Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিশা দেশাইয়ের ‘গুরুত্বপূর্ণ’ সফর এবং সরকারের অবস্থান পরিবর্তন

প্রকাশের সময় : ১৬ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মুনশী আবদুল মাননান

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল তার সদ্য সমাপ্ত বাংলাদেশ সফরকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বলে উল্লেখ করেছেন। এই সফরকেন্দ্রিক পাঁচটি টুইট বার্তার দুটিতে তিনি এই উল্লেখ করেছেন। বলেছেন, বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ একটি সফর শেষ করলাম। সরাসরি না বললেও তার এই গুরুত্বপূর্ণ সফর যে ‘সফল’ হয়েছে, সেটা অনুমান করা যায়। গুলশানে রেস্টুরেন্ট ও শোলাকিয়ায় সন্ত্রাসী হামলার পর নিশা দেশাই বাংলাদেশ সফরে আসেন। তিন দিনের এ সফরে তিনি ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করেন। প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ছাড়াও তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্র সচিব, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা, আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিক ও কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক করেন। নিশা দেশাই গত আড়াই বছরের বেশি সময় দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে তিনি বেশ কয়েকবার বাংলাদেশ সফর করেছেন। কিন্তু সদ্য সমাপ্ত সফরের মতো কোনো সফর সম্পর্কেই তাকে এরকম খোলাখুলি মতামত দিতে দেখা যায়নি। এটা মনে করার কোনো কারণ নেই, তার আগের সফরগুলো কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল। অবশ্যই সেগুলোও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তবে সম্ভবত তার মধ্যে সাফল্যের অংশ তুলনামূলকভাবে কম ছিল। সে কারণে কোনো সফর কেউ এরকম গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিহিত করেননি। এই সফরে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তার সাফল্যের মাত্রা বেশি হওয়ায় বোধকরি তিনি একে এই অভিধায় হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
কী এই সাফল্য তা তার বক্তব্য থেকে অস্পষ্ট থাকেনি। টুইট বার্তায় তিনি জানিয়েছেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ও বাংলাদেশের পাশে থাকার বিষয়টি জানিয়েছি। শুধু এটি জানানোই নয়, আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানতে গিয়ে তিনি বলেছেন, সন্ত্রাসী হামলা ঠেকানো এবং এসব ঘটনা তদন্তে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীকে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে সহায়তা করতে পারে সে বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। একই বিষয়ে চ্যানেল ২৪ -কে তিনি বলেছেন, সন্ত্রাসীরা একে অন্যের কাছ থেকে শিখছে। এটা আমরা দেখেছি। ১ জুলাইয়ের হামলায় দেখেছি, আইএসআইএসকে বা আমরা যাদের দায়েশ হিসেবে অভিহিত করি তারা হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে। হোম গ্রোন (দেশে বেড়ে ওঠা) নেটওয়ার্কের সঙ্গে আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের যোগাযোগ আছে। আসলে কীভাবে এসব যোগাযোগ ঘটে এবং তারা কী চায় এটি আমরা বিস্তারিত জানতে বদ্ধপরিকর। ওইসব নেটওয়ার্ক গুঁড়িয়ে দেয়া এবং তাদের ধ্বংসাত্মক ও অন্ধকার মতাদর্শ রুখে দেয়া বিশ্বের সব নাগরিকের, সব সমাজের জন্য চ্যালেঞ্জ। ঐক্যবদ্ধভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াতে এসেছি।
