Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঢাকামুখী জনস্রোত কতোটা নিরাপদ?

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ এপ্রিল, ২০২০, ১:১৫ পিএম

করোনাভাইরাস সংক্রমণ বিস্তার রোধে সারাদেশের গণপরিবহন বন্ধ। মানুষকে ঘরে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ‘সামাজিক দূরত্ব’ নিশ্চিত করার জন্য সারাদেশে সক্রিয় সশস্ত্র ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। কিন্তু সব বিধি-নিষেধ উপেক্ষা করে রাজধানীমুখী এখন হাজার হাজার মানুষ। গতকাল শুক্রবার এবং আজ শনিবার ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে পায়ে হেঁটেই ঢাকামুখী মানুষের ঢল দেখা গেছে। অন্যদিকে, দৌলতদিয়া ফেরিঘাটেও আজ সকাল থেকে ঢাকামুখী মানুষের ভিড় লেগেই আছে।
গাদাগাদি করে ঢাকা থেকে গ্রামে যাওয়া এসব মানুষ করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে কতোটা মুক্ত তা নিশ্চিত না হয়ে এভাবে তাদেরকে রাজধানীতে প্রবেশ করতে দেয়া কতোটা নিরাপদ তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
হাইওয়ে পুলিশ জানায়, শুক্রবার সকাল থেকেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ধরে হাজার হাজার মানুষ পায়ে হেঁটে ঢাকার দিকে আসে। পথিমধ্যে তারা ছোট ছোট যানবাহন ব্যবহার করে আবার পায়ে হেঁটে আসছিল। এদের অধিকাংশই গার্মেন্টস শ্রমিক। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, ৫ তারিখ থেকে গার্মেন্টস খুলবে। আগেই ঢাকায় যেতে গার্মেন্টস থেকে বলা হয়েছে। সে কারণে করোনার ভয় নিয়ে কষ্ট করেই রওনা হয়েছেন তারা। যেতে না পারলে চাকরি চলে যাবে। আজ শনিবারও একই চিত্র দেখা গেছে।
আমাদের ময়মনসিংহ প্রতিনিধি জানান, দেশে গণপরিবহন বন্ধের মধ্যে শনিবার কিছু গার্মেন্টস কারখানা খোলার কথা থাকায় ময়মনসিংহ থেকে হেঁটে ১১২ কিলোমিটার দূরের ঢাকার পথে রওনা হয়েছেন হাজারো শ্রমিক। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে ময়মনসিংহ ব্রিজের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় হাজারো গার্মেন্টস শ্রমিককে ঢাকার দিকে হেঁটে যেতে দেখা যায়। করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে লকডাউনের মধ্যে ট্রেন-বাসসহ সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ থাকায় পায়ে হেঁটেই রওনা করেছেন শ্রমিকরা। শ্রমিকরা জানান, গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ তাদেরকে সময়মতো চাকরিতে যোগদান করতে বলেছেন। অন্যথায় চাকরি চলে যাবে বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ২৫ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ‘সব নিট গার্মেন্টস’ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় বিকেএমইএ। সে সময় বিকেএমইএ থেকে জানানো হয়েছিল, সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করে পরে কারখানা বন্ধের বিষয়ে আরও বিশদ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
২৫ লাখ শ্রমিকের রোজগারের প্রতিষ্ঠান দুই হাজার ২৮৩টি কারখানার সংগঠন বিকেএমইএর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রপ্তানীমুখী শিল্পকে করোনাভাইরাস আক্রান্ত অর্থনৈতিক মন্দা থেকে রক্ষার জন্য বিশাল প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। এছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা এই শিল্পখাতের জন্য প্রদান করেছেন। এমন প্রেক্ষাপটে আমাদের কারণে কোনো শ্রমিকের যেন কোনো রূপ ক্ষতি না হয়, সেজন্য কোনোভাবেই আতঙ্কিত না হয়ে, দেশ ও দেশের মানুষকে বাঁচানোর জন্য সরকারের সিদ্ধান্তের সঙ্গে সাদৃশ্য রেখে বিকেএমইএ-র সদস্যভুক্ত সব নিট পোশাক কারখানা বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
তবে এরমধ্যে সরকার ঘোষিত ১০ দিন থেকে কর্মসূচি বাড়িয়ে আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত করেছে। কয়েকজন শ্রমিক জানান, সরকার ছুটি বর্ধিত করলেও গার্মেন্টস মালিকরা ৫ এপ্রিল থেকে কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গণপরিবহন বন্ধের মধ্যে কারখানার হাজার হাজার শ্রমিক কিভাবে ফিরবে তা কিন্তু তারা ভেবে দেখেননি।
এদিকে, দৌলতদিয়া ঘাটেও আজ সকাল থেকে হাজার হাজার শ্রমিককে ঢাকার দিকে আসতে দেখা গেছে। আমাদের রাজবাড়ী জেলা সংবাদদাতা জানান, ঢাকামুখী মানুষের বেশিরভাগই গার্মেন্টস শ্রমিক। এরা গত ২৬ মার্চ সাধারণ ছুটি ঘোষণার দুদিন আগে থেকে গাদাগাদি করে ঢাকা থেকে গ্রামের পথে রওনা করেছিলেন। এখন যানবাহন সঙ্কটে একইভাবে গাদাগাদি করে ঢাকায় ফিরছেন।
এভাবে একসাথে হাজার হাজার মানুষের ঢাকায় ফেরা কতোটা নিরাপদ না নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে। এর আগে গাদাগাদি করে গ্রামে যাওয়া এসব মানুষকে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে পাঠানোর নির্দেশনা দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু সেই নির্দেশনা কেউই মানে নি। আবার এরাই ঝুঁকিপূর্ণভাবে ঢাকায় ফিরছে। এদের মধ্যে যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নেই তা কে জানে। এ কারণে এদেরকে এভাবে ঢাকা ঢুকতে দেয়া নিরাপদ নয় বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।



