পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কম সময়ে সবচেয়ে বেশি পরীক্ষা, ১১৮টি পরীক্ষাগারের ব্যবস্থা, বাংলাদেশে একমাত্র আইইডিসিআর
কোনও শহর লকডাউন করা হয়নি, বন্ধ হয়নি পরিবহন ও আন্তর্জাতিক প্রবেশ ছিল উন্মুক্ত। এরপরও দক্ষিণ কোরিয়া যে শুধু করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে পেরেছে সফলভাবে তা নয়, দেশটিতে মোট আক্রান্ত ৯ হাজার ৩৩২ জনের মধ্যে ৪ হাজার ৫২৮ জন বা ৪৮ দশমিক ৫২ শতাংশকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তুলেছে। আর গতকাল পর্যন্ত দেশটিতে মৃতের সংখ্যা মাত্র ১৩৯ জন। আর তাই মহামারী করোনাভাইরাস ঠেকাতে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটিতে করোনায় আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুর হার অনেক কম। আর এর মূলে রয়েছে সবচেয়ে কম সময়ে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ এবং আগের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো। করোনা শনাক্তের সরঞ্জাম তৈরিতে চারটি কোম্পানিকে অনুমোদন দিয়েছে। সপ্তাহে দেশটিতে এক লাখ ৪০ হাজার নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব। বর্তমানে প্রতিদিন ২০ হাজার বা তারও বেশি করোনাভাইরাস পরীক্ষা করেছে। অথচ বাংলাদেশে একদিনে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ গত বুধবার ১২৬ টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। আর এ জন্য বিশ্বের কাছে দক্ষিণ কোরিয়া পরিণত হয়েছে রোলমডেলে। ব্র্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনা মোকাবিলার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় অন্যান্য দেশের তুলনায় সবচেয়ে অল্প সময়ের মধ্যে শনাক্ত করা হয় করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে। আর সে জন্য খুব অল্প সময়ের মধ্যে ওই ব্যক্তিকে আলাদা করে রাখা ও চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়। এর ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা কম থাকে। ইতোমধ্যে সরকারি ও বেসরকারিভাবে করোনাভাইরাস শনাক্তের জন্য ১১৮টি পরীক্ষাগারের ব্যবস্থা করা হয়েছে দেশটিতে। এর ফলে বিশ্বের যেকোনো দেশের তুলনায় কম সময়ে সবচেয়ে বেশি মানুষের করোনা পরীক্ষা হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। এমন প্রচেষ্টার ফলে জীবন বাঁচানো সম্ভব বলে মনে করছেন দেশটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
অথচ বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের একমাত্র মাধ্যম আইইডিসিআর। করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত সর্বমোট ১ হাজার ২৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় মাত্র ১০৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৮ জন করোনায় আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। ১১ জন সুস্থ হয়ে বাসায় পিরেছেন। মারা গেছেন ৫ জন। আক্রান্ত রোগী ও তাদের মৃত্যুর হার ১০ দশমিক ৪১ শতাশ। যদিও গতকালের তথ্য অনুযাযী, বর্তমানে জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান, শিশু হাসপাতাল ও চট্টগ্রামের ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল ইনফেকশাস ডিজিসে’ করোনা পরীক্ষা চালু করা হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডবিøউএইচও) তথ্যমতে, অন্যান্য দেশের তুলনায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় মৃত্যুর হার সবচেয়ে কম। যেখানে সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হার ৪ দশমিক ৫২ শতাংশ, সেখানে দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনায় মৃত্যুর হার মাত্র ১ দশমিক ৪৮ শতাংশ। দেশটিতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ১৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
মিয়ংজি হাসপাতালের সিইও ও কোরিয়ান হাসপাতাল অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ড. লি ওয়াং-জুন ভাইরাসের বিস্তার রোধে দক্ষিণ কোরিয়ার কৌশলের চারটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি তুলে ধরেন। প্রথম নীতি হলোÑ কোরিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের মাধ্যমে নতুন আক্রান্তের তথ্য হালনাগাদ করতে সম্পূর্ণ উন্মুক্ততা ও স্বচ্ছতা। মিডিয়াসহ স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের কাছে সব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। কোথায়, কখন এবং কীভাবে সংক্রমণ শনাক্ত এবং তা যাচাই করা হলো তা তুলে ধরা হয়েছে।
এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ায় পরীক্ষাগারগুলোতে বিভিন্ন যন্ত্র নিয়ে করোনা শনাক্তের প্রক্রিয়ায় রাত দিন ব্যস্ত থাকছেন কর্মীরা। এই প্রক্রিয়া হলো পলিমারেস চেইন রিঅ্যাকশন (পিসিআর)। পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে মাত্র পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা সময় লাগে।
ল্যাবরেটরি মেডিসিন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর গিয়ে কিয়ল কোউন এই প্রক্রিয়াটিকে ‘বালি বালি’ বলে সম্বোধন করেছেন। কোরিয়ায় ‘বালি’ শব্দটির অর্থ ‘দ্রæত’। প্রক্রিয়াটিকে ‘বালি’ বলার কারণ, দক্ষিণ কোরিয়া দ্রæত করোনা শনাক্তের জন্য দেশটির পরীক্ষাগারগুলোর সঙ্গে একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। তবে এমন প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে আগের মার্স ভাইরাসের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। এ ছাড়া যেকোনো ধরনের ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য বিশেষ একটি বিভাগও তৈরি করে রেখেছে দক্ষিণ কোরিয়ার রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র। এরই মধ্যে এই বিভাগের সব ধরনের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে। আর বাংলাদেশ দীর্ঘদিন থেকে প্রস্তুতির বিষয়ে মুখে বললেও বাস্তবে কোন পদক্ষেপই নেই।
প্রফেসর কোউন বলেন, দ্রæত সময়ের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করে আলাদা করে রাখার মাধ্যমে আমরা সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার কমাতে পারছি। এর ফলে দক্ষিণ কোরিয়া সারা বিশ্বের জন্য একটি রোলমডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনা শনাক্তের জন্য সরঞ্জামের স্বল্পতা নেই। সেখানে এসব সরঞ্জাম তৈরির জন্য চারটি কোম্পানিকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর ফলে সপ্তাহে দেশটিতে এক লাখ ৪০ হাজার নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব। দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. কিম ইওন-জা বলেন, আমাদের পক্ষে সব রোগীকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা ও চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়। যাদের অবস্থা গুরুতর নয়, তাদের বাসায় থেকে চিকিৎসা সহায়তা নেওয়া উচিত। ডা. কিম আরো বলেন, আমরা এ ধরনের ভাইরাস মোকাবিলায় নিজেদের কৌশল পরিবর্তন করেছি। ইতালির মতো অন্যান্য যেসব দেশে করোনাভাইরাস অনেক বেশি সংক্রমিত হয়েছে, তাদেরও উচিত কৌশল পরিবর্তন করা।
এদিকে বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডবিøউএইচও) বার বার টেষ্ট করার কথা বলছে কিন্তু আইইডিসিআর তা করছে না। বরং বার বার উদাহরণ হিসেবে তাদের কথা তুলে ধরছে। তাই আইইডিসিআর’র যেভাবে পরীক্ষা সেটা দিয়ে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন কোনভাবেই বোঝা যাবে না। চিকিৎসা নৃবিজ্ঞানী আতিক আহসান আইইডিসিআরকে ব্যর্থ উল্লেখ করে বলেন, আইইডিসিআর বোঝেনি কী হতে যাচ্ছে এবং এ জন্য কী করা দরকার। তিনি বলেন, পরীক্ষা ব্যবস্থা এখন ছড়িয়ে দিতে হবে। নয়তো সঠিক রোগী পাওয়া যাবে না। শুরু থেকেই যে সবার সাহায্য নেওয়া দরকার ছিল সেটা তারা হয় বুঝতে পারেনি, নয়তো বুঝতে চায়নি। আর প্রতিষ্ঠানটি সেটি এখনও বুঝতে পারছে কিনা, সেটাও আমি নিশ্চিত নই।
করোনার টেস্ট ঠিকমতো না করতে পারলে করোনা নিয়ে কারো কথা বলাই উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক ভিসি প্রফেসর ডা. নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, টেস্ট না করে তারা (আইইডিসিআর) কী করে বলে, রোগী সংখ্যার কথা? আইইডিসিআরে যেসব ফোন কল যায়, তার মধ্যে থেকে নমুনা শুনে বিশ্লেষণ করে টেস্ট করে, কিন্তু যারা কল করেন না তাদের কী করবে না?
তিনি বলেন, কোয়ারেন্টাইন অ্যাভয়েড করে যারা ছড়িয়ে পড়েছে তাদের নিয়ে কী করা হচ্ছে, সেটাও বুঝতে পারছি না। তাই কেবলমাত্র একটি প্রতিষ্ঠানের হাতে টেস্টের ব্যবস্থা না রেখে যারা বিদেশ থেকে এসেছে এবং তাদের সংস্পর্শে সাসপেক্টেড যারা রয়েছে, তাদের টেস্ট করতে হবে।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়া থেকে বৈশ্বিক মহামারিতে রূপ নেওয়া পর্যন্ত আইইডিসিআর একটানা মিথ্যাচার করে আসছে। কর্তৃত্ব ধরে রাখতে গিয়ে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে কোভিড-১৯-এর পরীক্ষা করার ব্যবস্থা থাকার পরও সেসব জায়গায় পিসিআর করতে দিচ্ছে না। এখন সবচেয়ে জরুরি কাজ টেস্টিং উল্লেখ করেন তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।