জানা গেছে, নিশা দেশাই যুক্তরাষ্ট্রের তরফে সহযোগিতায় সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেন। এ সম্পর্কে সরকারের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পত্রিকান্তরে বলেছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে আলোচনার সময় মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার দেশের পক্ষ থেকে সহযোগিতার একটি আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেন। প্রস্তাবে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সামর্থ্য বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্র কোথায় কোথায় সহযোগিতা দেবে তা বলা হয়েছে। ওই কর্মকর্তা আরো জানিয়েছেন, সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ের আলোচনায় জঙ্গি হামলা মোকাবিলায় সরকারের কার্যকর কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা সেটা বুঝতে চেয়েছেন নিশা দেশাই। বিশেষ করে বাংলাদেশের যে কোনো স্থানে জঙ্গি হামলায় সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে তা প্রতিহত করতে সরকারের প্রস্তুতি সম্পর্কে তিনি জানার চেষ্টা করেছেন। তবে এসব আলোচনা শেষে তার মনে হয়েছে, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ক্ষেত্রে সরকারের পদক্ষেপে ঘাটতি আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব সম্পর্কে সরকারের মনোভাব ও অবস্থান বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ সম্পর্কে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ এখনো ঠিক করেনি যে কোন কোন ক্ষেত্রে এই সহযোগিতা গ্রহণ করা হবে। এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশের অবস্থান পরিষ্কার করার পূর্বে বাংলাদেশ দেখবে, জঙ্গি মোকাবিলার ক্ষেত্রে কোথায় কোথায় সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে। তার এ বক্তব্য থেকে স্পষ্টতই বোঝা যায়, মার্কিন প্রস্তাব সরকার নাকচ করে দেয়নি। ইতোমধ্যে সরকারি মহল থেকে জানানো হয়েছে, প্রয়োজন হলে সহায়তা প্রদানে আগ্রহী দেশগুলোর সহায়তা গ্রহণ করা হবে।
একটি বিষয়ে নিশা দেশাইয়ের সন্তোষ রাখঢাকের মধ্যে থাকেনি। স্মরণ করা যেতে পারে, যুক্তরাষ্ট্র অনেক দিন ধরে বলে আসছে, বাংলাদেশে সন্ত্রাসী হামলা ও হত্যাকা-ের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সন্ত্রাসী চক্র বিশেষ করে আইএসের সংযোগ আছে। বাংলাদেশে আইএসের অস্তিত্ব ও তৎপরতা রয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের তরফে যুক্তরাষ্ট্রের এই দাবি অস্বীকার করা হয়েছে পূর্বাপর। কিন্তু গুলশানের রেস্টুরেন্টে হামলা ও হত্যাকা-ের পর অনেকেই বিশ্বাস করতে বাধ্য হচ্ছেন, এই ভয়াবহ হামলা ও হত্যাকা-ের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে আইএসের সম্পর্ক রয়েছে। সন্ত্রাসী হোম গ্রোন হলেও তাদের সঙ্গে আইএসের সম্পর্ক থাকতে পারে। নিশা দেশাইও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে সামনে এনেছেন। নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন পত্রিকান্তরে এ বিষয়ে তার মতামত দিয়েছেন এভাবে : ‘গুলশানের হামলায় যে হোম গ্রোন (দেশে বেড়ে ওঠা) জঙ্গি জড়িত, তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। আমরা সব সময় জঙ্গিদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক যোগসূত্রের বিষয়টি অস্বীকার করে আসছি। কিন্তু এই হামলা শেষে আইএসের দাবির পর আমরা এখন কী বলব। আপনি মুখ ফুটে বলতে পারছেন না হোম গ্রোন জঙ্গিরা আইএসের আদর্শ ধারণ করেছে। আন্তর্জাতিক সংগঠনটির সঙ্গে তাদের তো সম্পর্ক রয়েছে। তা না হলে তাদের ছবি আইএসের সাইট থেকে প্রথম পাওয়া গেল কীভাবে। ওই ছবি প্রচার না হলে জানতেই পারতাম না জঙ্গি হামলায় কারা জড়িত। তখন পুলিশের কথাই বিশ্বাস করতে হতো যে, আকাশ, বিকাশ, ডনরা ওই হামলা চালিয়েছে। প্রযুক্তির উৎকর্ষের এই যুগে দূরে বসেও দুই পক্ষের যোগাযোগ অনায়াসেই সম্ভব।’
