Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

করোনায় বিপর্যস্থ মহেশখালীর পানের বাজার

বিধি মেনে বাজার চালু রাখার দাবী পানচাষীদের

কক্সবাজার থেকে বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৪ এপ্রিল, ২০২০, ৪:০৩ পিএম

মহেশখালীর মিঠা পানের নাম আছে সারা দেশে। কিন্তু করোনার কারণে মহেশখালীতে পানের বাজার বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। পানের বাজার বন্ধ করায় মহা দুর্ভোগে পড়েছে মহেশখালীর পানচাষীরা। লবণের মূল্য কমে যাওয়ায় লবণ বিক্রি বন্ধ। বর্তমানে মহেশখালীতে একমাত্র পান বিক্রির আয় তাদের সম্বল। পান বিক্রি বন্ধ হলে মহেশখালীর ৮০ ভাগ মানুষকে না খেয়ে থাকতে হবে! তাই পানের বাজার বন্ধ নয়; নিয়ন্ত্রিতভাবে পান বেচাকেনার ব্যবস্থা করার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পানচাষীরা।

স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমান মৌসুমে মহেশখালীতে অন্তত ৮০ভাগ পরিবার পানচাষ করেছে। মহেশখালীর আয়ের উৎস পান ও লবণ হলেও দাম না থাকা লবণ বিক্রি হচ্ছে না। তাই বর্তমানে এই উপজেলার চার লাখ মানুষের মধ্যে অন্তত আড়াই লাখ মানুষ পানের আয় দিয়ে সংসার চালাচ্ছে। এর মধ্যে চাষী, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা রয়েছেন।

একজন পানচাষী জানান, মহেশখালীতে উৎপাদিত মিষ্টি পানের কদর বেশী। তাই এই পানের চাহিদাও বেশী। মহেশখালীর মিঠা পান বিক্রি হয়ে থাকে সারা দেশের বিভিন্ন বাজারে। ভালো সময়ে এক বিরা পান ৫০০ শত টাকা বিক্রি হলেও করোনা পরিস্থিতিতে এখন তা বিক্রি হচ্ছে দেড় শ থেকে দুই শত টাকায়। তাও বেচা বিক্রি বন্ধ হয়ে গেলে চাষীদের হবে সর্বনাশ।

চাষীরা জানান, করোনার ভাইরাসের কারণে এমনিতে পানের দাম কমে গেছে। এর মধ্যে পানের বাজার বন্ধ থাকলে গাছেই নষ্ট হয়ে যাবে অনন্ত শত কোটি টাকার পান। বাজার বন্ধ থাকলে পান বিক্রির আর কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নেই। যার ফলে পান বিক্রি করতে না পারলে পানের সাথে জড়িত অন্তত তিন লাখ মানুষ অর্থাভাবে চরমভাবে খাদ্য সংকটে পড়বে।

পানের ব্যবসায়ীরা জানান, করোনার ভাইরাসের কারণে গণজমায়েত করা যাচ্ছে না। কিন্তু পানের বাজারে গণজমায়েত হয় ঠিক। তবে নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে পান বেচাকেনার বাজার বসানো যাবে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, নির্দিষ্ট বাজার বাদ দিয়ে বিভিন্ন এলাকার বিশাল মাঠে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার পদ্ধতি চালু করে পানের বেচাকেনা করা যেতে পারে।

এ ব্যাপারে হোয়ানক টাইমবাজার পানবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোঃ সরওয়ার বলেন, গণজমায়েত এড়াতে হলে বর্তমানে যেসব স্থানে বাজার হয় সেখানে বাজার বসানো যাবে না। বিকল্প হিসেবে আশেপাশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন বিশালাকার খোলা মাঠগুলোতে পানের বাজার বসানো যাবে। সেখানে করোনা সংক্রমণ রোধের নিয়ম মেনে পান ক্রেতা ও বিক্রেতারা নির্দিষ্ট দূরত বজায় রেখে নিরাপদভাবে পান বেচাকেনা করতে পারবে। সবাইকে দূরত্ব বজায় রাখতে সচেতন এবং কঠোর হতে হবে। চট্টগ্রাম, পটিয়া, কেরানীহাটসহ পানের বড় বড় আড়তগুলো এভাবে নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে চালু রয়েছে বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহেশখালীর পৌরসভা, বড়মহেশখালী, ছোটমহেশখালী, হোয়ানক, কালারমারছড়া ও শাপলাপুরে পানচাষ হয়। এসব এলাকার নির্দিষ্ট বাজারে রয়েছে পানের বাজার। তবে প্রতিটি বাজারের আশেপাশে রয়েছে বড় বড় মাঠও। করোনায় এই লকডাউনের সময়ে বিকল্প মাঠগুলোতে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে পানের বাজার চালু রাখার দাবি জানিয়েছেন চাষী ও ব্যবসায়ীরা।

মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাফর আলম বলেন, করোনা থেকে বাঁচতে সরকারের নির্দেশনা অবশ্যই মানতে হবে। করোনার থেকে সবাই নিরাপদ রাখতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ওনার এই প্রচেষ্টায় সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে। তবে লকডাউন হলেও খাদ্যপণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

তাদের মতে পানও একটি খাদ্যপণ্য। কেননা যারা পান খায় তারা না খেয়ে থাকতে পারলেও পান বিক্রি করতে না পারলে না খেয়ে মারা যাবে চাষীরা। এটা তাদের জন্য খাদ্যপণ্যের মতো। তাই উপজেলা প্রশাসনের উচিত হবে, নিয়ন্ত্রিভাবে পানের বাজার চালু রাখা। তা না হলে প্রতি ঘরে ঘরে না খেয়ে থাকবে মানুষ। অন্যদিকে গাছেই পঁচে যাবে শত কোটি টাকার পান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মহেশখালীর পান
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