বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
আপনি গাড়িতে, ট্রেনে, বাসে, রাস্তাঘাটে ময়লা, কাগজ, খোসা বা প্যাকেট যেখানে সেখানে ফেলে না দিয়ে নির্দিষ্ট বা উপযুক্ত জায়গায় নিয়ে ফেললেন। এতে কি আপনার কোনো সওয়াব হবে? এ ধরনের প্রশ্ন অনেকেরই মনে জাগে।
জবাব হলো, শুধু সওয়াব নয়। এটি বা এ ধরনের আরও অনেক কাজই ঈমানের শাখা। ঈমানের দাবি। ইসলামের মূল প্রেরণা। এসবও ইবাদত। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, যে অণু পরিমাণ ভালো কাজ করবে তা সে বিচারের দিন দেখতে পাবে আর যে ব্যক্তি অণু পরিমাণ খারাপ কাজ করবে তাও সে তখন দেখতে পাবে। নবী করিম সা. বলেছেন, ঈমানের ৭৭টি শাখা রয়েছে। যার প্রথমটি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ ও মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সাক্ষ্য দেয়া। আর শেষটি হচ্ছে মানুষের চলাচলের পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা। (আল হাদীস)। হাদীস ব্যাখ্যাদাতাগণের মতে ৭৭ সংখ্যাটিকে নবী করিম সা. নির্দিষ্ট অর্থের চেয়ে অসংখ্য বা অধিক বোঝানোর জন্যই ব্যবহার করেছেন। যা আরবি ভাষারীতিতে পাওয়া যায়। ঈমানের যে ৭৭ বা ততধিক শাখা রয়েছে এসবের আলোকেই মুসলিম জাতির জীবন গড়ে তোলা কর্তব্য।
শুধু নামাজ রোজার মধ্যেই ইসলামকে সীমিত করে ফেলা ঈমানের দাবি নয়। ঈমানের দাবি আরও অধিক কিছু। হাদীস শরীফে এসেছে, মহানবী সা. বলেন, মুসলমান সেই ব্যক্তি যার হাত ও মুখ থেকে সব মানুষ নিরাপদ থাকে। (আল হাদীস)। প্রকৃত মুসলমানের আচরণে বা তৎপরতায় শুধু মানুষ কেন জীব-জন্তু, গাছ-পালা, ফুল-পাখি, পরিবেশ ও আবহাওয়া পর্যন্ত বিনষ্ট বা বিব্রত হতে পারে না। ‘পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ’ -এটি হাদীসের বাণী।
মানুষের চলাচলের পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ যেমন ঈমানের শাখা, মানুষকে কোনোভাবে কষ্ট না দেয়া যখন ইসলামে বিশ্বাসী ব্যক্তির প্রধান দায়িত্ব তখন এর আওতায় দুনিয়ার কোন বিষয়টি না আসবে। যেখানে সেখানে থুথু ও ময়লা ফেলা। বায়ু, পানি, শব্দ ও পরিবেশ দূষণের মতো খারাপ কাজ করা। নিজের দেহ, পোষাক, বাড়ি, কর্মস্থল, পথঘাট, পরিপার্শ্ব, গ্রাম, শহর ও নগরীকে অপরিচ্ছন্ন করে রাখা। ইসলাম এসব পছন্দ করে না। এসব ঈমানের চেতনা বিরোধী কাজ।
ইসলামী জীবন বিধান একটি মহাসমুদ্র। বিশ্বের সব যুগের সব জায়গার সব পরিবেশের সব মানুষের সামগ্রিক জীবনের সকল জিজ্ঞাসার জবাব ইসলামে রয়েছে। ইসলামে ইবাদত শুধু দু’য়েকটি আনুষ্ঠানিক আচার-উপাসনায় সীমাবদ্ধ নয়। দেহ, মন, অর্থ ও সমাজ; ব্যক্তি, পরিবার, রাষ্ট্র ও পৃথিবী, যে ক্ষেত্রেই মানুষ কাজ করুক তার ইবাদত হতে থাকবে, সে সওয়াব পেতে থাকবে। এমন সুন্দর জীবন ব্যবস্থা আর হতে পারে না। এমন কি এর কাছাকাছি কোন বিকল্পের কথাও মানুষ ভাবতে পারে না।
আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেছেন, যে কোনো ঈমানদার নারী বা পুরুষ, ছোট বড় যে নেক আমলই করে ইহকাল ও পরকালে এর যোগ্য প্রতিদান তাকে আমি দান করব। প্রিয়নবী সা. একটি একটি করে প্রতিটি আমলের কথা ভাঙিয়ে বলে গেছেন। গাছ লাগানোর প্রতিদান বলেছেন, যতদিন গাছটি থাকবে, এর যত পাতা, ফুল, ফল মানুষ পশু-পাখিতে খাবে, যত মানুষ এর ছায়া পাবে সবকিছুর সওয়াব বৃক্ষরোপণকারীর আমলনামায় লেখা হতে থাকবে। কেউ যদি কোনো প্রাণীকে রক্ষা করে, সাহায্য করে, পানি বা খাবার দেয় সবকিছুর জন্য সে সওয়াব বা প্রতিদান পাবে।
হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, প্রতিটি জীবের সেবায়ই রয়েছে সওয়াব বা প্রতিদান। প্রিয়নবী সা. বলেছেন, তোমাদের পরিবারের পেছনে তোমার ব্যয়ও সওয়াবের কাজ। মানুষ তার স্ত্রীর মুখে যে খাদ্যটুকু তুলে দেয় তাও সাদাকার সমতুল্য। একজন মুসলমান যখন কোনো মানুষের সাথে হাসি মুখে কথা বলে সেটিও সাদাকাহ। সেটিও ইবাদত ও সওয়াবের কাজ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।