এই প্রথম সরকার সরাসরি বলেনি যে, গুলশানের রেস্টুরেন্টে হামলার ঘটনায় বিদেশি কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের সংযোগ বা যোগসাজশ ছিল না। বলেনি, এর সঙ্গে কোনোভাবেই আইএস জড়িত নয়। সন্ত্রাসীরা হোম গ্রোন এ কথা বার বার জোর দিয়ে বলা হলেও তাদের সঙ্গে আইএসের কোনো পর্যায়ে কোনো সম্পৃক্ততা নেই, তা জোর দিয়ে বলতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্র যেন এরকম একটা ঘটনার অপেক্ষাতেই ছিল। নিশা দেশাইয়ের সন্তোষের বড় জায়গাটি এখানে যে, সরকার এই ঘটনার সঙ্গে আন্তর্জাতিক কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের সম্পৃক্ততা নেই, সেটা আগের মতো দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারেনি। না বলার মধ্যদিয়ে স্বীকার করে নেয়ার একটা অবস্থান স্পষ্ট রয়েছে। নিশা দেশাই একেই বলেছেন, সরকার জঙ্গিবাদ নিয়ে তার অতীত অবস্থান থেকে সরে এসেছে। তিনি স্পষ্ট করেই বলেছেন, ঢাকার গুলশান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় হামলার সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদের সম্পর্ক হয়েছে। অতীতে বাংলাদেশ সরকার এই সমস্যাকে শুধুমাত্র দেশের ভিতরে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের ফসল বলে মনে করত। এখন সরকার মনে করতে শুরু করেছে যে, এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক একটি যোগসাজশ রয়েছে। নিশা দেশাইয়ের ভাষায়, সরকারের মনে করাটা একটা ইতিবাচক দিক।
এ যাবৎকালে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলা ও হত্যাকা-ের ঘটনার সঙ্গে কোনো আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনের সম্পৃক্ততা ও সম্পর্কের কথা সরকার স্বীকার করেনি। এর পেছনে কৌশলগত কারণ থাকতে পারে। এর একটি বিপদের দিকও আছে। এটা স্বীকার করে নিলে বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর নাক গলানোর একটা সুযোগ তৈরি হতে পারে, যা ঠেকানো কোনো দুর্বল ও ছোট দেশের পক্ষে সম্ভব নয়। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গত বছরের শেষ দিকে দেয়া একটি বক্তব্যের কথা স্মরণ করা যেতে পারে। তার তিন দিনের নেদারল্যান্ডস সফরের বিষয় অবহিত করার জন্য আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সন্ত্রাসী হামলা ও হত্যাকা-ের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ নিরাপদ কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ঘটনা ঘটছে। বাংলাদেশকে কোনোমতে অনিরাপদ ঘোষণা করা ও বাংলাদেশে আইএস আছে, জঙ্গি আছে, যদি এ ধরনের কিছু স্বীকার করানো যায় তাহলে বাংলাদেশের ওপর তারা হামলে পড়তে পারে। প্রচ- চাপ আছে, কেন স্বীকার করি না।’ ওই সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেছিলেন, বাংলাদেশে আইএস আছে, জঙ্গি আছে, যদি এ ধরনের একটি স্বীকৃতি আদায় করতে পারে, আমাদের অবস্থা কী হবে? দেশের মানুষ কি একবার ভেবে দেখবেন? আজকে সিরিয়াতে কী হচ্ছে, ইরাকে কী হচ্ছে, আফগানিস্তান-পাকিস্তানের ঘটনাই বা কীÑ একবার চিন্তা করেছেন? এসব জায়গায় যে ঘটনাগুলো ঘটে যাচ্ছে, সেই জায়গায় বাংলাদেশকে নিয়ে আসার একটা ষড়যন্ত্র আন্তর্জাতিকভাবে যেমন আছে, তেমনি আমাদের দেশের কিছু মানুষও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত।
কৌশলগত কারণেই হোক বা অন্য কোনো কারণেই হোক, সরকার এত দিন ধরে দেশে ঘটতে থাকা সন্ত্রাসী হামলা ও হত্যাকা-ের ঘটনার সঙ্গে আইএস বা আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনগুলোর সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে এলেও এখন যে অস্বীকার করতে পারছে না, এতে প্রকারান্তরে যুক্তরাষ্ট্রের অভিমত ও দাবিই প্রতিষ্ঠা লাভ করছে। এর সবচেয়ে গুরুতর দিক হলো, অতঃপর জঙ্গি দমনের নামে ‘প্রভাবশালী’ দেশগুলোর এখানে ছুটে আসার পথ রচিত হতে পারে। জঙ্গি দমনে সহযোগিতার কথা বলে তারা আসতে চাইতে পারে। বহু আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা প্রদানের আগ্রহ দেখিয়ে আসছে। পিছিয়ে নেই প্রতিবেশী ভারতও। এ দুটি দেশ এবারও সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে, বিশেষ আগ্রহ প্রদর্শন করেছে। বলাবাহুল্য, আমরা আমাদের দেশটাকে কোনোভাবেই সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান বা পাকিস্তানের মতো দেখতে চাই না। আমরা কোনোক্রমেই কোনো