Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আল্লাহপাক সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী

এ কে এম ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ৪ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০১ এএম

হযরত আদম (আ.) হতে বর্তমান সময় পর্যন্ত মানবজীবন যাত্রার কত যে চড়াই-উৎড়াই, উত্থান-পতন, ঘাত-প্রতিঘাত অতিবাহিত হয়েছে, তার যথার্থ হিসাব কারো জানা আছে বলে মনে হয় না। কেন হয় না, কি জন্য হয় না, সে প্রশ্নের অবতাড়না না করলেও সোজা কথায় যা সহজেই বলা যায় তা হলো, ‘মানুষের মধ্যে মাটি ও সম্পদের লোভ, ক্ষমতাও শক্তির দাপট, অহংকার ও অনিষ্ট সাধনের প্রয়াস, পূর্বযুগে যেমন ছিল তার ক্রমধারা বর্তমানেও একই গতিতে বয়ে চলেছে।

এরই মধ্যে যা কিছু হেরফের হয়েছে বলে মনে হয় তা অবস্থা, অবস্থান, পরিবেশ ও পরিস্থিতির বিভিন্নতা ছাড়া কিছুই নয়। আগের যুগের দাম্ভিকেরা সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর বলে যেমন আস্ফালন করেছে, ঠিক তেমনই বর্তমান যুগের পরাশক্তিধরেরাও নানা ছলে বলে, কলে কৌশলে একই অভিনেতাসূলভ সুনিপুন অভিনয় করে চলেছে। এই অভিনয়ের শেষ কোথায়, তা-ই বা কে জানে?

সে যাই হোক, সর্বশেষ আসমানীগ্রন্থ আল কোরআন দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করেছে, (ক) ‘আর তিনিই, আসমানসমূহ ও ভ‚মন্ডল যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছেন। আর যেখনই তিনি বলবেন, ‘হও’ তখন (সব) হয়ে যাবে। তার কথাই যথার্থ। আর তার জন্যই রয়েছে সেদিনের রাজত্ব, যেদিন শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে। তিনি অদৃশ্য ও উপস্থিত (সকল বিষয়ে) পরিজ্ঞাত। এবং তিনি প্রজ্ঞাময়, অধিক অবহিত।’ (সূরা আনয়াম : ৭৩)।

(খ) ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ বীজ ও আঁটি বিদীর্ণকারী। তিনি মৃত থেকে জীবিতকে বের করেন, এবং জীবিত থেকে মৃতকে বের করেন। তিনিই আল্লাহ, সুতরাং তোমাদের (সৎ পথ হতে) কোথায় ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে?’ (সূরা আনয়াম : ৯৫)।

(গ) ‘আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সুপ্রতিষ্ঠিত ধারক। তাকে তন্দ্রা ও নিদ্রা স্পর্শ করে না। তার জন্যই রয়েছে আকাশমন্ডলে যা কিছু আছে তা এবং জমীনে যা কিছু আছে তা। কে সে, যে তার অনুমতি ছাড়া তার নিকট সুপারিশ করবে? তিনি জানেন, যা কিছু তাদের সামনে এবং যা কিছু তাদের পেছনে রয়েছে। আর তারা তার জ্ঞানের সামান্য পরিমাণও আয়ত্ত করতে পারে না, তবে, যতখানি তিনি চান। তার সার্বভৌম ক্ষমতা বা কুরসী নভোমন্ডল ও ভ‚মন্ডল পরিব্যাপ্ত করে আছে এবং এ দু’টোর সংরক্ষণ তার জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায় না। আর তিনি সুউচ্চ, সুমহান।’ (সূরা বাকারাহ : ২৫৫)।