 

Show all comments
  • Ruhul Amin ৪ এপ্রিল, ২০২০, ৮:০৮ পিএম says : 0
    আগে গার্মেন্টস খুলুক,সমস্যা গুরুতর পর্যায়ে গেলে আবার বন্ধ করা হবে। তারাতো শ্রমিক গোষ্ঠী,তাদের ক্ষতিতে সরকারকে তো কোন মাসুল দিতে হবে না,আর গার্মেন্টস মালিকরা দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দিতে পারলে ১০০% দায়মুক্ত।
    Total Reply(0) Reply
  • সেলিম ৪ এপ্রিল, ২০২০, ১০:১৯ পিএম says : 0
    এভাবে গার্মেন্ট শ্রমিকদের ঢাকায় ঢুকতে দেয়া একেবারেই ঠিক হয়নি।
    Total Reply(0) Reply
  • সেলিম ৪ এপ্রিল, ২০২০, ১০:২০ পিএম says : 0
    এভাবে গার্মেন্ট শ্রমিকদের ঢাকায় ঢুকতে দেয়া একেবারেই ঠিক হয়নি।
    Total Reply(0) Reply
  • করোনা ভাইরাস বাংলাদেশের জন্যে একটি ভয়াবহ গুজবের নাম মাত্র। বাংলাদেশের উপর মহান রব তায়ালার অসীম অনুগ্রহ রয়েছে। ফলে বাংলাদেশের আবহাওয়া ও তাপমাত্রায় কখনোই করোনা ভাইরাস স্প্রেড হতে পারবে না বলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ জাতিয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। এদেশের মানুষ কে ভীখারী বানানোর জন্য সরকার বিরোধী একটি চক্র কাজ করে যাচ্ছে এবং দেশে অরাজকতা তৈরী করার জন্য তথাকথিক লকডাউন বা জরুরী অবস্থা জারীর করার দাবী তুলছে। কোটি কোটি শেখ মুজিব সন্তানগণ দূর্ভিক্ষে পরে অনাহারে মৃত্যুবরণ করবে সে দিকে দেশনেত্রীর দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। অন্যথায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি অস্তিত্বের হুমকিতে পরবে। জেনে রাখা ভালো যে, করোনা ভাইরাস কাফের, মুনাফিক, মুশরিকদের উপর আপতিত এক ভয়াবহ গযব। করোনা ভাইরাস মহামারী নয়। করোনা ভাইরাস মহামারী হলে আমাদের দেশে হাজার হাজার লোক মারা যেত। মনে রখতে হবে, এই গযবে কোন মুসলাম মারা যাবে না। শুধু মাত্র কাফের, মুশরিক ও মুনাফিকরা সব ধারাবাহিক ভাবে মারা যাবে। ধারাবাহিক গযবের কেবল শুরু হয়েছে করোনা ভাইরাসে মাধ্যমে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনা

৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১০ ডিসেম্বর, ২০২২
৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