দেশকে ‘হামলে পড়ার’ সুযোগ দিয়ে সর্বনাশ ডেকে আনতে চাই না। চাই না বলেই আমাদের সতর্ক ও সাবধান হতে হবে, জাতীয়ভাবে ও রাজনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। হোম গ্রোন সন্ত্রাস বলে সন্ত্রাসী হামলা ও হত্যাকা-ের ঘটনাকে খাটো করে দেখা যাবে না। বর্তমানকালে কোনো কিছুই আর দেশ বিশেষের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিষয়টি তো নয়ই। তাই প্রথমত জাতীয়ভাবে তা মোকাবিলার পদক্ষেপ নিতে হবে। এ মুহূর্তে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য ও ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার বিকল্প নেই। ইতোমধ্যে বিভিন্ন মহল থেকে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার তাগিদ দেয়া হয়েছে। সরকারের দিক থেকে এখনো এ ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া লক্ষ্য করা যায়নি। পর্যবেক্ষক মহলের মতে, দেশে যে গণতন্ত্রহীনতা, রাজনীতিহীনতা, সুশাসনের অভাব ও ন্যায়বিচার প্রাপ্তির অনিশ্চয়তার পরিবেশ বিরাজমান, অবিলম্বে তা অবসানে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া অপরিহার্য। এতে সন্ত্রাসবাদের উত্থান-বিস্তার অনেকটাই অবরুদ্ধ হয়ে যাবে। এ বিষয়ে সরকারের ইতিবাচক মনোভাব ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ আবশ্যক। দেশ যে কঠিন এক পরিস্থিতির মধ্যে নিক্ষিপ্ত তা বিশদ ব্যাখ্যার অবকাশ রাখে না। এ পরিস্থিতি উত্তরণের প্রধান দায়িত্ব অবশ্যই সরকারের। সরকারকেই সব বিপদ ও বিপদের আশঙ্কা থেকে দেশকে মুক্ত রাখতে হবে। এখন ‘রাজনীতি’ ও ব্লেম গেমের খেলার কোনো সুযোগ নেই। পর্যবেক্ষকরা সরকারের একটি ব্যাপারে বিচক্ষণতার প্রশংসা করছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের পক্ষ থেকে সন্ত্রাস মোকাবিলায় সহযোগিতা প্রদানের প্রস্তাব তাৎক্ষণিকভাবে গ্রহণ না করার মধ্যে এই বিচক্ষণতা প্রদর্শিত হয়েছে বলে তারা মনে করেন।
অবশ্য এটাও অস্বীকারের উপায় নেই, সন্ত্রাসবাদের বৈশ্বিক চরিত্র দিন দিনই স্পষ্ট হচ্ছে। এটা এখন কোনো দেশের একান্ত সমস্যা নয়, আন্তর্জাতিক সমস্যাও বটে। আন্তর্জাতিকভাবে এর মোকাবিলার চেষ্টা হচ্ছে। সেই চেষ্টা থেকে কোনো দেশের দূরে থাকা বা বিযুক্ত থাকা খুব সহজ নয়। এই প্রেক্ষাপটে সিদ্ধান্ত নিতে হবে অত্যন্ত ভেবেচিন্তে। সন্ত্রাস দমনে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ততটুকুই নেয়া যেতে পারে, যতটুকু অপরিহার্য বা না হলেই নয়। সবার ঊর্ধ্বে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় স্বার্থ। এটা বিন্দুমাত্র ক্ষুণœ হয় বা ক্ষুণœ হওয়ার আশঙ্কা থাকে এমন কিছু করা যাবে না। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এ দেশে কোনো রকম সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গিবাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। এদেশের মানুষ ঐতিহাসিকভাবে, ঐতিহ্যগতভাবে সব ধরনের সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গিবাদের বিরোধী। সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি ও ভরসায় জায়গা।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 



 

Show all comments
  • আরিফ ১৬ জুলাই, ২০১৬, ২:১১ পিএম says : 0
    একটা কথা সকলের মনে রাখা উচিত যে, দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় স্বার্থ সবার আগে।
    Total Reply(0) Reply
  • সৌরভ ১৬ জুলাই, ২০১৬, ২:১৫ পিএম says : 0
    দেশ রক্ষায় সেনাবাহিনীই যথেষ্ট।
    Total Reply(0) Reply
  • Azmol ১৬ জুলাই, ২০১৬, ২:১৫ পিএম says : 0
    এদেশের মানুষ ঐতিহাসিকভাবে, ঐতিহ্যগতভাবে সব ধরনের সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গিবাদের বিরোধী।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নিশা দেশাইয়ের ‘গুরুত্বপূর্ণ’ সফর এবং সরকারের অবস্থান পরিবর্তন
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