(ঘ) ‘তিনিই আল্লাহ, যিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই; দৃশ্য অদৃশ্যের জ্ঞাতা, তিনিই পরম করুণাময় দয়ালু। তিনিই আল্লাহ, যিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনিই বাদশাহ, মহাপবিত্র, ত্রæটিমুক্ত, নিরাপত্তাদানকারী, রক্ষক, মহা পরাক্রমশালী, মহা প্রতাপশালী, অতীব মহিমান্বিত, তারা যা অংশীদ্বার স্থাপন করে তা হতে তিনি পবিত্র মহান। তিনিই আল্লাহ, সৃষ্টিকর্তা, উদ্ভাবনকর্তা, আকৃতিদানকারী, তার রয়েছে সুন্দর নামসমূহ, নভোমÐলে ও ভ‚মÐলে যা আছে সবই তার মহিমা ঘোষণা করে। তিনি মহা পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।’ (সূরা হাশর : ২২-২৪)।

মোটকথা, উপরোল্লিখিত আয়াতে কারীমাসমূহের অর্থ ও মর্মের প্রতি গভীর দৃষ্টিতে তাকালে অতি সহজেই অনুধাবন করা যায় যে, নিখিল বিশ্বে যা কিছু তার স্থিতি, স্থায়ীত্ব, ক্রমবিকাশ, ক্রমোন্নতী ও নিয়ন্ত্রণ এমন এক শাশ্বত মহান সত্তার দান, যিনি অসীম জ্ঞান-বিচক্ষনতার অধিকারী। যিনি সার্বভৌম ক্ষমতার একচ্ছত্র অধিপতি। যার হাতে রয়েছে জীবন-মরণের বাগডোর, যিনি এক, অদ্বিতীয়, অনুপম, অবিভায্য, চিরন্তন ও অনিবার্য সত্তা। তিনিই মহান আল্লাহ। বিশ্ব জগতের সৃষ্টি, প্রতিপালক ও শৃঙ্খলা বিধানে তার কোনো শরীক নেই; নেই কোনো সহকারী, সহযোগী। তিনি তার সত্তায় যেমন একক, তেমনি তার গুণাবলীতেও একক, অতুলনীয় ও অনুপম।

আল্লাহপাকই একমাত্র সত্তা যিনি ইবাদত ও বন্দেগি, দাসত্ব, আনুগত্য পাওয়ার উপযুক্ত। তিনিই বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, জীবনদাতা, মরণদাতা, বিধানদাতা। তারই রয়েছে নিরঙ্কুশ সার্বভৌমত্ব। তার এই সার্বভৌমত্বের মূলে যে বা যারাই আঁচর কাটার পায়তারা করেছে, তিনি তাদের সমূলে ধ্বংস করে দিয়েছেন। কালের খাতায় ইতিহাসের পাতায় সে সব কাহিনী প্রভাত সূর্যের মতো জ্বল জ্বল করে জ্বলছে। তাইতো বর্তমান বিশ্বের পরাশক্তিধর ও সীমালঙ্ঘনকারী জাতি-গোষ্ঠির ওপর নেমে এসেছে অজানা গজব।

এই গজবের যাঁতাকলে নিস্পেষিত হয়ে কে কখন কোথায় হারিয়ে যাবে, তার ঠিকানা কেউ বলে দিতে পারে না। আর পারে না বলেই আমরা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, আল্লাহপাক যখন কোনো বান্দাহ, শ্রেণী, জাতি ও ভ‚মÐলকে ধ্বংস করতে চান, তখন তাদের তিনটি কাজে এমনভাবে লিপ্ত করে দেন, যা থেকে তারা বেরিয়ে আসতে পারে না।

যথা : (ক) তাদের ইলম, জ্ঞান দান করেন। কিন্তু তারা এই জ্ঞানের যথাযথ সদ্ব্যবহার করে না। ফলে, তাদের নেক আমল করার তাওফিক লাভের সুযোগ দেয়া হয় না। (খ) তাদের সালেহীন বা সৎলোকের সাহচর্য দান করেন। কিন্তু তারা তাদের মর্যাদা ও সম্মানের প্রতি মোটেও দৃষ্টিপাত করে না। ফলে, তাদের অন্তরসমূহ তমসাচ্ছন্ন করে দেয়া হয় এবং এই অন্ধকারের ঘূর্ণিপাকে তারা নিঃশেষ হয়ে যায়। (গ) তাদের ভালো কাজের অবকাশ দান করেন। কিন্তু তারা নিজেদের স্বার্থ চিন্তায় এতই বিভোর হয়ে পড়ে যে, তাদের মাঝে সৃষ্টির সেবা করার খেয়াল অবশিষ্ট থাকে না। যার কারণে নিজেদের উৎসমূল ক্রমান্বয়ে শুকিয়ে যেতে থাকে এবং এক সময় ধরাশায়ী হয়ে যায়।



