমবেত হয়ে ভাইরাস থেকে রক্ষার জন্য দোয়া করেছিলেন। আগে প্রতিদিন ৫০ জন করে মারা যেত দোয়া মাহফিলের পর হাজার মানুষ মারা যেতে লাগল।
অনুরূপ, কায়রোতে ৮৩৩ হি সনে ব্যাপক মহামারি সৃষ্টি হয়েছিল। সকলে তিন দিন রোযা রেখে মরুভূমিতে গিয়ে দোয়া করল। জমায়েতের ফল হল হিতে বিপরীত। মৃত্যুর সংখ্যা এক লাফে বেড়ে গেল দৈনিক হাজারে।
দোয়া মাহফিল ভালো নিঃসন্দেহে। কিন্তু মহামারির সময় ঘরে অবস্থান করা ইসলামের নির্দেশ। আর এ কারণে ভয়াবহ আমওয়াস মহামারির সময় আমর বিন আস (রা.) বললেন, হে লোকসকল, এ মহামারি হল আগুনের মত। যখন আসে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। কাজেই তোমরা পাহাড়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়। তখন সকলে পাহাড়ে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল।
সুতরাং আমাদের প্রত্যেককে এখন ইসলামের নির্দেশনা মেনে ঘরমুখী হতে হবে এবং ঘরকেই মসজিদে রূপান্তরিত করতে হবে। দুনিয়ার সব বিজ্ঞ ও সচেতন মুফতি এবং আলেমগণের নির্দেশনা মেনে ঘরে থাকুন। এমনকি জুমা ও শবেবরাতেও ঘরে নামাজ ও ইবাদতে নিমগ্ন থাকুন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।