 

Show all comments
  • Md Mamun ৩ এপ্রিল, ২০২০, ১:৪৯ এএম says : 2
    অবশ্যই এতে কোনো প্রকার সন্দেহ আছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Jobayer ৩ এপ্রিল, ২০২০, ১:৪৯ এএম says : 1
    yes
    Total Reply(0) Reply
  • Jalal Onik ৩ এপ্রিল, ২০২০, ১:৪৯ এএম says : 1
    আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার
    Total Reply(0) Reply
  • Azharul Sajib ৩ এপ্রিল, ২০২০, ১:৪৯ এএম says : 1
    আল্লাহ মহান
    Total Reply(0) Reply
  • A.N. Touhed Bonny ৩ এপ্রিল, ২০২০, ১:৫০ এএম says : 1
    আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন। নিশ্চয় আপনি ব্যতীত কোন রক্ষাকর্তা নাই। আমিন।
    Total Reply(0) Reply
  • Balal Bhuiyan ৩ এপ্রিল, ২০২০, ১:৫০ এএম says : 1
    সবাই নামাজ পড়ে দোয়া করেন আল্লাহ যেন দেশ বিদেশে সকল ভাইবোনকে সুস্থ ও ভালো রাখে সব সনয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Muhammad Ibrahim ৩ এপ্রিল, ২০২০, ১:৫০ এএম says : 1
    যারা শুধু বিজ্ঞান দিয়ে বিশ্বজয়ের স্লোগান দেয়, তারা আজ কোথায়? কোথায় তাদের বিজ্ঞান?
    Total Reply(0) Reply
  • Sultana Nahida Mortoza ৩ এপ্রিল, ২০২০, ১:৫১ এএম says : 1
    হে আল্লাহ!আমরা তোমার নিকট এ ভাইরাসের ভালো দিক, এতে যে কল্যাণ রয়েছে তা এবং যে উদ্দেশ্যে তা নিদের্শপ্রাপ্ত হয়ে এসেছে তার উত্তম দিকটি প্রার্থনা করছি। এবং তোমার নিকট এর খারাপ দিক হতে,এতে যে অকল্যাণ রয়েছে তা হতে এবং এটা যে উদ্দেশ্যে আদেশপ্রাপ্ত হয়ে এসেছে তার মন্দ দিক হতে আশ্রয় চাই।
    Total Reply(0) Reply
  • Sabina Yesmin ৩ এপ্রিল, ২০২০, ১:৫১ এএম says : 1
    আল্লাহ সবাইকে দয়া করো।
    Total Reply(0) Reply
  • নীভৃতচারী সিরাজ ৩ এপ্রিল, ২০২০, ১:৫২ এএম says : 1
    আল্লাহ ছাড়া আর কে আছে যে আমাদের হেফাজত করবে!! আল্লাহ আপনি আমাদের হেফাজত করুন
    Total Reply(0) Reply
  • মহান আল্লাহর ছোট্ট গোলাম ৩ এপ্রিল, ২০২০, ৭:৪৩ এএম says : 0
    অবশ্যই কুরআন সুন্নায় কোন সন্দেহ নেই।তবে তরজমা/উপস্হাপনা/বোঝার ক্ষেত্রে কারও ভুল হলে অন্যান্য বিজ্ঞ হক্কানী আলেম /মুফতী সাহেবদের নিকট জিজ্ঞাসা করতে হবে।আজে বাজে মন্তব্য করে নিজের ঈমান ও আখিরাত ধ্বংশ করা যাবেনা। মহান আল্লহ আমাদেরকে সবদিক থেকে সার্বিকভাবে হেফাছত করুন।আ-মী-ন।
    Total Reply(0) Reply
  • Sahih ৩ এপ্রিল, ২০২০, ৯:০৬ এএম says : 0
    আল্লাহর রূপ রঙ হাত পা কথাবার্তা আমরা আল্লাহর রং গ্রহণ করেছি। আল্লাহর রং এর চাইতে উত্তম রং আর কার হতে পারে?আমরা তাঁরই এবাদত করি। কুরআন ২ঃ১৩৮ যখন সে তার কাছে পৌছল, তখন পবিত্র ভূমিতে অবস্থিত উপত্যকার ডান প্রান্তের বৃক্ষ থেকে তাকে আওয়াজ দেয়া হল, হে মূসা! আমি আল্লাহ, বিশ্ব পালনকর্তা। কুরআন ২৮ঃ৩০ অতঃপর যখন তিনি আগুনের কাছে আসলেন তখন আওয়াজ হল ধন্য তিনি, যিনি আগুনের স্থানে আছেন এবং যারা আগুনের আশেপাশে আছেন। বিশ্ব জাহানের পালনকর্তা আল্লাহ পবিত্র ও মহিমান্বিত। কুরআন ২৭ঃ৮ আল্লাহ তার কথা শুনেছেন। আল্লাহ আপনাদের উভয়ের কথাবার্তা শুনেন। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু শুনেন, সবকিছু দেখেন। কুরআন ৫৮ঃ১ আর আল্লাহ সব কিছু শোনেন ও দেখেন। কুরআন ৪ঃ১৩৪ আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপর রয়েছে। কুরআন ৪৮ঃ১০ আর ইহুদীরা বলেঃ আল্লাহর হাত বন্ধ হয়ে গেছে। তাদেরই হাত বন্ধ হোক। একথা বলার জন্যে তাদের প্রতি অভিসম্পাত। বরং তাঁর উভয় হস্ত উম্মুক্ত। কুরআন ৫ঃ৬৪
    Total Reply(0) Reply
  • Mufti Sadi ৩ এপ্রিল, ২০২০, ১০:০১ এএম says : 0
    মহান আল্লাহর মতো কিছু নেই। সূরা শূরা,১১নং আয়াত। মহান আল্লাহর সমকক্ষ কিছু নেই। তাই কোন কিছুর সাথে মহান আল্লাহকে তুলনা করা যাবে না। মহান আল্লাহ কার মতো? মহান আল্লাহ মহান আল্লাহর মতো। সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করলে স্রষ্টার পরিচয় পাওয়া যায়। আমরা পরিপূর্ণভাবে মহান আল্লাহর যাত (স্বত্ত্বা), সিফাত (গুণ) কুদরত ও হুকুম-আহকাম এর উপর ঈমান আনলাম। হে!মহান আল্লাহ আপনি কবুল করুন।আ-মী-ন।
    Total Reply(0) Reply
  • শেখ সা'দী ৩ এপ্রিল, ২০২০, ১০:০৯ এএম says : 0
    ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ এবং আহকামে যিন্দেগী পড়ুন। লেখক:আল্লামা হাফেয হেমায়েত উদ্দীন দা.বা.
    Total Reply(0) Reply
  • Usama Usama ৩ এপ্রিল, ২০২০, ১০:৫৩ এএম says : 0
    আললাহ আমাদের মাফ করুণ
    Total Reply(0) Reply
  • jack ali ৩ এপ্রিল, ২০২০, ১২:৩৭ পিএম says : 0
    There are so called 59 muslim country around the world but they never rule the Country By the Law of Allah.. Allah ordered muslim to rule the whole world by the Law of Allah so there will no hunger/no war. People will live in security with human dignity... But we become the enemy of Allah as such nature is taking revenge against us. Allah is just He loves us more than our Mother but we insult Allah by not obeying Him.
    Total Reply(0) Reply
  • এই দুর্যোগ মুহুর্তে আল্লাহ পাকের উপর ভরসা ও জাতিকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমন থেকে সচেতন করা ব্যতিরেকে অন্য কোন বিকল্প নেই।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন